বঙ্গবন্ধুকে এমপি লতিফের সম্মান না বিকৃতি?
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১১:০২ পূর্বাহ্ণবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ছাপিয়ে ফের বিতর্কে চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সরকার দলীয় সাংসদ এমএ লতিফ। সম্প্রতি সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার কয়েকটি ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বির্তক-সমালোচনা।
বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারীর দাবি, এমএ লতিফ বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দেখানোর নামে ফটোশপের মাধ্যমে নিজের ছবির ওপর এডিট করে শুধু বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডলটি বসিয়ে দিয়েছেন। এটি বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অপমান করার সামিল। কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিচারেরও দাবি করেছেন।
তবে এমএ লতিফ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, হয়তো তার নির্বাচনীয় এলাকার কেউ এই ধরনের কাজ করতেও পারেন, আবার অভিযোগটি সত্য নাও হতে পারে।
তবে যে ছবি বঙ্গবন্ধুর বলে ব্যানার ফেস্টুন ছাপিয়ে তোষামোদ করতে চেয়েছেন এমএ লতিফ, সেই ছবি নিয়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। বিশেষ করে ছবিতে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানোর স্টাইল, পরিহিত পাঞ্জাবি ও পাজামা এবং জুতা বির্তকের মাত্রাকে উসকে দিয়েছে। বিতর্কিত ছবিগুলো নগরীর বিশেষ করে বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড এলাকায় শোভা পাচ্ছে।
গুগলের সাহায্য নিয়ে ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেভাবে পোস্টারের ‘বঙ্গবন্ধু’ বুকটান করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেভাবে দাঁড়ানোর কোনো ছবিই পাওয়া যায়নি। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর পরনে যে পাজামা সেটির নিচে বর্ডার দেয়া। কিন্তু এ ধরনের বর্ডার দেয়া চিকন পাজামা বঙ্গবন্ধু কখনোই পরতেন না। তিনি সব সময়ই ঢিলেঢালা পাজামা পরতেন। শেখ মুজিবুর রহমানের পরিহিত পাঞ্জাবিগুলো অনেকটা শর্ট পাঞ্জাবির মতো। এমপি লতিফের ছবিতে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর পরনের পাঞ্জাবিটি কিন্তু অনেক লম্বা।
এছাড়া তিনি সব সময় চামড়ার জুতা পরতেন আর ছবিতে ব্যবহৃত জুতায় দেখা যায়, তিনি স্পোর্টস কেডস পরেছেন।
সব মিলিয়ে অনেকটাই প্রমাণিত, ফটোশপের মাধ্যমে নিজের কিংবা অন্য কারও ছবিতে বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল বসিয়ে দিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ছাপিয়েছেন বিতর্কিত সাংসদ এমএ লতিফ।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে বিতর্ক আর সমালোচনা। কামরুল হাসান বাদল নামে একজন সাংসদ লতিফের প্রকাশিত একটি ফেস্টুনের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এ ছবিটি বঙ্গবন্ধুর বলে বিশ্বাস হচ্ছে না। পোশাক ও দাঁড়ানো এই ভঙ্গি বঙ্গবন্ধুর নয়। জাতির জনকের মর্যাদা রক্ষায় কেউ কি আছেন যিনি এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন?’
তার এই ছবিতে বাপ্পি সাহা লিখেছেন, ‘ঠিক বলেছেন এটা বডির সাথে মাথা লাগিয়ে এডিট করেছে।’ সালাউদ্দিন সাকিব লিখিছেন, ‘লতিফ এমপি আওয়ামী লীগের হতে পারলেন না! ধিক্কার।’ মহিউদ্দিন আজাদ সুমন লিখেছেন, ‘…বেয়াদবির একটি সীমা থাকা উচিত।’ সাবের শাহা লিখেছেন, ‘অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকেই তো অপমান করলেন! ফটোশপ যে এখন সবাই বুঝে এটা খেয়াল রাখা উচিত ছিল।’
রাজন সাহা লিখেছেন, ‘শুনতাম অন্তরে মুজিব, দেখলাম দেহেতেও মুজিব।’ জয়নাল আবেদীন ফরহাদ লিখেছেন, ‘নষ্ট রাজনীতির ভণ্ড ব্যক্তি।’ সাবিনা পারভীন লিনা লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা তার মাথা কাটবে, কোট জোড়া লাগাবে তার আর্দশকে ছিন্ন ভিন্ন করবে, এমনি হবে। হায় দুর্ভাগা দেশ।’
আবু সৈয়দ লিখেছেন, ‘… জামাতি এমপির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে এ ধরনের আরো জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে না।’ অনিন্দ্য টিটু লিখেছেন, ‘শরীরের গড়ন আর দাঁড়ানোর ধরন দেখে মনে হচ্ছে একজন আলোচিত এমপির।’ পাশা মোস্তাফা কামাল লিখেছেন, ‘বিষয়টি গোয়েন্দা তদন্তের দাবি রাখে। এটা বঙ্গবন্ধুকে অর্মযাদা হয়েছে।’
শোয়েব নাঈম লিখেছেন, ‘সাংসদ লতিফের ছবি এটা, শুধু গলাটা ফটোশপিং করে বঙ্গবন্ধুর লাগানো হয়েছে। আগ্রাবাদে এই ভঙ্গিতে এই পোশাকে চেম্বারের কাছে অনেকদিন ঝুলানো এই ছবি দেখেছি। এই লতিফের সাথে এখানো পাকিস্তানি গংদের আঁতাত আছে। এদের জঘন্য কাজ এই লতিফের মতো হাইব্রিড আওয়ামী লীগের দ্বারাই সম্ভব।’ নুরুল ইসলাম সবুজ লিখেছেন, ‘আচ্ছা এমএ লতিফ সাহেক কি আমাদেরকে এতোটাই বোকা মনে করেন যে, আমরা আমাদের বঙ্গবন্ধুকেই চিনতে পারবো না, ছি…।’
নুরুল আজিম রনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগে হঠাৎ যোগদানকারী সাংসদ এমএ লফিতের নানা কর্মকাণ্ডে আমরা ছাত্রলীগ রীতিমতো বিব্রত। ২০০৯ সালে শিবিরের মহানগর অফিসে অভিযান চালিয়ে পুলিশ শিবিরের যে কয়েকজন অর্থনৈতিক দাতার নাম পেয়েছিল সেখানে এমএ লতিফ অন্যতম। এছাড়া বন্দরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনকে শাসানোসহ নানা কারণে তার বিরুদ্ধে বদনাম রয়েছে। সম্প্রতি তিনি নিজের ছবিতে বঙ্গবন্ধুর মাথা বসিয়ে দিয়ে মসকরা শুরু করেছেন। এটা নিয়ে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মিজানুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তাকে নানভাবে হুমকি দমকি দেয়া হচ্ছে।’
এর আগেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা সালাম না দেয়ায় বিমানেই তাকে চরম নাজেহাল করেছিলেন এমএ লতিফ। তারও আগে ২০০৮ সালে বন্দরের এক কর্মকর্তাকে শাসিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া জামায়াত ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত এক এগারোর পট পরিবর্তনে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করা লতিফ জামায়াতের সহযোগী সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতির ব্যবস্থাপনায় নিজের ছেলেসহ বেশ কয়েকজন বর-কনেকে নিয়ে যৌতুকবিহীন বিয়ের অনুষ্ঠান করেছিলেন। সেখানে তিনি যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ এমএ লতিফ বাংলামেইলকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি এডিট করে আমার ছবিতে তার মাথা বসিয়ে দিলে আমার বেনিফিট কী? এই কাজটি আমি কেন করতে যাবো? আমার উদ্দেশ্য তো বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, তাকে ছোট করা নয়। এখন কেউ যদি ফেসুবকে এসব ছবি নিয়ে বিতর্ক ছড়াতে চায় তাহলে আমার করার কি আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে এমএ লতিফ বলেন, ‘আমার নির্বাচনী আসনে আমার নামে অনেকেই ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে থাকেন। হয়তো তারাই ফটোশপের মাধ্যমে এই ধরনের কাজ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কারা করেছে আমি কীভাবে জানবো। তবে একটা কথা বলি বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আজীবন থাকবে। এগুলো হয়তো কেউ করলেও করতে পারে, আবার অভিযোগটিও সত্য নাও হতে পারে।’
বাংলামেইল
. . . . . . . . .