কুলাউড়ায় ফুফুর দায়ের কোপে প্রাণ গেলো শিশুর!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মার্চ ২০১৬, ৭:০৭ অপরাহ্ণকুলাউড়া প্রতিনিধি:
কুলাউড়ায় ফুফুর দায়ের কোপে প্রাণ গেলো ৬ বছরের শিশু কিশোর মাছুম নামে এক ভাইপো’র। সে উপজেলার ভূকশীমইল ইউনিয়নের কুরবানপুর গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ঘাতক ফুফু শেলী বেগমকে (২৬) আটক করেছে পুলিশ। শেলী বেগমের মা মুজিরুন্নেছার দাবি তাঁর মেয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত। তবে নিহত মাছুমের মা জেবিন বেগমের দাবি শেলী মানসিক রোগী নয় এবং সম্পত্তির লোভে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৯ মার্চ (মঙ্গলবার) দুপুর ১টার দিকে মাছুম তার দাদির ঘরে ফুফু শেলি বেগমের এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে মারাত্মক আহত হয়। বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে প্রেরণ করেন। সিলেটে যাওয়ার পথে প্রচুর রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। পরে রাত ৯টায় পুলিশ মাছুমের লাশ ও তার ফুফু শেলী বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয়রা আরও জানায়, মাছুমের পিতা মাসুক মিয়া দুইটি বিয়ে করেছেন। সামেলা বেগম তার প্রথম স্ত্রী ও মাছুমের মা জেবিন বেগম দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রীর ঘরে দু’টি সন্তান রয়েছে। মাসুক মিয়ার দুই স্ত্রী আলাদা ঘরে থাকতেন। তার মা মুজিরুন্নেছা মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে নিয়ে আলাদা থাকতেন। ঘটনার পর শেলীর স্বামী লায়েব পালিয়ে যান।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে হাসপাতালে ভর্তি মাছুমের মা জেবিন বেগম জানান, এবছর তার ছেলে মাছুম স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি তাঁর ছেলের গোসলের জন্য রান্না ঘরে পানি গরম করছিলেন। এসময় তাঁর শ্বাশুড়ি মাছুমকে চিরুনি নিয়ে যাওয়ার জন্য ডাক দেন। চিরুনি নিয়ে দাদির ঘরে ঢোকার পর তার ফুফু দা দিয়ে মাছুমের মাথা ও মুখে কোপ দেন। চিৎকার শুনে তিনি দৌড়ে এসে ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ননদ (শেলী) মানসিক রোগী নয়। বিয়ের পর থেকে শেলী শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে এসে বাপের বাড়িতে স্বামী সন্তানসহ মায়ের সাথে আলাদা ঘরে থাকেন। বাপের বাড়ি সম্পত্তির লোভে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
সরেজমিনে আজ বুধবার সকালে মাছুমের বাড়ি গেলে তার দাদি মুজিরুন্নেছা বলেন, তার ছেলের দুই বউ আলাদা থাকেন এবং তিনি তার মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে নিয়ে থাকেন। মঙ্গলবার দুপুরে তার ঘরে তাঁর দুই নাতি মাছুম ও নাইম খেলছিল এবং তিনি ঘরের পেছনে কাজ করছিলেন। এসময় চিৎকার শুনে ঘরে এসে দেখেন তার মেয়ে শেলীর হাতে দা ও তার নাতি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ মাস ধরে তার মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাড়ির কয়েকজন নারী জানান, শেলী পাগল বলে তারা জানতেন না। আট বছর আগে পাশ্ববর্তী মহেশগৌরী গ্রামের লায়েব মিয়ার সাথে শেলীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সাথে বনিবনা না হওয়ায় এবং বাপের বাড়ির সম্পত্তির লোভে স্বামীকে নিয়ে মায়ের সাথে বসবাস করে আসছেন। ঘটনার দিন সকালে শেলী তার ভাই বাপের সব সম্পত্তি আত্মসাত করবে বলে চিৎকার করতে থাকেন।
মাছুমের বাবা মাসুক মিয়া জানান, ঘটনার সময় বোরো ধান কাটার জন্য হাওরে ছিলাম। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়াঝাটি হতো। এ নিয়ে কয়েকবার বিচারও হয়েছে।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সাইফুল আলম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিহত মাছুমের মাথা, মুখ ও হাতে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শেলী বেগমকে আটক করা হয়েছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।
. . . . . . . . .