বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসায় যা করা জরুরি
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০২১, ৬:১৭ অপরাহ্ণসিলেটেরকন্ঠ ডেস্ক:
বাংলাদেশে প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ থাকে বেশি। চলতি সপ্তাহে শুরু থেকে বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। বজ্রপাতের মাত্রা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনা করে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, বজ্রপাতের সময়সীমা সাধারণত ৩০-৪৫ মিনিটি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেজন্য ঘন কালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বজ্রপাত হলে শরীরে কী হয়?
কোন ব্যক্তির উপরে বজ্রপাত হলে তার শরীরের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ বয়ে যায়। ফলে হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় যেসব বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইন থাকে সেগুলো হচ্ছে হাই-ভোল্টেজ তার, যেগুলো এক হাজার ভোল্টেজ কিংবা তার চেয়ে কিছুটা বেশি হয়ে থাকে।
ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমেদ বলেন, বজ্রপাত থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সেটি আল্ট্রা হাই-ভোল্টেজ। বজ্রপাত দুই ধরণের হয়। কোন ব্যক্তির উপর সরাসরি পড়তে পারে অথবা একটি বড় এলাকা জুড়ে বজ্রপাত হতে পারে।
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তির উপর সরাসরি বজ্রপাত হলে সে সাথে সাথে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। বজ্রপাতে ভোল্টেজ এতো বেশি যে সেটা ১০ হাজার থেকে মিলিয়ন পর্যন্ত চলে যায়।
যদি কোন আশপাশের গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, টাওয়ার কিংবা উঁচু ভবনের উপর বজ্রপাত হয় তখন সেখান থেকে আল্ট্রা লো-ডিউরেশন বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়। আশপাশে যদি কেউ থাকে তখন তার শরীরে অতি দ্রুত বিদ্যুৎ প্রবেশ করে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে যায়।
চিকিৎসক আহমেদ বলেন, বজ্রপাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই তৎক্ষণাৎ মারা যায়। আহত হয়ে অল্প কিছু মানুষ বেঁচে যায়।
বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাত নিয়ে নানা ধরণের সতর্কবার্তা প্রচার করছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে।
বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই মারা যায়। আবারো কারো-কারো হার্ট একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। তাদের যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন হয়তো আমরা কাউকে-কাউকে রক্ষা করতে পারি।’
চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সাথে সাথে সিপিআর দিতে হবে। সেজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
সিপিআর দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোন গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে। আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেবার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা যাবে না।
তানভীর আহমেদ বলেন, বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। কারণ আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না। সূত্র: বিবিসি বাংলা