সাইফুর রহমান ছিলেন রত্নাগর্ভা সিলেটের শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান
মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭:২৭ অপরাহ্ণরত্নাগর্ভা সিলেটে এই শতাব্দির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান এম সাইফুর রহমান। ২০০৯ সালে ৫ অক্টোবর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সিলেটবাসী তার এই কৃতি সন্তানকে হারিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি তার এক গুণমুগ্ধ-ভক্ত-অনুরক্ত। সিলেটের উন্নয়নে তার অবদান এমনকি তার চরম বিরুদ্ধবাদীদের মুখেও প্রশংসা স্ততিতেই প্রকাশিত হয়। অবশ্য তার সমালোচনাকারীদের অনেকে এখন তার আমলের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ‘কসমেটিক’ উন্নয়ন হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। যদিও সেই কসমেটিক করা সিলেটের অবয়বে সামান্য ‘পাফ’ বুলানোর পদক্ষেপও এখন আর চোখে পড়ছেনা।
এম. সাইফুর রহমানকে অনেকেই ‘শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সিলেট প্রেমিক’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। এম. সাইফুর রহমানকে মূল্যায়ন করবে হয়তো অনাগত দিনের ইতিহাস। সেই মূল্যায়ন তাত্ত্বিকদের জন্য থাকুক। ব্যক্তিগতভাবে আমি অতি অল্প সময় তার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলাম। সে সবের কিছু টুকরো স্মৃতি ভাগাভাগি করে নিতেই এই লেখার অবতারণা।
এম. সাইফুর রহমান অর্থ অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী থাকাকালে আমি সব সময় তার বক্তৃতা উপভোগ করতাম। একজন সংবাদকর্মী হিসেবে তার সভা সমাবেশে উপস্থিত থাকতাম সিলেটী টানে তার বক্তব্য উপভোগের জন্য। তিনি প্রায়ই কিছু শব্দ উচ্চারণ করতেন যেগুলো বাংলা ভাষার শুদ্ধ উচ্চারণে অপ্রচলিত ছিল। তারপরও কেন জানি তার মুখে শব্দগুলো মানিয়ে যেত। যেমন, তিনি বলতেন ‘আমাদিগকে বুঝতে হবে তিনারা যা বলছেন, তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। পঞ্চান্নকে তিনি বলতেন ‘পচপান্ন’। তার বক্তৃতায় জ্ঞাত সারে অথবা অজ্ঞাতে ঢুকে পড়তো সিলেটী অনেক শব্দ।
মনে পড়ে, রাজধানী ঢাকার শেরাটন হোটেলে একটি অনুষ্ঠানের কথা। সেদিন ঐ হোটেলে বসেছিল বৃটিশ বাংলাদেশ ফিউশন ফুড ফ্যাস্টিভেলের আসর। ঐ দিনই ঢাকায় সফর করছিলেন বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স নেতৃবৃন্দ। ফুড ফ্যাস্টিভেলের পাশেই একটি হলরুমে চলছিল চেম্বার নেতৃবৃন্দের মতবিনিময়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র পরিচালকসহ বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ী ‘হাস্তি’রা। ঐ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। সিলেটের উন্নয়ন ও সিলেটের সাথে বৃটেনের বাণিজ্য উন্নয়নে তার সারগর্ভ বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন এম. সাইফুর রহমান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে এম. সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে শীত মওসুমে যে পরিমাণ টমোটো উৎপাদন হয় তা দিয়ে একটি টমোটো কেচাপ ফ্যাক্টরী অনায়াসে চলতে পারে। তিনি বলেন, আমি আমার গ্রামের বাড়িতে দেখেছি, শীতকালে ১০ টাকায় এক ‘খলুই’ টমেটো দিয়ে দেয়। ১০ টাকার এক খলুই টমোটো দিয়ে এক হাজার টাকার টমোটো কেচাপ বানানো সম্ভব।
সভায় উপস্থিত অসিলেটী ব্যবসায়ী নেতারা ‘খলুই’ শব্দটির সাথে পরিচিত ছিলেন না। তারা একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন। সাইফুর রহমান বুঝতে পারলেন অতিথিরা তার কথাটি বুঝতে পারছেন না। তিনি বললেন, আপনার খলুই চেনে না ? কিভাবে চেনাই আপনাদের ? সামনে বসা ছিলেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি জুন্নুন মাহমুদ খান। সাইফুর রহমান বললেন, খলুইকে শুদ্ধ বাংলায় কি বলে জুন্নুন ? জুন্নুন মাহমুদ বললেন, স্যার বাঁশের ঝুড়ি। সাইফুর রহমান বললেন, হ্যা হ্যা বাঁশের ঝুড়ি। এইটা আমাদের সিলেট অঞ্চলের বিশেষভাবে তৈরী বাঁশের ঝুড়ি। আমাদের মা-চাচীরা বাঁেশর পাতলা বেত দিয়ে চমৎকার এই ঝুড়ি তৈরী করে থাকেন।
এই ছিলেন সাইফুর রহমান। সিলেটকে নিয়ে তারা ধারণা ও বিশ্বাস ছিল অনেক সুউচ্চ। একবার সংসদে তার একটি বক্তব্য সারা দেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা নিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, মঙ্গা কি জিনিষ, সেইটাই তো আমি বুঝি না। তার এই বক্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে লেখা হয়েছিল, মঙ্গা কি জিনিষ অর্থমন্ত্রী জানেন না।
সম্প্রতি আমি যুক্তরাজ্য সফরকালে সাপ্তাহিক পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক বেলাল ভাই জানালেন ঐ মন্তব্যের কিছুদিন পর এম. সাইফুর রহমান যুক্তরাজ্য সফরকালে বেলাল ভাই তার সাক্ষাৎকার নেন। এ সময় তিনি তার ঐ মন্তব্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে এম. সাইফুর রহমান বলেন, শোন তুমিও সিলেটী আমিও সিলেটী। তোমাকে বলি, তুমি এটি পত্রিকায় লিখনা। আমি জেনে বুঝেই এই বক্তব্য দিয়েছি। তুমি কি সিলেটে কোনদিন মঙ্গা হতে দেখেছো ? আমিও দেখিনি। সিলেটীরা মঙ্গা বা অভাবের সাথে পরিচিত নয়। সিলেটের একজন কৃষক যে ধান ফলায়, তা দিয়ে ছোট খাটো বর্গাচাষীরও পরবর্তী ২ বছর চলে যায়। এ কারণে সিলেটে কোন সময় খাদ্যাভাব হয়না। আমাদের মুরুবীদের মুখে শুনতাম কাত্তি মাইয়া মাঙ্গায় ফকির বাড়ি যায় (কার্তিক মাসের মঙ্গায় ভিক্ষুক বেড়ে যায়)। দেশের অন্যান্য জেলা থেকে দরিদ্র লোকজন সিলেটে ভীড় জমায় কার্ত্তিক মাসে। বেঙ্গলীরা মঙ্গা-ফঙ্গা জানে, আমরা সিলেটীরা জানিনা। আমি সংসদে দেয়া বক্তব্যে ‘বেঙ্গলীদের’ এভাবেই এক হাত নিয়েছি।
এই হলেন সাইফুর রহমান। সিলেটের প্রতি তার সু উচ্চ ধারণার প্রকাশ ছিল তার এই বক্তব্য। তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী থাকাকালে সিলেটে সুবিশাল উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে, তার আশে পাশে সব সময় ঘিরে থাকতেন মধু লোভী স্তাবকরা। সে কারণে আমাদের মত চুনোপুটিতে তার কাছে যাবার সুযোগ ছিল না। সিলেট মহানগরীর ৩টি ওয়ার্ড দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এম. সাইফুর রহমানের আমলে এই ৩ ওয়ার্ডবাসী খুব একটা উন্নয়ন পায়নি। একদিন পত্রিকা মাধ্যমে জানতে পারি, সিলেটে একটি মডেল স্কুল হবে। দক্ষিণ সুরমায় এই স্কুলটি যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্য এম. সাইফুর রহমানের নজরে আনার চেষ্টা করি। এলাকার কয়েক জন শিক্ষানুরাগী এক সকালে সিলেট সার্কিট হাউজে দেখা করেন তার সাথে। সেখানে আমাদের মুরুব্বীয়ানরা কথা বলেন তার সাথে। তারা বলেন, দক্ষিণ সুরমায় নতুন উপজেলা হয়েছে। নতুন নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠছে। বাড়ছে জনবসতি। এছাড়া, সিলেট নগরীর প্রবেশ দ্বার হওয়ায় দক্ষিণ সুরমায় কোন স্থানে স্কুলটি করা হলে পুরো সিলেট বিভাগের মানুষ উপকৃত হবে। শুধু সিলেট নয়, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকেও শিক্ষার্থীরা পড়তে আসবে এখানে। তারা বর্তমান বাইপাস সড়ক সংলগ্ন আন্দারুটিলায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত এক যুবদল নেতা সাইফুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার, দক্ষিণ সুরমায় এটি হলে শফি চৌধুরী এমপি’র এলাকায় চলে যায়। এ কথা শোনার পর এম. সাইফুর রহমান বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার বাইরে স্কুল করা সম্ভব হবেনা। ফলে, দক্ষিণ সুরমায় মডেল স্কুল স্থাপনের প্রচেষ্টা ভন্ডুল হয়ে যায়। পরবর্তীতে শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে শাহী ঈদগার জনবিরল স্থানে স্কুলটি চালু করা হয় এবং বর্তমানে একটি শিক্ষার্থী অপ্রতূলতার কারণে প্রায় ধুকে ধুকে চলছে বলেই জানি।
যাই হোক, ক্ষমতাসীন সাইফুর রহমানের এ আচরণ আমাকে মর্মাহত করেছিল। কিন্তু এই বিষয়টি আমার মনে খুব একটা রেখাপাত করেনি। বরং, তার সুবিশাল উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে আমি তাকে আরো বেশী পছন্দ করতে থাকি। পরবর্তীতে বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীসহ আরো কয়েক জন স্থানীয় নেতার সাথে বিরোধের জের ধরে এক পর্যায়ে অপমানে অভিমানে এম. সাইফুর রহমান রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে চলে দারুণ লেখালেখি। আমি তখন দৈনিক আমার দেশ-এ কর্মরত। আমি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলাম, ‘সিলেটের উন্নয়নে তার প্রয়োজন, সিলেটবাসী এম. সাইফুর রহমানকে হারাতে চায়না’। ছবিসহ সুন্দর ট্রিটমেন্ট পায় রিপোর্টটি। পরবর্তীতে ‘আমরা সিলেটবাসী’ সংগঠনের ব্যানারে তাকে সিলেটে বিশাল সংবর্ধনাও দেয়া হয়। সে দিন আমাকে পেয়ে ঐ রিপোর্টের জন্য এম. সাইফুর রহমান ফোন করে আমাকে ধন্যবাদ জানান।
তার সাথে আমার ঘনিষ্টতা বাড়ে আরো পরে। ওয়ান ইলেভেনের পর তার একান্ত আস্থাভাজন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী তখন কারাগারে। সিলেটের বিএনপি নেতাদের অনেকে তাকে ত্যাগ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মরহুম মান্নান ভূইয়াসহ আরো অনেকের সাথে বিএনপি খন্ডিত করার অপচেষ্টার অভিযোগ আসে সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ সময় পারিবারিকভাবেও দারুণ বিপর্যয়ের শিকার হন এম. সাইফুর রহমান। ফলে, রাজনীতিতে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী দু’বছরে তার সাথে সিলেটের যোগাযোগও কমে যায়। এ পরিস্থিতিতে সিলেটের বেশ কয়েক জন সিনিয়র সাংবাদিককে নিজ বাড়িতে দাওয়াত করে নিয়ে যান এম. সাইফুর রহমান। ব্যাপক আপ্যায়নও করেন সিলেটের সাংবাদিকদের। কথা বলেন, সিলেটের উন্নয়ন বিষয়ে- রাজনীতি বিষয়ে। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য দাওয়াত খেয়ে আসা ঐ সাংবাদিকদের কেউ একটি লাইনও লেখেননি তার সম্পর্কে। এ নিয়ে কিছুটা মর্মাহত ছিলেন এম. সাইফুর রহমান। বিষয়টি সে সময় তার সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী বিএনপি নেতা সালেহ আহমদ খসরুর সাথে শেয়ার করেন তিনি। খসরু ভাই একদিন আমাকে জানান এম. সাইফুর রহমানের মনোবেদনার কথা। অনুরোধ করেন, পারলে এম. সাইফুর রহমানের একটি বিস্তারিত ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য। সে অনুযায়ী এক সকালে ঢাকায় রওনা দেই। সকাল ৬টায় রওনা দিয়ে ১১টায় পৌছে যাই তার গুলশানের বাসা জালালাবাদ হাউসে। সেখানে আমার সাথে প্রায় আড়াই ঘন্টা একান্তে কথা বলেন, এম. সাইফুর রহমান। দুপুরে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে অফিসে ফিরে ঐ দিন-ই লিখি এম সাইফুর রহমানের সাথে আলাপচারিতার বৃত্তান্ত। দৈনিক সিলেটের ডাক-এ ছাপা হয়, ‘আমি অস্তগামী সুর্য নই, সিলেটবাসীর উন্নয়নে আমৃত্যু কাজ করতে চাই’ শীর্ষক দীর্ঘ ও হৃদয়গ্রাহী সাক্ষাৎকার। ব্যাপক পঠিত ঐ সাক্ষাৎকারটি আবারো এম. সাইফুর রহমানকে আবারো আলোচনায় নিয়ে আসে।
পরবর্তীতে নির্বাচন আসলে এম. সাইফুর রহমান সিলেট আসেন। বিএনপি নেতাদের অনেকেই তখন কারাগারে। নির্বাচনী কর্মকান্ড শুরু হলে এক মতবিনিময় সভায় তিনি হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য দেন। বলেন, সিলেট আমার প্রথম প্রেম, শেষ ভালবাসা। সারা জীবনে রাজনীতি করে দলে ও সরকারে যে অবস্থান সৃষ্টি করেছি, তার সুফলটুকু অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী হিসেবে সিলেটবাসীর জন্য তুলে দিতে পেরেছি। এটিই আমার সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। বৃদ্ধ বয়সে আমি, ভোট চাইবো না, দোয়া চাইবো সিলেটবাসীর। আমার নির্বাচনী প্রচারণা করবে আমার কার্যক্রম, রাজনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড। এম. সাইফুর রহমানের এই আবেগমাখা বক্তব্য দৈনিক সিলেটের ডাক-এ ছাপা হয়। এটি পড়ে আপ্লুত হন তিনি। আমাকে ডেকে নিয়ে ধন্যবাদ জানান। ঐ দিন সন্ধ্যায় তিনি এক জনসভায় পড়ে শোনান দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সেই রিপোর্ট বলেন, সিলেটের ডাক যেটি লিখেছে, সেটি-ই আমার মনের কথা।
মনে পড়ে, আমার বিয়ের দাওয়াত দেয়ার জন্য ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ রাজধানীতে তার বাসা জালালাবাদ হাউজে গিয়েছিলাম। তখন পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পারিবারিক বিপর্যয়ও অনেকটা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। আমি যাওয়ার খবর পেয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে কোন মতে দোতলা থেকে নেমে আসেন, দীর্ঘ সময় কথা বলেন আমার সাথে। অনেকটা উৎফুল্ল ছিলেন তিনি। বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়েছি শুনে অনেকক্ষণ রোমন্থন করলেন, তার দাম্পত্য জীবনের স্মৃতি। আমাকে উপদেশও দিলেন অনেক। এর মাঝে একটি কথা আমার মনে এখনো গেঁথে আছে। তিনি বলেছিলেন, মনে রাখবে ওয়াইফ উইল বি মাস্টার অব দ্যা হাউজ। তার উপর সংসারের ভার ছেড়ে দেবে। দেখবে, পার্সেনাল লাইফে সুখী হবে। বললেন, শরীরের এই অবস্থায় তোমার বিয়েতে হয়তো যেতে পারবোনা। কিন্তু আমার দোয়া থাকবে। তোমার বউয়ের জন্য একটি গিফ্ট কিনে দেবো সে অবস্থাও নাই, একাউন্ট ফ্রিজ করে রেখেছে। দেখি পকেটে টাকা আছে কি-না। একটি ছোট ব্যাগ খুলে দেখলেও কয়েকটি এক শ’ টাকার নোট আছে। বললেন, আচ্ছা যাও, তোমার বিয়ের গিফট আমি অবশ্যই পাঠাবো। মনে আছে, বৌভাতের দিন ঠিকই সেই গিফট পাঠিয়েছিলেন এম. সাইফুর রহমান।
মনে আছে, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে চ্যানেল-এস রিপোর্টার মঈন উদ্দিন মনজু ও আমি এম. সাইফুর রহমানের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক একটি ডকুমেন্টারী তৈরীর উদ্যোগ নেই। প্রায় আধ ঘন্টার এই ডকুমেন্টারীতে এম. সাইফুর রহমান খোলামেলাভাবে বলেন, সিলেটে তার উন্নয়ন প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। ঐ ডকুমেন্টারীতে বক্তব্যের একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে তিনি বলেন, আমার বক্তব্য একটাই, আমি জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে সিলেটবাসীর ভালবাসায় মরতে চাই। আবেগাপ্লুত কন্ঠে তিনি বলেন, ঐ যে গান আছে না, সুরমা নদীর তীরে আমার ঠিকানারে, বাবা শাহজলালের দেশ সিলেট ভূমি রে, বাবা শাহপরাণের দেশ, সিলেট ভূমি রে। এই গানটা আমার মনের মাঝে সব সময় বাজে। সিলেটবাসীর হৃদয়ে আমি বেঁচে থাকতে চাই।
এম. সাইফুর রহমানের কন্ঠে সেদিনের সেই আর্তি আজো আমার কানে বাজে। তার মত সিলেটপ্রেমী রাজনৈতিক নেতা আজ আমাদের বড় প্রয়োজন।