২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মহাকাশে যাচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০১৫, ৬:২১ অপরাহ্ণবাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহাকাশে স্থাপনের জন্য উৎক্ষেপণ করা হবে।
এটি উৎক্ষেপণের চূড়ান্ত পর্যায়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস এলনিয়ার সঙ্গে ১,৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ ও ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী জ্যঁ লইক গ্যাল নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী।
এ সময় তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশকে দাবায়ে রাখা যাবে না। আজকে এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৫৭টি স্যাটেলাইট মালিক দেশের ক্লাবে প্রবেশ করল। বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে এগিয়ে গেল।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ট্রান্সপন্ডার ভাড়া বাবদ প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। যা বিদেশিদেরকে দিতে হয়। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের পর আমাদের আর কোনো খরচ হবে না। বরং ৬-৭ বছরের মধ্যে এই বিনিয়োগের পুরো অর্থ উঠে আসবে।’
অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। এই ইতিহাসের অংশ হতেই আমি এই অনুষ্ঠানে এসেছি।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফিয়া ওবার্টও উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবে রূপ নিল।’
ড. শাহজাহান মাহমুদ আরো বলেন, ‘এই স্যাটেলাইট একটি আঞ্চলিক স্যাটেলাইট হিসেবে কাজ করবে। তারপরও সার্কভুক্ত দেশগুলো ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও এর আওতায় আসবে। আপনারা দোয়া করবেন, যাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করতে ঢাকা বিভাগের গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় স্থান নির্ধারণও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ড. শাহজাহান মাহমুদ।
ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেস এর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহি জ্যঁ লইক গ্যাল শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য গৌরববোধ করছেন বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বে এখন বিস্ময়। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা অংশীদার হতে পেরে গৌরববোধ করছি।’
উল্লেখ্য, গত ২০ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিস্টেম ক্রয়ের লক্ষ্যে ১,৯৫১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন করেন। ক্রয় কমিটি অনুমোদন দেওয়ার ২০ দিনের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২,৯৬৭ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১,৩১৫ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১,৬৫২ কোটি টাকা বিডার্স ফিন্যান্সিং এর মাধ্যমে সংকুলান করা হবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পের আওতায় এ বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল এর কাছ থেকে ২১৮.৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১৯.১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ ইন এর ভিত্তিতে ক্রয় করা হয়েছে।
এর আগে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ২০১২ সালের ২৯ মার্চ বিটিআরসি ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনার ইন্টারন্যাশনাল এর মধ্যে পরামর্শ সেবা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
. . . . . . . . .