বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল- মইনুল হাসান আবির
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২১, ৬:১০ অপরাহ্ণস্টাফ রিপোর্ট:
গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। আকাশে মেঘ আসে বর্ষার চিঠি নিয়ে। নদী-কাতার ভরে যায় নতুন পানিতে পুকুর ফিরে পায় প্রাণ, এটাই তো বর্ষার আগমন বাংলা ঋতুর সাজ।
ঋতু পরিক্রমায় বাংলার বুকে এসেছে প্রেমময়, কবিতাময়, উচ্ছল বর্ষা। আকাশে ঘন ঘন মেঘের ভেলা, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি দিন রাত কেটে যায় বেলা-অবেলায়। বর্ষা মানেই কদম ফুল। তাই বর্ষার শুরুতেই মিলবে কদমের সৌরভ। গাছে গাছে ফুঠে থাকা কদম ফুল প্রকৃতিতে এনে দেয় নজরকাড়া সৌন্দর্য।বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা, কদম নাম না জানা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন।
এই সৌন্দর্যের পাগল হয়ে কবিগুরু বৃষ্টি বন্দনায় বলেছেন, গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সেজেছে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশে মেঘের ঘনঘটা এরই মাঝে হঠাৎ মেঘরাজের গর্জন। মেঘের ডাকে যেন বৃষ্টি কাঁদছে। যে কথাটি বলি বলি করেও বলা হয় না, বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল নিয়ে যেন তারই আসার অপেক্ষা।
জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন: রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে…।
গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ঠ প্রাণকে শীতলতা দানে জুড়ি নেই বর্ষাকালের। প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের কাছে তাই বর্ষা নিয়ে আসে অভিনব ব্যঞ্জনা। আর কবিদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। গানে-কবিতায় বাংলার কবিরা করেছেন বর্ষা-বন্দনা। তাই ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
পথিক ছাতা নিয়ে বের হয় গঞ্জে যাবে। ভয় হয় প্রতিদিনই এই বুঝি বৃষ্টি এলো এটাই বর্ষার বৃষ্টিস্নাত। প্রকৃতি থেকে শুরু করে গান, কবিতায় বাঙালি জীবন প্রবাহের প্রতিটি পরতে রয়েছে বর্ষার প্রত্যক্ষ প্রভাব। নদী-মাতৃক দেশে বর্ষার আগমন মানেই জলে থৈ থৈ আওয়াজ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আষাঢ় কবিতায় বলেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ্ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’
আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় মাস। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এমাসে প্রচুর বুষ্টি হয়। গ্রীস্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পায়। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্তি স্নিগ্ধতা আর সবুজে ভরে তোলে বর্ষা।
আর বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বেজেছে এই বর্ষায়। সাহিত্যজুড়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে নানা ভাবে। বহুকাল আগে কালিদাস তাঁর ‘মেঘদূত’ কাব্যে বর্ষা বন্দনা করেছিলেন এভাবে ‘আষাঢ়ষ্য প্রথম দিবসে মেঘমাসৃষ্টসানুং/বপ্রক্রীড়াপরিণতগজ প্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।’ আরও আগে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন: এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর।/এ ভরা ভাদর/মাহ ভাদর/শূন্য মন্দির মোর…।
লেখক: মইনুল হাসান আবির। অনার্স শিক্ষার্থী, এম কলেজ সিলেট।