স্থায়ী কমিটিতে মাঝবয়সী ও তরুণ নেতাদের আনা দরকার —অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ
ছয় বছরেও কাউন্সিল হয়নি বিএনপির!দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পরপর বিএনপির সম্মেলন (কাউন্সিল) করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করার কথা থাকলেও ছয় বছর ধরে দলটির কাউন্সিল হচ্ছে না। কাউন্সিল করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত দলের সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
বিএনপির নেতারা অবশ্য বলছেন, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে কাউন্সিল করা যাচ্ছে না। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ না হওয়ায় আগামী মার্চ-এপ্রিলের আগে বড় পরিসরে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার খুব একটা সুযোগ নেই। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা অবশ্য জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে সীমিত পরিসরে হলেও কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের পক্ষে।
কেন্দ্রীয় সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২০১০-১১ সাল থেকে প্রতিনিয়ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দলের মহাসচিবকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এখনো কারাগারে। তিনি নিজেও প্রায় এক বছর কারাগারে ছিলেন। কাউন্সিল করার জন্য যে পরিবেশ দরকার তা নেই। তবে দমন-পীড়নের মধ্যেও তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। অনেক জায়গায় সম্মেলন হয়েছে। তৃণমূলে সব সম্মেলন শেষ হলে সুস্থ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে যথাসময়ে কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে।
কাউন্সিল না হওয়ায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব পদে কেউ নেই। ২০১১ সালের মার্চে দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা গেলে ওই পদে নতুন করে কাউকে আনা হয়নি। জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তখন থেকেই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। ওই পদটিও এখন ফাঁকা। অবশ্য বিএনপির চেয়ারপারসন গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতাবলে চাইলে পদগুলো পূরণ করতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বিএনপির জন্য সময় এসেছে সবাই মিলে একসঙ্গে বসে দলটিকে শক্তিশালী করা। তিনি মনে করেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনগুলো পুনর্গঠন করা দরকার। তবে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দলের প্রবীণ নেতাদের সম্মানজনক জায়গায় রেখে স্থায়ী কমিটিতে মাঝ বয়সী ও তরুণ নেতাদের আনা দরকার।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত কমিটি করার কথা বলা আছে। বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এই কমিটি নির্বাচিত হবে তিন বছরের জন্য। সে হিসাবে গত ডিসেম্বরের মধ্যে দলটির আরও দুটি কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটিও হয়নি। ২০০৯ সালের পর ২০১২-তে দলের কাউন্সিল হওয়ার কথা। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই বছরের মার্চে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। কাউন্সিল করতে না পারার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি তাদের ৭৪টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন পর্যন্ত রাঙামাটি, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সৈয়দপুরে সম্মেলন হয়েছে। মেহেরপুর জেলার নেতারা কেন্দ্রকে না জানিয়ে নিজেরা সম্মেলন করেছেন। সম্মেলন করার পর্যায়ে আছে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, সিলেট জেলা ও মহানগর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, নাটোর, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও লক্ষ্মীপুর জেলা। ১০ শতাংশ জেলায় এখন পর্যন্ত পুনর্গঠনের তেমন কোনো কাজ হয়নি।
জানতে চাইলে পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, নির্বাচন শেষ হয়েছে। তাঁরা আবার দ্রুত পুনর্গঠনের কাজ শুরু করবেন। পৌর নির্বাচনের চিত্র তাঁদের দল পুনর্গঠন করার তাগিদ দিয়েছে। তাঁরা সুচারুভাবে দল পুনর্গঠন করতে চান।
প্রায় এক বছর পর গত ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, তাতে দলের কাউন্সিল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা হয় পৌর নির্বাচন নিয়ে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মূল আলোচনা হয়েছে নির্বাচন নিয়ে। কাউন্সিল নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না। তবে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, কাউন্সিল হতে হবে। এর মধ্যে দুটি কাউন্সিলের সময় পার হয়ে গেছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে দলে কিছু পরিবর্তন ও তরুণদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হলে দল আরও গতিশীল হবে।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা চান কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে। বিশেষ করে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য বয়স্ক ও অসুস্থ। স্থায়ী কমিটির চার থেকে পাঁচটি পদে পরিবর্তন দরকার। কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকে পদে থেকেও নিষ্ক্রিয়। এ অবস্থায় আবার আন্দোলনে যাওয়ার আগে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজানো দরকার।
. . . . . . . . .