শোকের মাতম ‘দ্বিগুণ’ হয়ে কাঁপছে ঢাকা
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৫, ৩:১৭ অপরাহ্ণ১ হাজার ৩৩৩ বছর আগে এই দিনে ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে শহীদ হন। মুসলিম বিশ্বে এ দিনটি ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। আর শিয়া মুসলিমরা এই শোকে নিজের গায়ে ছুরি ও শেকল পেটা করে শোক প্রকাশ করেন।
সেই শোকের দিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানের পাশে আশুরার তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় ন্যাক্কারজন বোমা হামলা। এ ঘটনায় একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। তবে হোসনি দালানবাড়ার পক্ষ থেকে দাবি একজন নয়, নিহত হয়েছেন কয়েকজন।
এ ঘটনার পর ভেস্তে যায় প্রথম মিছিলটি। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় দ্বিতীয় মিছিল। হোসনি দালান থেকে শুরু করে বকশি বাজার- উন্মেষ দত্ত- হরনার রোড- লালবাগ- আজিমপুর- ধানমণ্ডি ২৭- রাইফেল স্কয়ার হয়ে ঝিগাতলা লেকে গিয়ে মিছিলটি শেষ হওয়া কথা আছে।
এই মিছিলেই যেন প্রকাশ পাচ্ছে দালানবাড়ার শোক। ইতিহাসের শোক আর সদ্য শোক মিলিয়ে তাজিয়ার শোক যেন দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ ধ্বনিতে রব উঠেছে রাজধানীর রাজপথ। হাজার হাজার নারীপুরুষ দলে দলে কালো পোশাক পরে মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। এ মিছিল দেখার জন্য রাস্তার দুপাশেই হাজার হাজার লোকজন ভিড় জমিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক অবস্থা আছেন।
মিছিল আয়োজকরা জানান, এবার মিছিলে সহস্রাধিক ‘আলাম’ (লাল নিশান) থাকবে। ঢাকার বিভিন্ন দিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে একত্র মিলিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হোসনি দালানের ৪০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম তাজিয়া মিছিলে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটল। তবে এমন ঘটনার পরও তাজিয়ার দ্বিতীয় মিছিলটি নির্ধারিত সময়ে বের হবে।
হোসনি দালান কমিটির সভাপতি ফিরোজ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমাদের দু’টি মিছিল বের হয়। প্রথমটা রাত ২টায়। সেটাতেই এ ঘটনা ঘটেছে। আরেকটা সকাল ১০টায় বের হয়। এবার সেটাকে সাড়ে ১০টায় করা হয়েছে। নিধারিত সময়েই তাজিয়া মিছিল বের হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যের ৪০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো। ঘটনায় আমার স্তব্ধ, শোকাহত, বিস্মিত।’
ঘটনাস্থল আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছিল। সকাল ৯টার পর হোসনি দালানের মূল ফটক খুলে দেয়া হয়।
ইতোমধ্যে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ শেষ করেছে। ডিএমপির আইটি বিভাগের কর্মকর্তারাও আছেন।
আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে জানা গেছে, ঘটনাস্থল পুরোটাই সিসি টিভির আওতায় ছিল। ঘটনাটাস্থলেও আলোক স্বল্পতা ছিল না। তাই তারা আশা করছেন, ঘটনায় জড়িতদের শিগগিরই সনাক্ত করা যাবে।
তিনি আরো জানান, ঘটনাস্থলে ৫টি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৩টা বিস্ফোরিত হয়েছে। অন্য দুটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। নিরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, বোমাগুলো একধরনের সার্কিট দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা। আর ঘটনাস্থলের পাশেই একটি কবরস্থান রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারীবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ঘটনায় নিহতের নাম সাজ্জাদ হোসেন সানজু। তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন। আহতদের ৭০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং ৩২ জনকে মিটফোর্ট হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেলে আসা ৭০ জনের মধ্যে নয় জনকে ভর্তি করানো হয়েছে আর বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে। মূলত তারা স্প্লিন্টারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
জানা গেছে, তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে জড়ো হয়েছিলেন। হঠাৎ করে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে বহু মানুষ রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার সময় উপস্থিত লোকজন জানান, তারা যখন দুলদুল ঘোড়ার পা ধুইয়ে দিচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করে একটি টিউবলাইট ভেঙে পড়ে। এরপরই চার থেকে পাঁচটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব, সোয়াত ও গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকতারাও উপস্থিত আছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘আমি জেলা প্রশাসকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎই এ ধরনের ঘটনা। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এর ধিক্কার জানাই।’
হামলার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এটা জঙ্গি হামলা কি না বলা যাবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এটা একটা পরিকল্পিত হামলা।’
বাংলামেইল
. . . . . . . . .