কাজী আরেফের ৩ হত্যাকারীর ফাঁসি কার্যকর

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:১২ পূর্বাহ্ণমুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ ও কুষ্টিয়া জেলা জাসদের ৪ নেতার তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১১টা ৩ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কুর্শা গ্রামের উম্মত মণ্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন এবং একই উপজেলার রাজনগর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে সাফায়েত হোসেন হাবিব। রাত পৌনে ১২টায় রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে খুনি রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ও আনোয়ারের পরিবার শেষ সাক্ষাৎ করতে তাদের স্বজনরা কারাগারে আসেন। ঝন্টুর সঙ্গে দেখা করেন তার ভাগ্নে খাইরুল ইসালাম, চাচাতো ভাই আবুল কাশেম। আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন তার ভাগ্নে সোহেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাবিবের সঙ্গে কেউ দেখা করেননি। কিন্তু হাবিবের লাশ নিতে তার ভাই হাসিবুর রহমান আসবেন বলে কারাগার সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
তাদের লাশ শুক্রবার সকাল ৭টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হস্তান্তর করা হবে বলে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, দেরিতে হলেও দোষীদের সাজা কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জাসদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও যশোর জেলা শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম। কারাগারের নিরাপত্তার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই গোটা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের পাহারা বাড়ানো হয়।
দণ্ড কার্যকরের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী আরেফের স্ত্রী রওশন জাহান সাথী সন্তোষ জানালেও পাঁচ আসামি এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। “এত বছর পর রায় কার্যকর হচ্ছে, এটা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে পাঁচজন আসামি ১৭ বছর ধরে পলাতক রয়েছে। কিন্তু কেন?” এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ৫ আসামি হলেন- মান্নান মোল্লা, জালাল ওরফে বাশার, রওশন আলী, বাকের আলী ও জাহান আলী পলাতক। এদের খুঁজে বের করে দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি নিহতের পরিবার ও জাসদ নেতাদের।
১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল জাসদের সাবেক সভাপতি কাজী আরেফকে।
এই মাঠেই জনসভায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কাজী আরেফ আহমেদকে এই মাঠেই জনসভায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কাজী আরেফ আহমেদকে চরমপন্থিদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে রক্তাক্ত ওই জনসভায় কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডলও নিহত হন।
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নুরুজ্জামান লাল্টু এই হামলার পরিকল্পনায় ছিলেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত লাল্টুও পরে নিহত হন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর নেতা কাজী আরেফ স্বাধীনতার পর জাসদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন, জাতীয় কৃষক লীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের আমলে আগের বৈরিতা ভুলে আওয়ামী লীগ-জাসদ ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজী আরেফের ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
’৯০ এর দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠিত হলে তাতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে জাসদের অংশগ্রহণেও কাজী আরেফের ভূমিকা ছিল। তার স্ত্রী রওশন নবম সংসদে আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, কাজী আরেফসহ পাঁচজনকে হত্যার ঘটনার পরেরদিন দৌলতপুর থানার তৎকালীন এসআই মো. ইসহাক আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। আলোচিত এ মামলার রায়ে ২০০৪ সালের ৩০ অগাস্ট কুষ্টিয়া জেলা জজ আদালত ১০ জনের ফাঁসি এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়।
ওই রায়ে ইলিয়াস, রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঝন্টু, সাফায়েত হোসেন (হাবিব), আনোয়ার হোসেন, সাহির হোসেন, মান্নান মোল্লা, বাকের, রওশন, জাহান ও জালালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়। এছাড়া রাফাত ওরফে রাফা, গারেস, তাসিরুদ্দিন, আসগর জোয়ারদার, নজরুল ইসলাম, ওয়ালিউর রহমান, একুব্বার, টিক্কা ওরফে জাব্বার, লাবলু, ফিরোজ ওরফে ফরু, লাল্টু ওরফে নুরুজ্জামানকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের কয়েকজনের আপিলে হাই কোর্ট ২০০৮ সালের ৩১ অগাস্ট নয়জনের মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে ২০১১ সালের ৭ অগাস্ট সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসে, যাতে পাঁচজনের ফাঁসি এবং সাতজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায় পর্যালোচনায় (রিভিউ) গ্রেপ্তার তিন আসামি আবেদন করলে গত নভেম্বরে তা খারিজ হয়ে যায়।
. . . . . . . . .