অনৈতিক পন্থায় ৩৫ বছর ‘নৈতিক শিক্ষা’
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০১৬, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণশিক্ষকতার মতো একটি মহৎ পেশায় ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ৩৫ বছর ধরে শিশুদের শিক্ষা দিয়ে চলেছেন দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি। সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হলেও পরে তিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষদান করতে থাকেন।
দেবেন্দ্রনাথ ১৯৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন তিনি। সর্বশেষ কোটালীপাড়ার ঊমাচরণ সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এর আগে দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
ক’দিন আগে প্রধান শিক্ষক দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের এসএসসি ও এইচএসসি সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কোটালীপাড়া উপজেলার দেবগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সদানন্দ গাঙ্গুলী। তিনি ওই শিক্ষকের দুটি সনদপত্রই ভুয়া দাবি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে গেল বছরের ১৮ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সনদপত্র দুটি ভুয়া বলে আবেদনকারী ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে পত্রের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়।
তবে এতোদিন ধরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি চাপা রেখেছিল। কদিন আগে ঘটনা জানতে পারেন অভিযোগকারী সদানন্দ গাঙ্গুলী। এরপর শিক্ষ অফিস থেকে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে অবগত হন স্থানীয় সাংবাদিকরা।
আবেদনকারী সদানন্দ গাঙ্গুলী বলেন, বিদ্যালয়টির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। আমি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি তার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট ভুয়া। তাই আমি এ ব্যাপারে তখন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করি।
ছিকটীবাড়ী ঊমাচরণ সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মাইকেল হিরোহিতো বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেইনি। আমাদের বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস মুকসুদপুর উপজেলার এপিএফ বদিউজ্জামান হাই স্কুলে ১২ বছর সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন। অভিজ্ঞ শিক্ষক হিসেবেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।
তবে এতোদিন ঘটনা চেপে রাখার কারণ জানতে চাইলে মাইকেল হিরোহিতো বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার জন্য খুব শিগগিরই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে চিঠি দিব।
দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সানপুকুরিয়া গ্রামের রঘুনাথ বিশ্বাসের ছেলে। তিনি ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক হিসেবে ছিকটীবাড়ী ঊমাচরণ সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
ঘটনা জানতে ছিকটীবাড়ী ঊমাচরণ সার্বজনীন উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
. . . . . . . . .