জাতীয় পার্টিকে নিয়ে রাজনৈতিক গেইমে সরকার
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ৯:২৫ অপরাহ্ণ‘আবার ভাঙছে জাতীয় পার্টি, ভেঙে যাচ্ছে জাপা, মন্ত্রিত্ব ছাড়ছে জাতীয় পার্টি’ এ সব এখন সংবাদপত্রের নিয়মিত হেডলাইন। তবে জাপার সরকার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ছাগল-খাশি মানত করা বিএনপি নেতারা খোশমেজাজে থাকলেও অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বাংলাদেশের রাজনীতির প্রবীণ খেলোয়ার আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখে এনিয়ে কোনো টু-শব্দটি পর্যন্ত নেই। জাপা নেতারা এই সরকার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি, কিছুক্ষণ পরে যাচ্ছি না। এসব নিয়ে চলছে তাদের দফায় দফায় জরুরি বৈঠক।
সম্প্রতি জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত রংপুরের একটি অনুষ্ঠানে দলটির চেয়ারম্যান জেনারেল এইচ এম এরশাদ তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান মনোনীত করায় বেকে বসেন তারই বেগম বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং দলটির প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য রওশন এরশাদ।
এরশাদ সাহেবের এই ব্যবস্থায় ক্ষিপ্ত হয়ে একটি জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে দলটির সরকারের সুবিধা ভোগকারী নেতারা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনোনীত করে রওশন এরশাদকে। এরপর দিনই এরশাদ তাঁর রংপুর সফরের মাঝ পথে ঢাকা ফিরে বানানীতে জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি পার্টিতে রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিত জিয়াউদ্দিন বাবুলকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার অজুহাতে তাকে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বলে প্রেসিডিয়ামের সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে আবারও মহাসচিব পদে নিয়োগ দেন।
সেই সময় তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন আমরা আমাদের অতিত্বের স্বার্থে এই সরকারের মন্ত্রিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। ওইদিনই জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকে এরশাদ এই প্রস্তাব তুলে অন্য সদস্য তা মনে নেন। কিন্তু এরশাদের এই সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশনসহ দলীয় মন্ত্রীরা। এদিকে গত ২৮জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ।
ঐদিনই এরশাদ গণমাধ্যমকে জানান রোববার প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে তিনি জরুরী বৈঠক করবেন। সেই অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি রোববার জাতীয় পার্টির বনানীর কার্যালয়ে একটি বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। এতে রওশনপন্থী হিসেবে পরিচিতরা ছাড়া দলের প্রেসিডিয়ামের ৩৭ জন সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২৪জন। অনউপস্থিত ছিলেন রওশন এরশাদ নিজেও।
দলটির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের সরকার থেকে বেরিয়ে আসা প্রসঙ্গে বলেন, এটা পার্টির চেয়ারম্যানের ব্যাপার, তিনিই পার্টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখেন। আরো তিনজন সদস্যকে মন্ত্রী করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এদিকে নামপ্রকাশ নাকরা শর্তে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, জাতীয় পার্টির এই ধরনের নাকট অতীতে করে লাভ বান হয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার দাবার গুটির মতোই জাপাকে ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, সরকাল চাচ্ছে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলে নিতে সেই জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে তারা। অপর দিকে বিএনপি ও তার নেতাকর্মীদের দৃষ্টি জাপার দিকে রেখে অত্যন্ত কৌশলের খালেদা জিয়া জেলে নেয়ার চূড়ান্ত বন্দবস্ত করে ফেলতে চায় সরকার। এই জন্য জাতীয় পার্টিকেই ব্যবহার করছে সরকার। যেমনি এরশাদ বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে করেছেন।
অবশ্য ওই নির্বাচনে যাবো না, যাচ্ছি না বলে অবশেষে গেলেন এবং প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দূত হিসেবেও বিদেশ সরকার করলেন। তার বেগম সাহেবাও সরকারের বিরোধী দলীয় নেত্রী হলেন। দলের কয়েকজন আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তি হলেন সরকারের মন্ত্রী। সেই সঙ্গে পার্টিকে চাঙ্গা করতে নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচন করেছেন। যদিও সেখানে তাদের বেশির ভাগ পরাজিত হয়েছেন।অনেকের মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
তবে জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগের সরকারের ফাঁদে ঢুকে আরেকটি ভাঙ্গনের মুখোমুখি হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এজন্য তারা যেমন সংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়েছে তেমনি হারিয়েছে পূর্বের জনপ্রিয়তা। অপরদিকে জাপাকে বলি দিয়ে বিএনপিকে একঘরে করে এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত জামায়াতকে নিশ্চিন্ন করে দেশের সর্বত্র একক কতৃত্ব কায়েম করেছে রাজনৈতিক গেইম খেলায় খুবেই অভিজ্ঞ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। . . . . . . . . .