নতুন প্রত্যয়ে জাগ্রত হোক বাঙালী সত্তার
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ৯:৫৫ অপরাহ্ণআবু বকর পারভেজ
বিজয় দিবস আসলে অনেক দুঃখ আনন্দে ম্লান হয়ে যায়। আমাদের এই বিজয় দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। ১৯৪৮ সালে ভাষায় দাবী থেকে এই বিজয়ের বিজ উপ্ত হয়। বাঙালী ৫২ ভাষার জন্য বুলেট,বেয়নেটের সম্মুখে দাঁড়ায়। ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন আমাদেরকে সজাগে করে অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং শোষণের বিরুদ্ধে। ৬৯ এর আন্দোলন আমাদের শিখায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। আমাদের মুক্তির উপলব্ধি ধীরে ধীরে আমাদের নিয়ে যায় ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের দিকে। ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে তিনি জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে, সমঝোতার হাত বাড়িয়ে দিলেন নির্বোধ শাসকগোষ্ঠীর দিকে।
কিন্তু তারা সমঝোতার বদলে ২৫ মার্চ রাতে ঘটালো ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত এবং ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ড। ক্ষমতা হস্তান্তরের বদলে বেছে নিলো রক্তেমাখা পথ। দীর্ঘ ৯ মাসে ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং ৪ লক্ষ মা- বোনে মার্যাদাহানীর বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয়। এই বিজয়ের পথ অতিক্রম করতে অজস্র ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সাধারণ মানুষদের। সহ্য করতে হয় পাকিস্তানী হায়েনাদের জুলুম অত্যাচার। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। যাতে বাঙালী আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা করে যায় কসাই টিক্কা বাহিনী। দীর্ঘস্থায়ীভাবে বাঙালীর এই ক্ষতি যাতে পুষিয়ে উঠতে না পারে সেই চিন্তাধারা থেকে তাদের এহেন কর্মকাণ্ড। ৭ মার্চ জাতির জনক রেসকোর্স ময়দানে বলেছিলেন, বাঙালীকে কেউ দাবাইয়া রাখতে পারবে না।
উনার সেই প্রিয় বাঙালীকে কেউ দাবাইয়ে রাখতে পারেনি। আজকে বাংলাদেশে দিকে থাকালে বিশ্বাস করা যায়না এই বাংলাদেশকে ভঙ্গুর অবস্থান ফেলে গিয়েছিলো হায়েনার দল। কসাই টিক্কা বলেছিলো, মানুষ না, মাটি চাই। এই বাংলাদেশ অবকাঠামোগতভাবে ছিলো বিপর্যস্ত, অর্থনৈতিক কাঠামো ছিলো একেবারে ভাঙা। এই বাংলাদেশ যে, ঘুরে দাঁড়াবে সেই স্বপ্ন দেখার সাহস কেউ পাননি। সে ধারাটা শুরু করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে যদি বঙ্গবন্ধু ফিরে না আসতেন তাহলে প্রেক্ষাপটতা হয়তো অন্যরকম হতো। যুদ্ধ শেষ করে মুক্তিযুদ্ধারা ফিরেছেন তাদের সবার হাতের অস্ত্র এই অস্ত্রগুলো তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নেয়া বঙ্গবন্ধু ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব ছিলোনা। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে তখনও অবস্থান করছিলো তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য ভারতীয় সরকারের সাথে শান্তিপূর্ণ আলোচনা। যুদ্ধ পরেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের স্বীকার হচ্ছিলো তাই স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন আনাটা বঙ্গবন্ধু ছাড়া কারো পক্ষে হয়তো সম্ভব ছিলোনা।
বিপর্যস্ত একটা রাষ্ট্রকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার কঠিন কাজটা শুরু করেছিলেন তিনি। একটা সদ্য জন্ম নেয়া দেশকে একটি সুশৃঙ্খল সংবিধান উপহার দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুলে নির্মমভাবে হত্যা করে। কিন্তু তার স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন হারিয়ে যেতে দেননি উনার তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কাজটার শুরু করেন তিনি। একজন যদি স্বপ্ন দেখে তাহলে সেই স্বপ্ন কেন সবার নয়, একজন যদি এগিয়ে যেতে চায় তাহলে সবাই নয় কেন। বাংলার বর্ষায় ভেজা কোমল পলিমাটির মানুষগুলো আস্থা রেখেছিলো বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি। সেই আস্থার প্রতিদান উনি দিয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষেত্রে। শিক্ষিত জনের কাছে তিনি এখন দেশরত্ব, বিদ্যানন্দিনী হলেও এই বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ কৃষকদের কাছে তিনি এখনো শেখের বেটি। শেখের বেটি এই সাধারণ মানুষের ভালোবাসার শক্তি নিয়ে লাল সবুজের পতাকা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বময়। বাংলাদেশে মানুষের জন্য ৫০ তম বিজয়ের উৎসবের আবহটা অন্যরকম। কারণ বিজয়ের মাসে আমাদের স্বপ্নের পদ্মাসেতু সম্পূর্ণ দৃশ্যমান ।
একসময় এই পদ্মা পাড়ের মানুষের কল্পনার বাইরে ছিলো পদ্মাসেতু । উত্তাল পদ্মার বুকে আজ বাঙালীর স্বপ্ন বাস্তবায়িত। শিল্প থেকে শুরু করে কৃষি সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে সঠিক নেতৃত্ব এবং দিকনির্দেশনার কারণে। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রকে অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বাঙালীর জীবনমান উন্নয়ন করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাঙালীর আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুর তনয়া। আজকে বাংলাদেশকে ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছেন বিশ্বের কাছে। বিশ্বের সব থেকে বড় শরনার্থী শিবিরের একটি এখন বাংলাদেশে। মায়ানমার থেকে বিতারিত হওয়া বিশাল রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়েছে বাংলাদেশেকে। শরনার্থী হওয়ার কষ্টের সাথে অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষের বহু আগেই হয়েছিলো তাই আমরা বুঝে রোহিঙ্গাদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পেরেছি।
এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব নিতে একটুও পিছপা হননি বঙ্গবন্ধুর তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। আজকে বাংলাদেশে মানবতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন, ভাসান চরে ১ লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য অত্যাধুনিক আবাসন স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি যাতে কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সুফল ভোগ করা শুরু করেছে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ। আজকে বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার স্বপ্ন দেখে। বর্তমানে নতুন প্রত্যয়ে উদ্যমী এক বাংলাদেশ। এই অগ্রযাত্রাকে সচল রাখতে হলে
সকলের সম্মলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বিজয়ের মাসে শপথ নিতে হবে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার যেখানে সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণের প্রেক্ষিতে মানুষকে মূল্যায়ন করা হবে না। সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আরোও নিশ্চিত করতে হবে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীর প্রতি হীনমন্যতা দূর করার জন্য কাজ করতে হবে। নারীর প্রতি সহনশীল মনোভাব এবং নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরীই হোক আমাদের আগামীর লক্ষ্য। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ সুবিধার প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের কাম্য। সমাজের প্রান্তিক পর্যায়ে উন্নয়নের জোয়ার লাগুক। ক্ষদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের পূর্ণ অধিকার ও উন্নত সুযোগ সুবিধা লাভ করুক। তাই আগামী বাংলাদেশ হোক মর্যাদায় তৈরী সমতার।
. . . . . . . . .