সহিংসতা নয়, দেশে শান্তি চাই: সম্প্রীতি বাংলাদেশের সেমিনারে বক্তারা
সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ৬:২৮ অপরাহ্ণ
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশে যে সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। এটা আমরা চাই না। আর কোনো সহিংসতা নয়, দেশে শান্তি চাই বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা।
শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত সন্ত্রাস-সংঘাত-সহিংসতা নয়, চাই শান্তি-সম্প্রীতির বাংলাদেশ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক আলী হাবিব ও ফরহাদ মাহমুদ।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহাতাব স্বপ্নিলের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. জে. (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, ভদন্ত জ্ঞানানন্দ মহাথের, ডা. ইউসুফ রাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. জে. (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, রোবারেট মার্টিন অধিকারী, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর।
বক্তারা বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করি, এটা বলার দ্বিধা দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের পরিষ্কার ভাবে বলতে হবে, আমি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করি। আপোষ করে পথ চলা যাবে না। আসুন আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ করি।
আমরা গুজবে ভাসছি। তাই গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হতে হবে। সবাইকে গুজবের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। মৃত্যুর মিছিলের গুজব শোনা যায়। অনেকে বলছে, মারা গেছে। কিন্তু যার মারা যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তিনি বলছেন আমি মারা যাইনি। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সত্য তথ্য দিয়ে যেন গ্রেপ্তারকৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মীরজাফর একজন ছিলেন। খন্দকার মোস্তাক একজন ছিলেন। কিন্তু মীরজাফর বা খন্দকার মোস্তাক একজন নয় এখন প্যাকেজ। এভাবে সহিংসতা কোনো শিক্ষার্থী করতে পারে না। শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট সচেতন ও দেশপ্রেমিক। তাই নবীন প্রবীণ হাত ধরাধরি করে চলতে পারলে বাংলাদেশ কখনোই পথ হারাবে না।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জে. (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আমরা আজকে বাংলাদেশে যা দেখলাম তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। নতুন প্রজন্ম, তাদের পূর্ব পুরুষদের যে ভূমিকাই থাকুক না কেন? তাদের তো দেশটাকে ভালবাসার কথা ছিল। কোনোভাবেই প্রত্যাশা করি না নতুন প্রজন্ম বলবে, তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে, আমার কোনোভাবেই কামনা করি না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো দল বা ব্যক্তির নয়। তাহলে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে কিভাবে।
আমরা কি এ জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। অনেক শ্রদ্ধাবান মানুষ কিভাবে বললেন হেলিকপ্টার থেকে চার তলা বাসায় গুলি করা হয়েছে। যেটি কোনোভাবে সম্ভব নয়। এভাবে আসলে দেশ বিদেশে আন্দোলনকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই ভায়োলেন্স করা যাবে না, তাহলে সত্যের মৃত্যু ঘটবে। কোনো ধর্মেই অশান্তির কথা বলা হয়নি। অশান্তি ও সংঘাত করে দেশটাকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় তারা। আমি সরকার, আইন, বিচার মানি না। কিছুই মানি না। আমি যেটি চাই সেটি দিতে হবে। এভাবে একটি রাষ্ট্র চলতে পারে না। তাহলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো থাকার কি দরকার আছে। আন্দোলন করেন। কিন্তু সহিংসতায় যাবেন না। শান্তি চাই। সহিংসতা নয়। দেশের সম্পদ রক্ষা করে আন্দোলন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি একজন শিক্ষার্থী যেন কারাগারে না থাকে। যারা সহিংসতায় নিহত হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। নিরঅপরাদ শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ যে ধ্বংস করেছে, এই প্রতিষ্ঠানেই কিন্তু আমাদের ছাত্র ছাত্রীরা চাকরি করতো। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুজব। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আহ্বান শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, আজকে আমাদের মিলিত হয়ে আবার মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষা দিতে হয়েছে। আমরা এখন এমনি একটি পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, যারা গোলাম আযমের মুক্তি দাবি করেছেন, তারা আজকে গোলাম আযমের দল জামায়াতে ইসলামীর নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন। জামায়াত কিছু কিছু মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। এই তাণ্ডবের মাধ্যমে বুঝতে পারছেন তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সময় কি হয়েছিল। আমরা এই বাংলাদেশ চাইনি। কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বা কে রাজাকারের পক্ষে হিসেব মেলাতে পারছি না।
ভদন্ত জ্ঞানানন্দ মহাথের বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তি প্রিয়। কিন্তু সেই বাংলাদেশে অশান্তি করছে একটা শ্রেণী। মানুষ যেন সত্যের পথে থাকে। দেশে শান্তি ফিরে আসুক।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, আর যাই করেন মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করবেন। মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যালঘু। কারণ সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। দেশে যে অন্ধকার দেখা দিয়েছে। এই অন্ধকার থেকে মুক্তি হওয়া জরুরি। মেধা দাবি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। রাজাকারের সন্তানদের তালিকা করা হোক। তাদের দেশের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হোক।
রাজনীতি/হা