ডাকসু নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১:৩৯ অপরাহ্ণঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দিনে সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গণনার সময় ভোটকেন্দ্রেও থাকবেন সেনাসদস্যরা।
চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সাতটি প্রবেশপথে সেনাসদস্যরা অবস্থান করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো কর্ডন করে রাখবে সেনারা, যাতে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে না পারে বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ভোটের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকেই হলগুলোতে কোনো বহিরাগত থাকতে পারবে না।
এদিকে আজ থেকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে এবং প্রার্থীদের নির্ধারিত সময়সূচি মেনে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে।
কমিশন আরও সতর্ক করেছেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় যদি কোনো প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ, পারিবারিক বা ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে কাউকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন, তবে প্রার্থিতা বাতিলসহ ছাত্রত্বও রদ করা হতে পারে।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হবে। এদিকে আজ থেকে ডাকসু নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রচারের সুযোগ থাকবে। তবে ছাত্রীদের হলগুলোতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সুযোগ থাকবে। প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে মানতে হবে কড়া আচরণবিধি।
এদিকে গতকাল সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২১ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। যাদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রদলের। এ বিষয়ে জানান, ঘোষিত প্যানেলে ঠাঁই না হওয়ায়, দলীয় সিদ্ধান্তেই সরে দাঁড়াচ্ছেন তারা।
এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের ওপর আপিল করেছিলেন ৩৪ জন প্রার্থী। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের সবার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত রোববার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আপিল ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল কমিটি একটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে জুলিয়াস সিজার তালুকদার ও বায়েজিদ বোস্তামী নামের দুই শিক্ষার্থীকে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পরে সোমবার নিষিদ্ধ সংগঠনে জড়িত ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট থাকার প্রমাণ মেলায় তাদের প্রার্থিতা ও ভোটার বাতিল করা হয়।
এদিকে জুলিয়াস সিজার প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর এক চিঠিতে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ন্যায়বিচারের অনুরোধ জানিয়েছেন।
ছাত্র সংসদের নির্বাচন সামনে রেখে নিরাপদ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্যের সভাকক্ষে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খান। এছাড়াও প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, রিটার্নিং কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, সিটি এসবির ডিআইজি মীর আশরাফ আলী, ডিএমপির রমনা জোনের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম ও শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মুনসুর বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা নেওয়া হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আচরণবিধি
এদিকে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রার্থীরা কেবল সাদাকালো পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ছাপাতে ও বিলি করতে পারবেন। সেখানে প্রার্থীর নিজস্ব সাদাকালো ছবি ছাড়া অন্য কোনো ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না।
ক্যাম্পাস ও হল এলাকার স্থাপনা, দেয়াল, যানবাহন, বেড়া, গাছপালা বা বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পোস্টার লাগানো যাবে না। দেয়াল বা যানবাহনে কালি, চুন বা রাসায়নিক ব্যবহার করে কোনো লিখন বা চিত্রাঙ্কন করা নিষিদ্ধ।
ফটক, তোরণ, ঘের নির্মাণ কিংবা ক্যাম্প ও আলোকসজ্জা করা যাবে না। তবে অস্থায়ী প্যান্ডেল, শামিয়ানা ও মঞ্চ স্থাপন করা যাবে। কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়, শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ ও পরীক্ষার হলে প্রচারণা চালানো যাবে না।
ভোটারদের কোনো ধরনের উপঢৌকন বা বকশিস দেওয়া যাবে না। প্রচারে আক্রমণাত্মক বক্তব্য, গুজব ছড়ানো কিংবা উসকানিমূলক মন্তব্যও নিষিদ্ধ। সভা-সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে হলে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে। প্রচারে বা ভোটের দিন কোনো খাবার বা পানীয় পরিবেশন করা যাবে না।
প্রতিটি হলে একটি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রজেকশন মিটিং করার সুযোগ থাকবে। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আইনসিদ্ধ ইতিবাচক পদ্ধতিতে প্রচার চালানো যাবে। তবে ভোটার ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।
আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা আইন অনুযায়ী দণ্ডের বিধান রয়েছে।
শিক্ষাঙ্গন/আবির