ভিসির শতকোটি টাকার দুর্নীতি : তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৪১ পূর্বাহ্ণনিয়োগ জালিয়াতি, বিভিন্ন ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ভিসি মো. শাদাত উল্লার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের শুরুতেই দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়েছে চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। এসব তথ্য আগামী ১২ নভেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
দুদক সূত্র বাংলামেইলকে জানায়, শেকৃবি’র ওই ভিসির বিরুদ্ধে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির চেয়ে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ, ২৬ মার্চ, পহেলা বৈশাখ, ১৫ আগস্ট ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে আপ্যায়ন ব্যায় এবং ২০১২-১৩ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের কন্টিজেন্সি ফান্ডের অর্থ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎসহ বিভিন্ন ভবনের নির্মাণ কাজে অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদকে অভিযোগ আসে।
দুদকে আসা এসব অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয় গত বছরের ৮ জুলাই। এতে ৯জন শিক্ষক, ২জন সেকশন অফিসার, মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট ও অন্যান্য কর্মচারী পদসহ ১৮ জন নিয়োগ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গত বছর বেআইনিভাবে ২৯ জন শিক্ষক, ২৪ জন সেকশন অফিসার ও ২২ জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একজন উপসহকারী প্রকৌশলীর বদলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ২ জন। নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
এছাড়া ভিসি শাদাত উল্লা স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে তার শ্যালক চৌধুরী এম সাইফুল ইসলামকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, শ্যালকের স্ত্রীকে সহকারী পরিচালক পদে ও ভাতিজি শরাবান তহুরাকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা আছে, ২০১২-১৩ হতে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত আপ্যায়ন ভাতার অতিরিক্ত ভুয়া ব্যয় ও কন্টিজেন্সি ফান্ডের অর্থ ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির দোয়েল ভবনের ৫ম থেকে ১০ম তলা পর্যন্তু, চামেলী ভবনের ৬ তলা পর্যন্ত, শেখ কামাল ভবন দেড় তলা পর্যন্ত, নবাব সিরাজ উদ্দৌলাভবনের ৪ তলা পর্যন্ত এবং ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র ভবনের ৪ তলা পর্যন্ত নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে ২০১০ সালে অনুমোদনকৃত শেকৃবির শক্তিশালীকরণ প্রকল্পও ছিল দুর্নীতিই ভরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দুদক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, শুরুতেই এসব দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে ভিসি মো. শাহাদত উল্লার বরাবর চিঠি দিয়েছে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা। এর মধ্যে ২০১৪ সালে ওই সব নিয়োগ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট নথি যেমন- এসব পদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পত্র, নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম এবং তা অনুযায়ী মোট পদের সংখ্যা, কর্মরত পদের সংখ্যা এবং শূন্য পদের সংখ্যা, পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নির্বাচনী ও মৌখিক পরিক্ষার নম্বরপত্র, টেবুলেশনশিট, বাছাই বোর্ডের সুপারিশ, সিন্ডিকেটের ৬৭তম সভার সিদ্ধান্তবলীর প্রতিবেদন, নিয়োগপ্রাপ্তদের নামের তালিকা, নিয়োগপত্র ও আবেদন পত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
ওইসব নথিপত্র যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, নিয়োগ কমিটি ও হিসাব বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। সবশেষে ভিসিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে রাত ৮টায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. শাদাত উল্লার মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
. . . . . . . . .