‘পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিষ্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে’
সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ণপ্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো খ্রিষ্টান দেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশে এয়ার বেজ বানানোর জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে কোন দেশ সে প্রস্তাব দিয়েছে সেটি তিনি উল্লেখ করেননি। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের শুরুতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারও হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না, ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না। আমার ক্ষমতায় আসতে অসুবিধা হবে না, যদি আমি বাংলাদেশে কারো এয়ার বেজ করতে দেই, ঘাঁটি করতে দেই। কোনো এক সাদা চামড়ারই প্রস্তাব। আমি একই জবাব দিয়েছি। আমি স্পষ্ট বলেছি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি, দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না, ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসব, না হলে আসব না। এই কথাগুলো বললাম, কারণ সবার জানা উচিত।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। এ জায়গাটার ওপর অনেকেরই নজর। এ জায়গায় কোনো বিতর্ক নেই, এ নিয়ে কারও কোনো দ্বন্দ্ব নাই। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না। এটাও আমার একটা অপরাধ। এখানে এয়ার বেজ করে কার ওপর হামলা করবে? আমাদের সব সময় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, আরও হবে। কিন্তু এটা পাত্তা দেই না, সোজা কথা। দেশের মানুষ আমাদের শক্তি, মানুষ যদি ঠিক থাকে আমরা আছি।’
দেশটা যে উন্নতি হচ্ছে, এটাও কারও পছন্দ না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, খোদ এক বড় দেশ বলে ফেলল, এত খাদ্য উৎপাদনের দরকার কী? আমাদের তো যথেষ্ট আছে, আমরা তো দিতে পারি। আমি বললাম হ্যাঁ ওই আশায় আমি বসে থাকব? আমরা বলেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছে নিজের মাটি মানুষ দিয়ে দেশ গড়ব। আমরা সেটাই করব। নিজেদের মানুষের খাবার এখানেই যতটুকু পারি উৎপাদন করে খাদ্য নিরাপত্তা দেব। আমরা দিয়েছিও সেটা। আমরা যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আছি, আমাদের আরো সুসংগঠিত হয়ে মানুষের কাছে গিয়ে, মানুষকে এ চেতনায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪৪ টেলিভিশনের মধ্যে প্রায় ৩৪টি চালু আছে। সবাই কথা বলে, টকশোতেও কথা বলে, সারা দিন সমালোচনা করে, এতগুলো সংবাদপত্র, এত কথা বলার পরে বলে কথা বলতে দেয়া হয় না। টেলিভিশনে সবাই যখন এইভাবে কথা বলে আমরা তো গলা টিপে ধরি না। কেউ বাধা দেয় না। যার যা খুশি বলে যাচ্ছে। তা সত্য-মিথ্যা যা হোক। ডিজিটাল বাংলাদেশে যে যার মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সমালোচনা, মিথ্যা, অপবাদ। আর ভবিষ্যতে সমস্যা যেটা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করা, সেটা করা হচ্ছে, নজরদারিতে আনার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শুধু আমরা উন্নত দেশগুলোও এ ব্যাপারে চিন্তিত। এআই মোকাবিলা করার প্রক্রিয়া খুঁজে দেখা হচ্ছে।’
মুদ্রাস্ফীতি এখন সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধু বাংলাদেশ না, আমেরিকার অর্থনৈতিক রিপোর্ট দেখলাম সেখানেও মুদ্রাস্ফীতি বিরাট সমস্যা। অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, আমাদেরও। কারণ করোনার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, আমদানি-রপ্তানি সব বন্ধ ছিল, তখন বাহির থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পারেনি, তাই টাকাটা ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে, তাই আমাদের রিজার্ভটা বেড়ে গিয়েছিল। তারপর যখন সবকিছু চালু হলো তখন খরচ। খরচ হবেই।’
তিনি বলেন, আপত্কালীন খাদ্য মজুত থাকলে রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কোনো বিষয় না। রিজার্ভ বলতে বলতে মানুষকে এত সচেতন করে দিয়েছি, সবাই রিজার্ভ নিয়ে কথা বলে, জিডিপি নিয়ে কথা বলে, এটা ভালো লক্ষণ। এখন মুদ্রাস্ফীতি কমাতে পারলে মানুষের স্বস্তি হতো। উৎপাদন যথেষ্ট হচ্ছে। কোনো অভাব নেই।
দেশের অর্জন ধরে রেখে সামনের দিকে এগোতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না নিলে দেশটাকে আগাতে পারব না। এখানে যে বাধাগুলো আসে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা আমাদের বিরোধী ছিল, এখনো তারা একটুও বদলায়নি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা এটা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১০ লাখের ওপরে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। সেখানে খুবই খারাপ অবস্থা। এরা কবে যে ফেরত যাবে, এর কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আর প্রতিদিনই তাদের বাচ্চা হচ্ছে, সংখ্যা তাদের বেড়েই যাচ্ছে।’
১৪ দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মতামত শুনব, আলোচনা করব। ভবিষ্যতে আমরা কীভাবে এগোতে পারি, এটাই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কোনো কল্যাণ হবে না।’
রাজনীতি/হা