বাংলাদেশের ভিসানীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনা
সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:০৮ অপরাহ্ণসম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে পারে বা গণতন্ত্রকে ক্ষুন্ন করে এমনসব ব্যক্তিবর্গের ওপর ভিসা বিধি-নিষেধ আরোপ করা শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে আলোচনা দেখা গেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও। তবে মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বিচলিত নন বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং মন্ত্রীবর্গ ইতোমধ্যে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বিধি-নিষেধের সতর্ক করার প্রায় চার মাস পরে এই ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে।
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি গণতন্ত্রিক দেশ, আমরাও তাই। একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে, তারা অবশ্যই অন্যদের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। তবে এ নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না কারণ আমরা জানি কীভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হয়।’
ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার গণমাধ্যমকে বলেছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কারো নাম প্রকাশ করেনি। কারণ ভিসা রেকর্ডগুলো মার্কিন আইনে গোপনীয়।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি তৈরি পোশাক শিল্পের দুটি মূল গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউসহ পশ্চিমা শক্তিগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ভিসানীতি তাদের উদ্বেগের প্রতিফলন মাত্র। গত বছর, ওয়াশিংটন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-এর ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিল। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আয়োজিত হাই-প্রোফাইল সামিট ফর ডেমোক্রেসির দুই সংস্করণেও ঢাকাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির আল-জাজিরাকে বলেছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতেই ভিসা রোধ করা হয়েছে। আসলে যারা প্রকৃতপক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ মার্কিন সরকার অবশ্যই এই বিধি-নিষেধের আরোপের আগে যথাযথ ভিত্তি কাজ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশ-আমেরিকান ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক শাফকাত রাব্বি আল জাজিরাকে বলেছেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন সরকারের কাছ থেকে আসা হাই-ভোল্টেজ ব্যস্ততা এবং যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এটা নিশ্চিত যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার চেষ্টা না করে অন্তত নামমাত্র একটি সংকল্প নিয়েছে।
তার মতে, বাংলাদেশে নির্বাচন অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র রক্ষায় নামমাত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। তারা এখানে খুব বেশি খরচ করছে না। সহজ এবং ঝামেলাহীন পন্থা হিসেবে শুধু ভিসা নিষেধই আরোপ করেছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য যে তেমন আক্রমণাত্মক নয় তা স্পষ্ট। এরপরেও গণতন্ত্রের অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে হয়তো তারা বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং বিচার বিভাগের ওপরও বিধি-নিষেধ দিতে পারে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপটি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন-এর ২৪ মের ঘোষণার ফলোয়াপ এবং বাস্তবায়ন। তিনি বিবৃতিতে বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে ৯-১০ সেপ্টেম্বর জি২০ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সম্মেলনে বাংলাদেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ওই সফরে বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে এক নৈশভোজের ফাঁকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সাক্ষাৎ করেন।
হিন্দুর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত দুই বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ বজায় রেখেছে, তাকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে শুক্রবারের ঘোষণাটি অনেক বেশি বিস্তৃত, কারণ এটি আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর প্রয়োগ করা হবে।
জাতীয়/আবির