৬৭ গাছ লাগিয়ে ১০৭৪ কিলোমিটার হাঁটলেন রিহাব
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ
নওগাঁ থেকে শুরু করে দেশের দক্ষিণ প্রান্ত টেকনাফ পর্যন্ত ১০৭৪ কিলোমিটার একাই পায়ে হেঁটে অদম্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন রিহাব হোসেন। তার যাত্রার মূল উদ্দেশ্য ছিল—‘প্রাকৃতিক জীবনকে হ্যাঁ বলুন, দূষণকে না বলুন’। এ যাত্রায় তার মোট সময়ে লেগেছে ২৭ দিন।
রিহাব ১৬ অক্টোবর পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা বাংলাবান্ধা থেকে যাত্রা শুরু করেন। তার লক্ষ্য ছিল ১০০টি গাছ লাগানো। যদিও মাঝপথে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ায় গাছ লাগানোর জন্য থাকা অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবুও তিনি তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৬৭টি গাছ লাগাতে সক্ষম হন এবং দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দেন।
রিহাবের মতে, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষ তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা ও সহায়তা দিয়েছেন। যাত্রার ২৭ দিনের মধ্যে প্রথম ১৬ দিন তিনি উত্তরবঙ্গের গ্রাম ও শহরে খাওয়া-থাকার জন্য কোনো অর্থ ব্যয় করেননি।
স্থানীয়রা তাকে তাদের বাড়িতে খাওয়ান, আবার কখনো হোটেলে খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় মানুষ তাকে চিড়া-ভাজা, মুড়ি, চানাচুর, বিস্কুট, পাপড়, মোলা ইত্যাদি খাবার দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। রাতে তিনি নদীর পাড়ে, মাদ্রাসার মাঠে বা মসজিদের কিছু জায়গায় তাঁবু খাঁটিয়ে থেকেছেন।
যাত্রার সময় তিনি দুইবার ছিনতাইয়ের শিকার হন।
প্রথমটি পাবনায় রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে ঘটে, যেখানে তার কাছে থাকা মোবাইল ও ২৮০ টাকা চলে যায়। দ্বিতীয়টি ১ অক্টোবর ঢাকার দাউদকান্দি ব্রিজে ঘটে, যেখানে দুজন দুর্বৃত্ত তার গলায় ছুরি ধরার পর মোবাইল ও টাকা নিয়ে যায় এবং মারধর করে। এই ঘটনা তাকে বাকি যাত্রায় বেশ সাবধানী ও ভয় নিয়ে চলতে বাধ্য করে।
রিহাব প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ হাঁটেন। সর্বোচ্চ একদিনে তিনি ১১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটে ৭৩ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন।
রিহাব হোসেন বলেন, ‘আমার এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল, মানুষকে বোঝানো—প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানই টেকসই জীবনের পথ। প্রকৃতিকে ভালবাসলেই জীবন হয় সুন্দর।’
এই মহাযাত্রায় তাকে সহযোগিতা করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন ভয়েস, যেখানে রিহাব হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করছেন। গ্রীন ভয়েসের প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের এমন উদ্যোগ আমাদের দেশের পরিবেশ আন্দোলনে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। রিহাব হোসেনের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে, সচেতন তরুণরাই পারে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার পথ দেখাতে।’
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার তকিপুর গ্রামের এই তরুণ বর্তমানে হাবিবুল্লাহ বাহার ইউনিভার্সিটি কলেজে লাইব্রেরি এন্ড ইনফরমেশন সাইন্স বিভাগের ছাত্র।




