‘খুনের পর সাবান দিয়ে গোসল করি’
![](https://sylheterkantho.net/img/icon.jpg)
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:১৫ অপরাহ্ণচট্টগ্রাম : নগরীর বায়েজিদ থানার শেরশাহ এলাকায় স্কুল ছাত্র আজিমকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোত্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন একমাত্র অভিযুক্ত গ্রেপ্তার রনি আক্তার (২২)। বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে তিনি ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি প্রদান করেন।
রনি আক্তারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে বায়েজিদ থানা পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পর একমাত্র অভিযুক্ত খুনিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি খুনের রহস্যও উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। জবানবন্দিতে অভিযুক্ত রনি আক্তার বলেছেন, শিশু আজিমকে প্রথমে বালিশ দিয়ে নাক চেপে অজ্ঞান করার পর বটি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর বটি চাদর দিয়ে মুছে নিজের বাসায় গিয়ে তিনি সাবান দিয়ে জামা-কাপড় পরিস্কারের পাশাপাশি সাবান দিয়ে গোসলও সারেন। এরপর নিজ বাসায় স্বাভাবিকভাবে অবস্থান করনে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বাংলামেইলকে বলেন, ‘খুনের দায় স্বীকার করে রনি আক্তার বিকেল ৫টার পর মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের খাস খামরায় প্রবেশ করেন। তিনি দুই পৃষ্টার জবানবন্দি প্রদান শেষে সন্ধ্যা ৭টায় সেখান থেকে বের হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।’
বায়েজিদ থানা পুলিশের সফল এই মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে খুনিকে খোঁজার পাশাপাশি আমাদের স্থানীয় জনতাকেও সামলাতে হয়েছে। জনবহুল এলাকা হওয়ায় তারা অনেকটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। এরপর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে সাধা পোশাকের পাশাপাশি একাধিক পুলিশ টিম নিয়ে খুনের রহস্য উদঘাটনে নেমে পড়ি। খুনের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই খুনের শিকার শিশুটির বাবাসহ বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও আসল খুনি সন্দেহের বাইরে ছিল। কেননা প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকারী রনি আক্তারও আমাদের নানাভাবে সহযোগিতার ভান করছিলেন। এরপরও আমি তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার ১০ মিনিটের মধ্যেই হত্যার দায় স্বীকার করেন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা সেটি যাচাই করতে গিয়ে নিশ্চিত হয় খুনি একজনই এবং সে গ্রেপ্তার রনি আক্তারই।’
এদিকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসমাবাদে খুনের দায় স্বীকার করার পর বুধবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত নারী রনি আক্তার। মহানগর হাকিম ফরিদ আলমের আদালতে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘আমি রনি আক্তার (২২)। পোশাক শ্রমিক রিপন মিয়ার স্ত্রী এবং মৌলাভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার ত্রিপুরা বাড়ির আহমদ ছবার মেয়ে। আমি স্বামীর সাথে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বাংলাবাজারের গুলশান আবাসিক এলাকার দিদার কলোনির তৃতীয় তলায় ১৯ নম্বর কক্ষে ছেলে মিনহাজসহ ৩ হাজার ৪০০ টাকায় ভাড়ায় থাকি। আমার স্বামী রিপন মিয়া অক্সিজেন এলাকার কেডিএস গার্মেন্টসে চাকরি করেন।’
জবানবন্দিতে আরো বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে আমাদের কলোনির সকলে চাকরি বা কাজে চলে যায়। আমি দুপুর ও সন্ধ্যার আগে বাসায় একা থাকি। আজিমের (খুনের শিকার শিশু) বাবা, মাসহ তাদের পরিবারের লোকজন কলোনির বাইরে গেলে আমার কাছে তাদের বাসার চাবি রেখে যেতেন। যখন যে বাসায় আসত তাদের আমি চাবি দিতাম। প্রায় ১৫/২০দিন আগে আজিমদের ঘরের শোকেইচের ওপর থেকে তাদের ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন আমি নিয়ে নিই। এরপর থেকে মোবাইলটি বন্ধ রাখলেও মাঝেমধ্যে সেটি চালু করি। এসময় একটি ছেলে আমার সাথে ওই মোবাইলে ফোন করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একদিন আমার মোবাইলে রিং বাজলে সেটি আজিমের বাবা টের পায়। তারা আমার বাসায় ঢুকে মোবাইলটি নিয়ে আসে এবং মোবাইল চুরির অপরাধে কলোনিতে আমার বিচায় হয়। বিচারে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে আমি তিন হাজার টাকা পরিশোধ করি।’
‘এরপর থেকে আজিমের পরিবারের লোকজন আমাকে আর বাসার চাবিও দিতনা আর তারা আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেনি। এরপরও আজিম বাইরের ছেলেদের নিয়ে এসে আমাকে মোবাইল চোর বলে ক্ষেপাইত। এমনকি আমার ছেলেকেও সে চোরের ছেলে বলে ডাকতো। আমি এসব অপমানের প্রতিশোধ নিতে গত ৩ জানুয়ারি অজিমকে খুন করার পরিকল্পনা করি। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৫ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আজিমকে তাদের বাসায় একা দেখতে পেয়ে তাদের বাসায় ঢুকি। এসময় আমার বোন শারমিনকে দিয়ে আমার ছেলে মিনহাজকে কলোনির বাইরে ঘুরতে পাঠাই।’
রনি আক্তার আরো বলেন, ‘আজিম যখন স্কুলের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে রওনা হচ্ছিল এসময় আমি তাকে একটি কলম দিতে বলি। তখন আজিম বলে সে আমাকে কলম দিবেনা। এরপর আমি তার সাথে ঝগড়া বাধায় এবং তাকে ধাক্কা দিই। এসময় আজিম আমাকে তাদের বাসায় রাখা সিলবারের ছোট কলস দিয়ে আঘাত করতে চাইলে আমি সেটি দিয়ে তাকে আঘাত করি। এই আঘাতের পর সে অজ্ঞান হয়ে তাদের চৌকিতে খাত হয়ে পড়ে। এসময় পুরো কলসির পানি পুরো বাসায় হয়ে যায়। আমি কালো একটি ওড়না দিয়ে তার হাত বাঁধি, তার জিন্সের প্যান্ট দিয়ে পা বাঁধি। এরপর আমি তার গায়ের ওপর উঠে বালিশ দিয়ে তার নাক-মুখ চেপে ধরি। এসময় আজিম একেবারে চুপচাপ হয়ে গেলে তাদের চৌকির নিচ থেকে বটি নিয়ে তাকে জবাই করি। এসময় সে ছটপট করলে আমার তাকে বটি দিয়ে মুখে, পিটে মাথায় আঘাত করি। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে বিছানার চাদর দিয়ে বটির রক্ত মুছে, সেটি চৌকির নিচে রেখে বাসার দরজা বন্ধ রেখে বাইিরে চলে যাই।’
‘পরে আমি বাসায় এসে রক্ত মাখা ওড়না, ছেলোয়ার ও জামা সাবান দিয়ে পরিস্কার করি। নিজেও সাবান দিয়ে গোসল করি। এসব জামা-কাপড় বাসার সামনের দড়িতে শুকানোর জন্য দিয়ে যখন বাসায় অবস্থান করি তখন আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে আমার ছেলে মিনহাজকে নিয়ে আমার বোন শারমিন বাসায় আসে। এরপর খুনের বিয়ষটি জানাজানি হলেও আমি স্বাভাবিক থাকি। পরবর্তীতে পুলিশ আমাকে আটক করলে আমি হত্যার দায় স্বীকার করি।’
গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে নগরীর বায়েজিদ থানার বাংলাবাজারে গুলশান আবাসিক এলাকার দিদার কলোনিতে নিজের বাসার ভেতরে খুন করা হয় আজিম হোসেনকে (১২)। সে স্থানীয় শেরশাহ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তার বাবা তরকারি বিক্রেতা, মা পোশাক কর্মী . . . . . . . . .