সুনামঞ্জে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়া হল স্কুল ছাত্রীকে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ অক্টোবর ২০১৬, ৯:৩০ অপরাহ্ণনিজস্ব প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ:
শিক্ষকের যৌন হয়রানীর বিচার চাইতে গিয়ে সুনামঞ্জের জামালগঞ্জে এসএসসির প্রস্তুতিমুলক নির্বাচনী পরীক্ষায় হল থেকে বের করে দেয়া হল স্কুলের মানবিক বিভাগে পড়ুয়া (রোল-০১) এক স্কুল ছাত্রীকে। নালিস করার অপরাধে ওই ছাত্রীর চাচাকে পিঠিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যার কারনে এমন ঘটনা ঘটেছে সেই গুণধর শিক্ষক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃক প্রতিষ্টিত স্কুলের একজন সহকারি শিক্ষক।
সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দেয়া অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার আলহাজ্ব ঝুনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক এতিম এক স্কুল ছাত্রীকে দ্বীর্ঘদিন ধরেই যৌন হয়রানী করে আসছিলেন। দরিদ্র চাচার বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল ওই স্কুল ছাত্রী। লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবার আংশকায় শিক্ষক দ্বারা বারবার যৌন হয়রানীর শিকার হয়েও মুখ বুঝে সবকিছু নিরবে সহ্য করে নিয়েছিলো এতিম ছাত্রীটি।
ধারণা ছিল এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হতে পারলেই রক্ষা পাবে ওই শিক্ষকের কু-নজর থেকে। কিন্তু পরিমলের প্রেতাত্বা খ্যাত ওই শিক্ষক কু-নজরের মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ছাত্রীর খাতায় আপক্তিকর কথাবার্তা লিখতেও পিছপা হননি ওই গুনধর শিক্ষক। সম্প্রতি নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া অপর এক স্কুল ছাত্রীর শরীরেও হাত দেন ওই শিক্ষক। এক পর্যায়ে এসএসসির প্রস্তুতিমুলক পরীক্ষায় অংশ নেয়া ছাত্রী শিক্ষকের আপক্তিকর কর্মকান্ডে ইতপূর্বে সম্মতি না দেয়ায় ইংরেজী পরীক্ষায় চলাকালীন সময়ে অহেতুক ওই শিক্ষক খাতায় ক্রস চিহ্ন দিয়ে দেন।
বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাকে অবহিত করা হলে তিনি গত শুক্রবার বিকেলে স্কুল মাঠে এ নিয়ে সালিসে বসেন। সালিসে স্কুলের শিক্ষার্থী , শিক্ষক, খোদ উপজেলা চেয়ারম্যানের সামনে অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক ও চেয়ারম্যানের লোকজন সংগঠিত হয়ে ছাত্রীর চাচা আশরাফ হোসেন রুপনকে বেধরক ভাবে পিঠিয়ে আহত করে। রাতেই রুপনকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনার পর স্কুল ছাত্রী সোমবার সন্ধায় মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি রবিবার স্কুলে ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা দিতে গেলে কিছুক্ষন পরই স্যার আমাকে কোন কারন ছাড়াই খাতা কেড়ে নিয়ে হল থেকে বের করে দেন, সোমবার আর ভয়ে স্কুলে যাইনি, এর আগেও তিনি ইংরেজী পরীক্ষার খাতায় ক্রস চিহ্ন দিলে প্রধান শিক্ষক এসে পুন:রায় খাতা ঠিক করে দিয়ে যান, আমি এতিম বলে ন্যায় বিচার চাইতে গিয়েই চাচাকে মারধরের স্বীকার হতে হল আর আমার সামনে এসএসসি পরীক্ষায় দেয়াটাও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ওই ছাত্রী।
জুলাই মাসে সাময়িক ভাবে ঝুনু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানকৃত পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামের রিয়াজ আহমদের ছেলে সহকারি শিক্ষক মোস্তফা রকিব ভুঁইয়ার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ছাত্রীর ইংরেজী খাতায় ক্রস চিহ্ন দেইনি, রবিবার আমি পরীক্ষার হলে ডিউটিতেই ছিলাম না। স্কুল মাঠে সালিসে মারপিঠের কথাও তিনি অস্বীকার করেন।’
প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন সোমবার সন্ধা ৭টায় এ প্রতিনিধির সাথে মুঠোফোনে আলপাকালে বলেন, ওই স্কুল ছাত্রীর ইংরেজী পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে খাতায় সহকারি শিক্ষক ক্রস চিহ্ন দিয়েছিলেন, আমি তা জানতে পেরে আবার খাতায় রাইট (সঠিক) চিহ্ন দিয়েছি। তিনি যৌন হয়রানীর অভিযোগ প্রসঙ্গে কোন কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার ওরফে ঝুনু মিয়ার নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে রাতে কয়েকজন ছাত্র কিরিচ ধরে ওই শিক্ষকের নিকট থেকে প্রশ্নপত্র নিতে চেয়েছিলো, বাঁধা দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ছাত্রীর অভিযোগ পেয়ে আমি কয়েক গ্রামের লোকজনকে ডেকে সালিসে বসি, বিষয়টি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় উক্তেজিত লোকজন রুপনকে কিছুটা মারধর করে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তসলিমা আহমদ পলি অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে রাত ৮টায় এ প্রতিনিধিকে বলেন, ওই স্কুল ছাত্রী নিজে এসে সন্ধায় আমার নিকট অভিযোগ দিয়ে গেছে, ওই ছাত্রী বয়ে আমার সামনেই কান্নাকাটি করেছিলো, অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই শিক্ষকের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
. . . . . . . . .