কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী বিক্ষোভ, পুলিশের গুলিতে নিহত ৪

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০১৬, ১০:৪২ অপরাহ্ণবাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে চার জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষে বিপক্ষে সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু সোমবার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এসময় গুলি চালায় পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হওয়ার খবর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ নিহতের বিষয়টি প্রথমে নিশ্চিত না করলেও পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামসুজ্জামান তিনজন নিহতের কথা স্বীকার করেন।
নিহতরা হলেন- গণ্ডামারা ইউনিয়নের মৃত আশরাফ আলীর পুত্র আনোয়ারুল ইসলাম প্রকাশ অাংকুর নূর (৬০), মর্তুজা আলী (৫০), জাকের আহমেদ (৫০) ও জাকের হোসেন (৩০)।
প্রথম তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। জাকের হোসেনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। এখানে অাংকুর নূর ও মর্তুজা আলী আপন ভাই এবং জাকের হোসেন মর্তুজা আলীর মেয়ের জামাই।
সোমবার বিকেলে ৪টার দিকে স্থানীয় গণ্ডামারা হাজী পাড়া স্কুল মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি বাংলামেইলকে নিশ্চিত করে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘পুলিশের সাথে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহতের খবর পেয়েছি। তবে এখনো লাশ সনাক্ত করা যায়নি। এতে ১৭ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক পঙ্কজ বড়ুয়া বাংলামেইলকে বলেন, বাঁশখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৮-৯ জনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে জাকের (৩০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বাংলামেইলকে বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে পক্ষে বিপক্ষে সমাবেশে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা ভঙ করায় পুলিশ বাধা দিলে এতে পুলিশের ওপর হামলা করে এলাকাবাসাী। এসময় পুলিশ গুলি ছুড়লে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এসময় ১৭ জন পুলিশ ও ২ জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ২ আনসার সদস্যকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ৭ পুলিশ সদস্যকে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাকি ১০ পুলিশ সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।’
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে এলাকাবাসীর সাথে লাগা এ সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছে। তাদের দাবি নিহতের সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ৫০ জন।
স্থানীয় বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটির আহবায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বাংলামেইলকে বলেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ জনগনের উপর গুলি চালিয়েছে। এতে চারজন নিহতসহ আহত হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক গ্রামবাসী। এদের মধ্যে অনেকর অবস্থা আশংকাজনক।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর উপজেলার গণ্ডামারার উপকূলীয় এলাকায় এস. আলম গ্রুপ ও চাইনা সেফকো কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে গত কয়েক মাস ধরে এলাকাসাীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাধা প্রদান করছে স্থানীয় জনতা। প্রকল্পের পক্ষে-বিপক্ষে দুইটি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। একটি পক্ষ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিরোধে মিছিল মিটিং, সভা, সমাবেশের মাধ্যমে জোর প্রতিবাদ চালাচ্ছে। ওই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলী আর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে আছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম মাষ্টার। এর আগেও গত ১৮ মার্চ এনিয়ে দু’পক্ষের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। পরে সেখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে নিয়ে পুলিশ বিদ্যুৎ ক্দ্রে বিরোধী মিছিলে গুলি চালিয়ে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে হাজী পাড়া স্কুল মাঠে সমাবেশের ডাক দেন প্রতিরোধ কমিটি। আর একই সময়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে সমাবেশের ডাক দেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল আলম। সেকারণে পুলিশ সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। তবে বিকেলে ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করতে গেলে প্রতিরোধ কমিটির সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষের লোকজনও সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
. . . . . . . . .