সিলেটে ওষুধের বাজারে এসব কী হচ্ছে?
আব্দুল হান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০২৪, ৪:০২ অপরাহ্ণ
*অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট এবং স্কিন প্রোডাক্টে বাজার সয়লাব
* ব্যবহারকারী রোগীরা নানা পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন
* কিছু করার নেই সিভিল সার্জন ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের
যে কোনো ভালো কোম্পানীর কিটকোনাজল সেস্পু এর দাম ১৭৫ টাকা, অথচ সে জায়গায় নামদারী কিটোসাইট সেম্পুর মুল্য ৬৯৫ টাকা। আর এ ভাবেই সিলেটের ওষুধ বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নাম সর্বস্ব কোম্পানীর অবৈধ ওষুধ জাতীয় সামগ্রী। আর এদের প্রতারণায় পড়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনরা। আর এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট , স্কীন প্রোডাক্টস বা অবৈধ ওষুধের ব্যাপারে সরকারের কোনো নির্দেশনা না থাকায় কোনো ব্যবস্থ নিতে পারছেনা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
সারাদেশের ন্যায় সিলেটের ওষুধের বাজারেও গণহারে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ফুড সাপ্লিমেন্ট (খাদ্য সম্পুরক)এবং এবং স্কীন প্রডাক্টস ( বিশেষ প্রসাধনী)সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা সরকারের কোনো স্বাস্থ্য সংস্থারই এ বিষয়ে জোর তদারকি নেই। নেই কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা। আর এ সুযোগে কিছু মুনাফালোভী চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ী ভয়ানক ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন। আর এর পেছনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আইনী দূর্বলতাকে দায়ী করছেন অনেকে। তারা বলছেন সরকারের পক্ষ থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর তৈরী করা হয়েছে। কিন্ত এ যাবৎ কোনো ঘোষিত বিধিমালা না থাকায় তারা এসব অবৈধ ফুড সাপ্লিপ্লন্টে এবং স্কিন প্রডাক্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। ফলে ব্যবহারকারী রোগীরা নানা পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের স্টেশন রোড, মেডিকেল রোড, চৌহাট্টাসহ বিভিন্ন বাজারের ওষুধের দোকানগুলোতে ফুড সাপ্লিমেন্ট (ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন) নামে যা বেচাকেনা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই অবৈধ। অর্থাৎ দেশের বাজারে বিক্রির অনুমোদন না থাকার পরও দৃষ্টি নন্দন মোড়ক লাগিয়ে এগুলোর বেচাকেনা হচ্ছে দেদারছে। আর জেনে বা না জেনেই অথবা ম্যানেজ হয়েই অনেক নামীদামি চিকিৎসকরাও ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট ও স্কীন প্রডাক্টের নাম। বেশি টাকা লাভের আশায় এসব অনুমোদনহীন অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট ও স্কীন প্রডাক্টস বিক্রির পেছনে কাজ করছে অনেক বড় একটি চক্র। কেননা অধিকাংশ ফুড সাপ্লিমেন্ট ও স্কীন প্রডাক্টের প্রস্তুতকারী কোম্পানিরই বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন নেই। তারপরও এই নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলো লোভনীয় অফারের বিনিময়ে এসব পণ্য বিক্রি করাচ্ছে কিছু সংখ্যক নামিদামি অর্থ লোভী নৈতিকতা বিবর্জিত চিকিৎসক, কিছু সংখ্যক অসাধু ফার্মেসির মালিক এবং মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভদের দিয়ে।
বাজারে ওষুধের দোকানগুলোতে যেসব বিভিন্ন ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, রেভিকাল ট্যাবলেট, বনবিয়ান ট্যাবলেট, ওমেগা-৩, ট্যাবলেট ম্যাগবিয়ান, ক্রিয়েটিন পাউডার, ক্যাপসুল বায়োমেগা, ক্যাপসুল নোভাপ্লেক্স, রয়েল প্লাস, অভাসিড ক্যাপসুল, ভালিডো ক্যাপসুল, ল্যাকটোগিন ক্যাপসুল, উনেক্স ক্যাপসুল, ক্যাপসুল লেগুম-৭৫০, জয়েন্ট গ্লু এম-লিনা ও ড্যানজোলার সোপ, ক্যাপসুল রেটিনেক্স, ক্যাসুল এইস পাওয়ার ও ট্যাবলেট জিসিএম প্লাস। এ ছাড়া বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন কেটসাম শ্যাম্পু, কেটোনীল সাবান ইত্যাদি। আর এসব সাপ্লিমেন্টের প্রস্তুতকারী এবং আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও অনেকেরই অচেনা। দেশের খ্যাতনামা ওষুধ কোম্পানীগুলোর নামের সঙ্গে মিল রেখে গড়ে ওঠা কোম্পানীগুলো হলো-স্কীন কেয়ার, পপুলার হেল্থ কেয়ার, মেডিকেয়ার বাংলাদেশ, গ্রীন স্কীন কেয়ার, নিউ ন্যাশন ট্রেডিং, সৈয়দ রাহেল আহমেদ, হেলদি স্যুপ, এম এন্টারপ্রাইজ, এন এম সি ডার্মা ভিশন, এস এম ট্রেডিং, জাল কর্পোরেশন, ট্রাস্ট ডার্মা, প্রাইম হেল্থ কেয়ার, নিউ হেল্থ কেয়ার, গাজী ট্রেডিং, ট্রাস্ট কর্পোরেশন, জাহানারা মেডিকেল হল, ভাইটাল স্কীন, বাংলাদেশ ফার্মা, বায়োটেক, আর এস কর্পোরেশন, মার্স ট্রেড, জি এম ট্রেড, মার্স কেয়ার, ডার্মা ভিশন, রাষ্ট ট্রেড, আর বি ফার্মা, ব্যব, সিওডিল, পপুলার হেল্থ কেয়ার লি:, এস এন্টারপ্রাইজ, এম কে কর্পোরেশন, ব্রাদার্স টেকনোলজি, জি এস হেল্থ কেয়ার সহ বেশ কিছু নামসর্বস্ব নাম সর্বস্ব কোম্পানি।
এ ব্যাপারে সিলেটের ওষুধ তত্বাবধায়ক মো. শামীম হোসেন এ প্রতিদেককে বলেন, এসব ফুড সাপ্লিমেন্ট এবং স্কিন প্রোডক্টেও ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরী করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। যে কারণে আমরা স্থাণীয় ভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারছিনা। তবে নিয়মিত আমাদের সম্পৃক্ততায় মোবাইল কোর্ট হচ্ছে। মানুষের জীবনের জন্য ক্ষতিক্ষর ওষুধ জাতীয় কোনো কিছু যেখানেই বিক্রি হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা এসব বিষয়ে তেমন খোজ রাখতে পারিনা। কারণ এ গুলো দেখার জন্য ওষুধ প্রশাসন আছে। তবু কেউ অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
সিলেটসংবাদ/হা