২০ হাজার বছর আগেও পূর্ব এশিয়ায় এসেছিল করোনা
সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২১, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণএখনকার মানুষদের জিনোম নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা প্রাচীনকালে করোনা ভাইরাসের একটি প্রাদুর্ভাবের ইঙ্গিত পেয়েছেন। এ ধরনের গবেষণা থেকে অতীতে মহামারির জন্য দায়ী কোনো ভাইরাসকে যেমন চিহ্নিত করা যায়, তেমনি ভবিষ্যতে কোনো ভাইরাস সম্ভাব্য মহামারির কারণে হতে পারে, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া সম্ভব।
বিজ্ঞান ভিত্তিক সাইটেক ডেইলি জানায়, নতুন এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখছেন আজ থেকে ২০ হাজার বছর আগে পূর্ব এশিয়াতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল করোনা ভাইরাস (বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ নোভেল করোনা ভাইরাস নয়)। ঐ অঞ্চলের মানুষের জেনেটিক মেকআপে এর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মার্কিন জার্নাল কারেন্ট বায়োলজিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
এ গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা আধুনিক কালের আড়াই হাজার মানুষের জিনোম বিশ্লেষণ করেছেন। আগেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মানুষ কীভাবে ঐ ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতে এ গবেষণা করা হয়। এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন ইউনিভার্সিট অব অ্যারিজোনা ও ইউনিভার্সিট অব অ্যাডিলেইডের গবেষকরা। করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জনের প্রক্রিয়াটা বোঝার জন্য তারা কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েছেন।
এবারের এই করোনা (কোভিড-১৯) মহামারিসহ গত ২০ বছরে ভাইরাস পরিবারের যে অংশটি তিনটি বড় প্রাদুর্ভাব ঘটিয়েছে সেটা হলো করোনা ভাইরাস। গত ২০ বছরে তিন বার করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর মধ্যে ২০০২ সালে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়ে সার্স-কভ থেকে সৃষ্ট রোগ সেভার অ্যাকিউট রেসপাইরেটরি সিন্ড্রোমে ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়। মার্স-কভ থেকে ছড়িয়ে পড়ে মিডল ইস্ট রেসপাইরেটরি সিন্ড্রোম, এতে মারা যায় ৮৫০ জন। আর সার্স-কভ-২ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। এতে এখন পর্যন্ত ৩৮ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
জিনোম বলতে কোনো জীবের সামগ্রিক ডিএনএকে বোঝায়, সহজভাবে বলা চলে জীবনের নীলনকশা বা কোনো জীবের জীবনবিধান। জীবের বৃদ্ধি, প্রজনন, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে জিনোম। ভাইরাসের বিবর্তনের এই গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা এখন জানতে পারছেন যে, হাজার বছর আগেও করোনা ভাইরাস একবার মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত একজন অধ্যাপক বলেছেন, ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে সরাসরি ডাইনোসরের দেহাবশেষের জীবাশ্মের বদলে তার একটা পদচিহ্ন পেলাম আমরা। আমরা সরাসরি প্রাচীন এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাইনি, কিন্তু আমরা দেখেছি যে, বহু বছর আগে মহামারির সময় মানব জিনোমে চিহ্ন রেখে গেছে এই ভাইরাস। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে পূর্ব এশিয়ানদের পূর্বসূরিরা কোভিড-১৯ এর মতো একটি রোগের মহামারির মুখে পড়েছিল।
গবেষণার প্রধান লেখক ইয়াসিন সুউলমি বলেন, করোনা ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফুসফুসের টিস্যুর। আর সেই ফুসফুসেই আমরা ৪২টি ভিআইপি সক্রিয় অবস্থায় থাকতে দেখছি। এগুলো একেবারে সরাসরি ভাইরাসের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। হোস্ট সেলের পৃষ্ঠে থাকা ভিআইপিকে ব্যবহার করেই করোনা ভাইরাস নির্দিষ্ট কোনো কোষের ভেতরে ঢুকে পড়ে। আর একবার সে ভেতরে ঢুকতে পারলে আরো অনেক সেলুলার প্রোটিনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া শুরু করে।
এ গবেষণা থেকে আরো দেখা যাচ্ছে, মহামারি চলতে থাকা সময়েই ভাইরাস-কোষের এই মিথস্ক্রিয়া থেকেই রোগটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রাচীন ভাইরাসগুলোর রেখে যাওয়া এই পদাঙ্ক থেকেই বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন কীভাবে এই অঞ্চলের মানুষেরা ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে সক্ষমতা গড়ে তুলেছে শরীরে।
প্যারিসের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের বিবর্তনীয় জিনতত্ত্ববিদ লুই কুয়াতানা-ম্যুহিস ডেভিড এনার্ড প্রাপ্ত তথ্যের যাচাই-বাছাই করে বলেছেন, পূর্ব এশিয়ার কিছু মানুষ ২০ হাজার বছর আগে করোনা ভাইরাসের মতো মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে এ রকম ভাইরাসের আক্রমণে টিকে থাকাটা রপ্ত করে ফেলেছিল। এ কারণেই কি ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে এশিয়াতে, বলা ভালো পূর্ব এশিয়াতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম? তবে ২০ হাজার বছর আগের সেই মহামারি কত বছরে কাবু হয়েছিল, তার তথ্য এখনো জানা যায়নি।