মধ্যরাতে কাশিমপুর জেলে ঢুকল কালো কাচের এসইউভি
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০১৫, ৯:৩০ পূর্বাহ্ণকাকপক্ষীও টের পায়নি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও জেনেছেন অনুপ চেটিয়া ভারতে চলে যাওয়ার পরে।
ঢাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্তা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে কালো কাচে ঢাকা টয়োটার একটি এসইউভি গাড়ি ঢোকে কাশিমপুর কারাগারে। মিনিট কুড়ি পরে বেরিয়ে এসে সেটি দ্রুত গতিতে পৌঁছে যায় ভারতীয় হাইকমিশনের দপ্তরে।
সেখানে নামেন অনুপ চেটিয়া ও আরো দুই উলফা নেতা— যারা এতদিন তার সঙ্গেই কারাগারে ছিলেন। গাড়িটি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। তিন উলফা নেতাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে কথা বলেন হাইকমিশনের এক পদাধিকারী।
আবার তিনজনকে তোলা হয় এসইউভি-তে। রাত সাড়ে তিনটের সময়ে সেটি দৌড় দেয় বেনাপোল সীমান্তের দিকে। আড়িচাঘাটে তৈরিই ছিল বিশেষ ফেরি। পদ্মা পেরিয়ে মাগুরা, যশোর হয়ে বুধবার সকাল সাড়ে নটায় বেনাপোল সীমান্ত পেরোয় সেই গাড়ি।
সেখানে অপেক্ষা করছিল সিবিআইয়ের একটি বিশেষ দল। অনুপদের নিজেদের গাড়িতে তুলে সিবিআই অফিসারেরা পৌঁছে যান দমদম বিমানবন্দরে। সেখান থেকে বিশেষ বিমানে সোজা দিল্লি। বেলা আড়াইটে নাগাদ দিল্লি পৌঁছান অনুপ।
গোয়েন্দাদের অন্য একটি সূত্র অবশ্য বলছে, বেনাপোল নয়, সিলেটের ডাউকি দিয়ে ভারতে ফেরানো হয়েছে অনুপকে। তবে বেনাপোলেও বন্দোবস্ত ছিল। আসাম থেকে বিশেষ বিমানে অনুপকে দিল্লি নিয়ে গিয়েছে সিবিআই।
বাংলাদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে ঢাকায় প্রায়ই দেখা যেত রোগা পাতলা চেহারার এক তরুণকে। দু-একজন বামপন্থী ছাত্র নেতার সঙ্গে হাজির হতেন জাতীয় প্রেসক্লাবে।
তিনি যে আসাম থেকে আসছেন, আসামকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সেসব কথা আড্ডার ছলে অক্লেশে বলে যেতেন। ঢাকার সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, তাদের নানা বইপত্র দিতেন।
অনেকে তার কথা শুনে অবাক হতেন, কেউ বা বাতুলতা বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু ঠান্ডা মাথার ছেলেটি তার সংগঠন ‘উলফা’-র (তিনি এই নামই বলতেন) অগাধ ক্ষমতার কথা বলেই যেতেন। তিনিই অনুপ চেটিয়া।
বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৯৭-এ তাকে গ্রেপ্তার করার পর থেকে বাংলাদেশের নানা জেল তার স্থায়ী বাসস্থান হয়ে ওঠে। ভারত সরকার ১৮ বছর ধরে বারবার ঢাকার কাছে দাবি করে এসেছে— উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করা হোক।
আসামে তার বিরুদ্ধে খুন, গণহত্যা, চাঁদাবাজির অজস্র মামলা রয়েছে। ভারতের আদালতে সেগুলির বিচার হোক। কিন্তু সাত বছর কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও বাংলাদেশ সরকার তাকে নিরাপদ হেফাজতে ঢাকার কাশিমপুর জেলেই রেখে দেয়।
আদালত অনেকবার জানতে চেয়েছে, তিনি কি দেশে ফিরতে চান? অনুপের উত্তর ছিল— না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মে মাসে ঢাকায় এসে চেটিয়াকে ফেরানোর বিষয়ে শেখ হাসিনাকে রাজি করিয়ে যান। এর আগে দিল্লির সুনির্দিষ্ট খবরের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে উলফার সব ঘাঁটি উচ্ছেদ করেছে হাসিনা সরকার।
অরবিন্দ রাজখোয়াসহ আলফার অন্তত সাতজন বড় নেতাকে আটক করে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। ভারতে গিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন উলফা নেতারা।
পরেশ বড়ুয়া আলাদা দল গড়েছেন। এখন অনুপও আলোচনাপন্থী। মাস তিনেক আগে লিখিতভাবেই বাংলাদেশ সরকারকে জানান, তিনি দেশে ফিরতেই চান। অবশেষে ফিরলেন চেটিয়া।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
. . . . . . . . .