আ. লীগের নাম ভাঙাচ্ছে দুইশ’রও বেশি ভুঁইফোড় সংগঠন
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১১:৩০ পূর্বাহ্ণক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং তার প্রতিষ্ঠাতাকালীন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ব্যবহার করে দেশের যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে দুইশটিরও বেশি ভুঁইফোড় সংগঠন। ভুঁইফোড় এসব সংগঠন এবং এর নেতারা নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বা কখনো কখনো সমর্থক সংগঠন পরিচয় দিচ্ছে। নামের আগে-পরে আওয়ামী, লীগ, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, জননেত্রী, শেখ হাসিনা ইত্যাদি শব্দ জুড়ে দেয়া এসব সংগঠনের নেই কোনো নিবন্ধন ও আওয়ামী লীগের অনুমোদনও। অথচ ক্ষমতার তকমা লাগিয়ে এসব সংগঠনের নেতারা এমন সব কর্ম করে বেড়াচ্ছে, যা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ এবং ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। এসব সংগঠনের কর্মকাণ্ডের ফলে চরম ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে দলটি। তাই সম্প্রতি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের নামধাম প্রকাশ করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে রাজনৈতিক মহলকে।
আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম হয়। আবার ক্ষমতা থেকে চলে গেলে এসব সংগঠন হারিয়ে যায়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হচ্ছে- মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুব লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতি লীগ এবং যুব মহিলা লীগ। আর ভ্রাতৃপতিম সংগঠন হিসেবে রয়েছে শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ভুঁইফোড় এসব সংগঠনের গঠনতন্ত্র, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কিংবা নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। একই নামে গড়ে উঠেছে একাধিক সংগঠনও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিদ্বন্দ্বের জের ধরে একটু নাম ঘুরিয়ে গড়ে তোলা হয় আরেকটি নতুন সংগঠন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এরা ভিজিটিং কার্ড ছাপিয়ে ব্যবহার করছে চাঁদাবাজি ও তদবির বাণিজ্যে। কোথাও কোথাও মন্ত্রী-এমপিদের আশীর্বাদ থাকায় এদের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ত্রাণ ও দূর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমসহ বর্তমান সরকারের প্রায় ডজন খানেক মন্ত্রী-এমপি নিয়মিতই অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন এসব সংগঠনে। ফলে দিনদিন পোয়াবারো অবস্থা হয়েছে ভুঁইফোড় সংগঠন ও এর নেতাদের। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে এদের দেখা না গেলেও ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে এরাই সবচেয়ে বেশি তৎপর। সভা সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের নামে সরকারের চিন্তাধারা, আদর্শ, উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের নামে নানা ধান্দা ও ফিকিরে বেশি তৎপর দেখা যায় এসব সংগঠনের নেতাদের।
বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও ১৫ আগস্ট উপলক্ষে এদের তৎপরতা বেশি চোখে পড়ে। এছাড়া দেশের নানা ইস্যুতে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের নামে বিশিষ্ট অতিথিদের নাম ব্যবহার করে স্পন্সরের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চলে ব্যাপক চাঁদাবাজি।
সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমের নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মন্ত্রী নিজেই বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানার বিরুদ্ধে মামলা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদাবাজির ব্যবসা ভাল হওয়ায় এক ব্যক্তিই দু-তিনটি সংগঠন খুলে বসেছেন। একই ইস্যুতে একেক দিন একেক সংগঠনের নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা। এ রকম ৪৫টি ভুঁইফোড় সংগঠন একত্রিত করে জোট গঠন করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুল হক সবুজ।
আওয়ামী সমর্থক জোট নাম করে একত্রিত করা সংগঠনগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু নাগরিক পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজীবী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তুহারা লীগ, বাংলাদেশ হকার্স লীগ, বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী পেশাজীবী লীগ, বাংলাদেশ লোড-আনলোড শমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ আওয়ামী সমবায় লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা লীগ, বাংলাদেশ মহিলা সমবায় লীগ, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফ্রন্ট, শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, মুজিব সেনা পরিষদ, জননেত্রী সৈনিক লীগ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী হকার্স লীগ, সজিব ওয়াজেদ জয় পরিষদ, শেখ জামাল পরিষদ, বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ পরিষদ, ডিজিটাল সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, ঢাকা বিভাগ শ্রমিক লীগ, জাতীয় রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক লীগ, জয় বাংলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ।
অপর দিকে এরকম আরো প্রায় ১০/১২ টি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কৃষক লীগের বহিষ্কৃত নেতা এমএ করিম ও চিত্তরঞ্জন দাস। এমএ করিমের পকেট সংগঠন হিসেবে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে ‘দেশরত্ন সেবক সংঘ’ নামে একটি সংগঠন। যার প্রথম অনুষ্ঠান করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এর কয়েকদিন পরে এমএ করিম আরেক সংগঠন নিয়ে হাজির হন যার নাম ‘দেশরত্ন সেবক পরিষদ।’
কথিত সবুজ ও এম এ করিমের মত আরেক নাম হুমায়ুন কবির মিজি। যার রয়েছে ৪-৫টি সংগঠন। তবে বঙ্গবন্ধু একাডেমী নামের সংগঠনের অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত প্রধান অতিথি হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। যিনি প্রতি অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর কোনো দোকান খোলা আছে না কি? খোলা থাকলে তো ক্যামেরা কম হয়।’
বঙ্গবন্ধু একাডেমী ছাড়াও মিজি নামের এই ব্যক্তির অন্য যে সংগঠন রয়েছে সেগুলো হলো- নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী ও মুজিব হব।
সম্প্রতি নতুন আরো কিছু সংগঠন গজে উঠেছে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর নাম ভাঙিয়ে। ব্যারিস্টার জাকির আহমেদ নামে আরো এক ব্যক্তি এরকম কয়েকটি সংগঠনের মালিক। তার সংগঠনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, মম্মিলিত তরুণ পেশাজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরিষদ রয়েছে। অ্যাড. জাহাঙ্গীর খান নামের আরেক ব্যক্তি পরিচালনা করেন, আমরা নগরবাসী, আমরা দেশবাসী পরিষদ নামের সংগঠন।
এছাড়া আরও রয়েছে, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমী, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক তরুণ লীগ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য লীগ, বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরষিদ, বঙ্গবন্ধু মহিলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক লীগ, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু জাদু শিল্পী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু মানবকল্যাণ পরিষদ, বঙ্গবন্ধু নাট্যগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু সঙ্গীত একাডেমী, বঙ্গবন্ধু হারবাল লীগ, বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথি লীগ, বঙ্গবন্ধু গণতান্ত্রিক লীগ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা পরিষদ, আওয়ামী মোটর চালক লীগ, আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদ, আওয়ামী তরুণ লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, প্রচার লীগ, আওয়ামী প্রচার লীগ, আওয়ামী অভিভাবক লীগ, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদ, শিশু লীগ, রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমী, শেখ রাসেল শিশু পরিষদ, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সমাজ কল্যাণ, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা ও গণমুক্তি আন্দোলন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা বাহিনী, প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধা, মৎসজীবী লীগ, রিকশা মালিক লীগ, বাস্তুহারা লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্মচারী লীগ, নৌকার নতুন প্রজন্ম লীগ, ’৭৫-এর ঘাতক নির্মূল কমিটি, ২১ আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, জননেত্রী পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, পরিবর্তন ফাউন্ডেশন, সিএনআরএস, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, সোনার বাংলা গঠন পরিষদ, সম্মিলিত যুব-পেশাজীবী পরিষদ, পরিবহন শ্রমিক লীগ, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি প্রতিরোধ কমিটি, প্রজন্ম ’৭১, নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, যুব সংঘ, অরোরা ফাউন্ডেশন, ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া ফাউন্ডেশন, চেতনায় মুজিব ইত্যাদি। এছাড়া চলতি বছরের কয়েক মাসে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে আওয়ামী লীগ সমর্থক জোট।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নানা ইস্যুতে এসব সংগঠন প্রতিদিন সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করছে। মিডিয়া-কাভারেজ প্রাপ্তির কৌশল হিসাবে প্রধান অতিথি হিসেবে হাজির করছে এমপি, মন্ত্রীদের বা দলের কোনো প্রভাবশালী নেতাকে।
এসব সংগঠন ও এর নেতাদের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তারা নিজেদের আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক দাবি করে চাঁদাবাজি করে এবং সচিবালয়সহ অন্যান্য সরকারি অফিসে তদবিরের কাজ করে। টেন্ডারবাজি ছাড়াও নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত এরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব সংগঠনের বেশিরভাগ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা হন ভাড়া করা। এজন্য ঘুরেফিরে একই লোকদের দেখা অনুষ্ঠানগুলোতে। একইসঙ্গে সহযোগী সংগঠনের নেতা ও ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিয়ে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বা সভাপতিত্ব করানোর অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে।
বঙ্গবন্ধু, দেশরত্ন ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে গড়ে উঠেছে একাধিক সংগঠন। নিজেদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে নানা সুবিধা আদায় করেন বলেও এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ নাম ব্যবহার করতে হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) থেকে অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ (চারটি গ্রুপ), আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান (দুটি গ্রুপ), মুক্তিযোদ্ধা লীগ (দুটি গ্রুপ), মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগসহ আরও বেশকিছু সংগঠন রয়েছে যাদের অনেকেই অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এদের মধ্যে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এক অংশের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
এসব সংগঠনের অনেককেই মওসুমি চাঁদাবাজ হিসাবে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, ‘প্যাডসর্বস্ব এসব রাজনৈতিক দল এখনই নিয়ন্ত্রণ না করা হলে আওয়ামী লীগের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব দলের নেতাদের কোনো দিন রাজপথে দেখা যায়নি। শুধু স্বার্থসিদ্ধির জন্য এ জাতীয় সংগঠন জন্ম দেয়। একসময় হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এদের খোঁজ পাওয়া যায় না।’
নামসর্বস্ব ৪৫ টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এক জোটের আহ্বায়ক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল হক সবুজ বাংলামেইলকে বলেন, ‘রাজপথে থাকার জন্যই এই জোট করা হয়েছে। তবে অনেক সংগঠনের নেতারা চাঁদাবাজ, ধান্ধাবাজ, দালাল, তদবিরবাজ, চিটার-বাটপার, দান্দাল। তাদের কাজই হচ্ছে এধরনের সংগঠন খুলে এগুলো করা। আমাদের জোটে ৫০টির ও বেশি সংগঠন ছিল, এরকম অভিযোগ পাওয়ার কারণে তাদের জোট থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের জোটের সদস্য ৪৫টি সংগঠন।’
১৬/এ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউয়ে এ জোটের অফিস দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কয়েকশ’ সংগঠন গড়ে উঠেছে যাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ বলে আমরা তাদের জোটে নিচ্ছি না। আমাদের কর্মকাণ্ড হচ্ছে রাজপথকেন্দ্রিক। তাই আমাদের ও তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ভিন্ন। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নাম অক্ষত রাখা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।’
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বাংলামেইলকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৫(১) ধারা অনুযায়ী দলের সহযোগী এবং ভ্রাতৃপতিম সংগঠনের নাম সবারই জানা। এর বাইরে আমাদের আর কোনো সংগঠন নেই। কেউ যদি বঙ্গবন্ধু এবং দলের নাম ব্যবহার করে বিতর্কিত সংগঠন তৈরি করে এর জন্য আওয়ামী লীগ কোনো জবাবদিহি করবে না।’
. . . . . . . . .