এই ঢিলেমির ব্যাখ্যা কী
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ৫:৩৬ অপরাহ্ণ
নিউজ ডেস্ক:
সুদীর্ঘ পাঁচ বছরেও দেশের ৩০০ কলেজ ও ৩৫০টি মাধ্যমিক স্কুল সরকারীকরণের কাজ সম্পন্ন করা গেল না! আমলাদের ঢিলেমি, অদক্ষতা বা অন্য কোনো কারণে এক বছর কিংবা দুই বছরের কাজ পাঁচ বছরেও সুরাহা হবে না, এটাকে কী বলা যায়? ভুলে গেলে চলবে না যে বিষয়টি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুধু অভিপ্রায় নয়, সুস্পষ্ট নির্দেশনাও।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহ ও নির্দেশে সরকার যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ ও সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই, সেসব উপজেলায় একটি করে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি বলে ঘোষণা করে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দফায় দফায় তালিকাভুক্ত অন্তত ৩০০ কলেজ ও ৩৫০টি বিদ্যালয় পরিদর্শনের কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর বছর জুড়ে চলে ‘ডিড অব গিফট’ বা দানপত্র সম্পাদনের কাজ। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেই ২০১৮ সালে জিও (সরকারি আদেশ) জারি হয়। যে কোনো স্তরেরই হোক, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানে শত রকমের আর্থিক দৈন্যদশা, দান-অনুদান, অভাব-অভিযোগ, বৈষম্য, অনিশ্চয়তা এবং দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা। মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষা স্তরে একসঙ্গে এত অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ করা আমাদের দেশে এই প্রথম। এমন একটি মহতী উদ্যোগ ও কার্যক্রমে কেবল বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মচারী নয়, বলা যায় একেকটি এলাকায় সর্বস্তরের জনগণের মধ্যেই ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা ও প্রাণচাঞ্চল্য সঞ্চারিত হয়।
২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রক্রিয়াটি ঢিমেতালে নানা ধাপ অতিক্রম করে এ পর্যন্ত এলেও শিক্ষক-কর্মচারীদের পদায়ন না হওয়ার কারণে ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ‘না সরকারি না বেসরকারি’। লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবক সরকারীকরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বেতন-ভাতা পাওয়া না-পাওয়া এবং নানাবিধ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের অসুবিধা ও ভোগান্তি-বিড়ম্বনার শেষ নেই।
সরকারীকরণের প্রক্রিয়াধীন প্রতিষ্ঠান-গুলোতে ২০১৬ সাল থেকে রয়েছে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা। করোনার প্রভাবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম এক বছর ধরে বন্ধ। কিন্তু আগে (২০১৬-২০২০) শিক্ষকের স্বল্পতা নিয়ে কীভাবে পাঠ কার্যক্রম চলেছে, তা সবার ভাবার বিষয়। ৬৫০টি কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠানেই নিয়মিত অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক নেই। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে ২০১৮ সালে সরকারি আদেশ জারির সঙ্গে সঙ্গে। খরচাদি ও আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে ইউএনওদের (উপজেলা নির্বাহী অফিসার) করা হয়েছে ‘জয়েন্ট সিগনেটরি’। এ নিয়েও প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক ও ইউএনওদের মধ্যে অবনিবনা ও ভুল বোঝাবুঝির অন্ত নেই। বিধি অনুযায়ী, বয়স ৬০ বছর পূরণ হওয়ায় পাঁচ বছরে অন্তত ২ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী কোনো সুবিধা ছাড়াই চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। সবচেয়ে দুঃখ ও বেদনাদায়ক হলো, এই সময়ে (২০১৬-২০২১) বেশ কয়েক জন শিক্ষক-কর্মচারী সরকারীকরণের প্রক্রিয়াধীন থেকেই দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন। এমন দীর্ঘসূত্রতা খুবই অবাঞ্ছিত ও অনভিপ্রেত! এই ঢিলেমির ব্যাখ্যা কী?
করোনার এক বছর হলো। করোনার মধ্যেও কিন্তু সরকারি (সামরিক ও বেসামরিক) নিয়োগ-পদোন্নতিসহ অনেক কিছু থেমে নেই। তাহলে জিজ্ঞাসা: (১) পাঁচ বছরে (৫৮ মাস) কাজটি সম্পন্ন করা হলো না কেন? (২) কার বা কাদের স্বার্থে এই সরকারীকরণ? (৩) প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশবাসীরও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কাদের দ্বারা ও কীভাবে সম্পন্ন হবে এবং (৪) এক্ষেত্রে করোনা কোনো যৌক্তিক কারণ নয়, এত দিনেও কাজটি সম্পন্ন না হওয়ার মূল কারণ কি সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, নাকি অন্য কিছু?
মানুষের মনে আবেগ বলেও তো একটি জিনিস আছে। ঠিক তেমনই সুখ-আনন্দ-উল্লাস-ধৈর্য। আশা করি সংশ্লিষ্টদের আবেগ-আনন্দ আর ধৈর্যের রেশটুকু নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগেই স্কুল-কলেজ সরকারীকরণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।