সরকারের ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছে বিএনপি

সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০১৬, ১১:০৩ পূর্বাহ্ণএস কে রেজা পারভেজ :
আন্দোলন-সংগ্রামে প্রতিকূল পরিবেশেও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে থাকা ইসলামী ঐক্যজোটের হঠাৎ জোট ছেড়ে দেওয়ার নেপথ্যে ‘সরকারের ষড়যন্ত্র’ আছে বলে মনে করছে বিএনপি। তবে ইসলামী ঐক্যজোটের এই সিদ্ধান্তের পর বিষয়টি জোটের অন্য শরিক দলগুলোর মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করে দলটি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কনভেনশনে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী। তবে জোটের সঙ্গে সম্পর্কছেদের কারণ জানাননি তিনি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়ে নেজামী বলেন, ‘ইসলামী ঐক্যজোট স্বকীয়তা বজায় রেখে নিজেদের সাংগঠনিক তৎপরতায় মনোযোগী হবে। কেননা ইসলামী ঐক্যজোট স্বতন্ত্র। তাই এখন থেকে ইসলামী ঐক্যজোট স্বকীয়তা বজায় রেখে কর্মতৎপরতা চালিয়ে যাবে।’
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলটির প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান মওলানা আবদুল রকিব সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেন, ‘আবদুল লতিফ নেজামী গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছেন। তিনি আর ইসলামী ঐক্যজোটে নেই। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ দলের চেয়ারম্যান দলে না থাকায় পদাধিকার বলে নিজেকে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান বলেও দাবি করেন রকিব।
সম্পর্কের টানাপোড়েনে ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া দলের মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট তৃতীয় দল। এর আগে জোট থেকে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানীর একাংশ।
১৯৯৯ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের গড়ে তুলতে বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সমন্বয়ে চার দলীয় জোট গঠন করা হয়।
পরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল চার দলীয় জোট সম্প্রসারিত হয়ে ১৮ দলীয় জোট হয়। এর পর ২০ দলীয় জোটে রূপ নেয়।
‘প্রতিকূল পরিবেশে’ সরকারের প্রলোভনেও জোট আঁকড়ে থাকার পর রাজনীতির এই পরিস্থিতিতে ইসলামী ঐক্যজোট কেন জোট ছাড়াল, তার কারণ খুঁজছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য আ স ম হান্নান শাহ। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালের শুরুতে জোটের আন্দোলন চলাকালে ইসলামী ঐক্যজোটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারের প্রতিনিধিরা মন্ত্রিত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। তখন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। এখন কীভাবে জোট ছাড়ল, সেটি ভাবার বিষয়।’
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারি দলের বিপক্ষে কেউ একা আন্দোলন করে সফল হয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগও জোট করে ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু রাজনীতির এই পর্যায়ে এসে ইসলামী ঐক্যজোট জোটের প্রতি অবিচারই করেছে। যেহেতু অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম দীর্ঘ হয় এবং অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার দরকার হয়। সেজন্য তাদের উচিত ছিল আরেকটু ধৈর্য্য ধরা। তারা যদি মনে করে থাকেন, একা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সরকার পতন ঘটাতে পারবেন, তাদের সাফল্য কামরা করি।’
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে সরকার জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদও।
তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট নিয়ে সরকার যে ষড়যন্ত্র করছে তা সফল হবে না। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব দলটি আন্দোলনের জন্য যথেষ্ট বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
২০ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ আছে জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমদ আযম খান বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম এবং নির্বাচেন জোট ঐক্যবদ্ধ আছে। এখন জোটের ভেতর থেকে শরিক দলের কোনো ছোট অংশ যদি বেরিয়ে যায়, এটা জোটকে মোটেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। আন্দোলন-সংগ্রামের কোনো প্রভাব পড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘হতে পারে কোনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বা সরকারের কোনো চাপে তারা জোট থেকে বেরিয়ে গেছে। তবে সেটি দলটির একটি অংশ। কারণ, কয়েক বছর ধরে সরকার ২০ দলীয় জোটকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে।’
তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে জোটে থাকা না থাকার সিদ্ধান্ত ইসলামী ঐক্যজোট নিতেই পারে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শরিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির যে জোট তা আদর্শিক। আন্দোলনের জন্য এই জোট গঠন করা হয়েছিল। এখন কেউ যদি মনে করে জোটে থাকবে না, তাহলে কী করা যাবে? তবে এতে জোটে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, বিএনপির অনেক বড় রাজনৈতিক দল।’
মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা হয়তো দলের শেষ কথা নয়। ওই দলের আরো নেতা আছেন, তারা হয়তো পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারেন।
রাইজিংবিডি . . . . . . . . .