রিজার্ভ চুরিতে দেশীয় পরিকল্পনার আলামত মিলছে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মার্চ ২০১৬, ১০:২৩ পূর্বাহ্ণযুক্তরাষ্ট্রে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশে এই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তকাজ শুরুর পর গত দুইদিনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও আলামত পেয়েছে। ডলার স্থানাস্তরের সময় বাংলাদেশের কাঁচপুর উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকেই তথ্য গেছে বলে নিশ্চিত তদন্তকারীরা।
এছাড়া প্রাথমিক তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিলিং শাখার সিসিটিভি যথাস্থানে না থাকা, সার্ভার ব্যবহারকারীদের তথ্য না থাকাসহ বেশকিছু বিষয়ে গড়মিল ধরা পড়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক বা একাধিক কর্মকর্তা রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরাসরি জতিড় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বাংলামেইলকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি চারটি দেশের নেটওয়ার্কে ঘটেছে। এখানে তিন ধরনের অপরাধ, অর্থাৎ- অর্থ জালিয়াতি, সাইবার ক্রাইম এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ। প্রথমেই বাংলাদেশে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। বাংলাদেশির সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়া গেলে তার সূত্র ধরে তদন্ত এগুবে। পাশাপাশি ইন্টারপুলের সহায়তায় ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কার পুলিশের সঙ্গে যৌথ তদন্ত শুরু হবে। মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইকে কিছু তথ্য দিয়ে সহায়তা চাওয়া হবে। এ জন্য আলামত ও তথ্য গুছিয়ে নিচ্ছেন তদন্তকারী দল।
সংশ্লিষ্টরা সূত্রগুলো জানায়, সিআইডি এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার তদন্ত করলেও এই কাজে সহায়তা করছে পুলিশেরই চারটি দপ্তর। এছাড়া ছায়াতদন্ত করছে র্যাবের সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ দলও। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংরক্ষণ সংশ্লিষ্ট এক ডজন কমকর্তাকে অনানুষ্ঠানিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডির দল। গত দু’দিন ধরে ব্যাংকে গিয়ে বেশকিছু আলামত জব্দ করেন তারা।
তদন্ত তদারকি দলের প্রধান সিআইডির উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-এইচআরএম) সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা আজও (গতকাল) বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছি। ফরেন এক্সচেঞ্জ এবং সিকিউরিটি সার্ভিল্যান্স ইকুইপমেন্ট আমরা জব্দ করেছি। পেমেন্টে সিস্টেম ডিপার্টম্যান্ট (পিএসডি) ও অডিট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের ব্যাংকে টাকা হস্তান্তরের জন্য দেয়া তথ্যের মধ্যে কাঁচপুরসহ কয়েকটি দেশীয় উন্নয়ন প্রকল্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এখান থেকে তথ্য গেছে বলে নিশ্চিত আমরা। তারা কারা সেটা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি ইন্টারপুলের সহায়তা নিয়ে শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে যারা এবং যেসব অ্যাকাউন্টে অর্থ সরানো হয়েছে সে ব্যাপারে তদন্ত করা হবে।’
গত বুধবার প্রথম দফায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গিয়ে আলামত সংগ্রহের পর বৃহস্পতিবার বিকেলেও আবার সেখানে যান সিআইডির আট সদস্যের তদন্ত দল। গত দুইদিন ফরেক্স রিজার্ভ শাখা, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেট বিভাগ, ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড সিকিউরিটি ও পেমেন্ট শাখার কয়েকজন কর্মকর্তাকে আলাদাভাবে জেরা করা হয়েছে। এসব বিভাগ থেকে আলামতও জব্দ করা হয়।
এরপর ডিআইজি সাইফুল আলম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘এফবিআইয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা চালাবো। এছাড়া ইন্টারপোলের সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগ করা গভর্নর আতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সাইফুল আলম বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে আতিউর রহমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির জন্য অপরাধীরা কৌশলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলো বেছে নেয়। ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফটে ব্যবহৃত সফটওয়্যার ঠিকমতো কাজ করছিল না। ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল শুক্রবার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ওইদিন স্বয়ংক্রিয় প্রিন্ট না পেয়ে সেটি প্রিন্টারের সমস্যা মনে করে এড়িয়ে যান। পরদিন শনিবারও (৬ ফেব্রুয়ারি) সফটওয়্যার চালু ও প্রিন্ট বের করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে জানানোর চেষ্টা করা হয় ৬ ফেব্রুয়ারি। শনি ও রোববার যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক নিউইয়র্কে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। ৮ ফেব্রুয়ারি সুইফট শাখার সফটওয়্যারটি চালুর পর নিশ্চিত হন লেনদেন বন্ধ করার আগে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে ১০১ মিলিয়ন ইউএস ডলার চুরি হয়ে যায়। এতে পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে তা পুরোপুরি জানে অপরাধীরা। . . . . . . . . .