হাতিয়ে নেয়া কোটি টাকা হজম!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫, ২:২৭ অপরাহ্ণকুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ‘সততা’ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবু হোসেন প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে দীর্ঘ ২৩ মাস থেকে আত্মগোপন করে আছেন।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত একদিনের জন্যও ওই পরিচালককে দেখা যায়নি। তিনি কোথায় আছেন তারও কোনো সন্ধান কেউ দিতে পারে না। ঢাকায় বাসা ভাড়া আত্মগোপন করে ওই টাকা হজম করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ওই এনজিও পরিচালক দাতা সংস্থা ইউএনডিপির অর্থায়নে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং দরিদ্র নারীদের উন্নয়নের কথা বলে ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে প্রকল্পে লোভনীয় সুযোগ সুবিধার কথা বলে প্রায় ৯শ কর্মী নিয়োগ প্রদান করেন। রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী উপজেলায় কর্ম এলাকা দেখিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগের সময় আবেদনকারীদের জনপ্রতি ২০ থেকে ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। ওই টাকা আদায় করা হয় জামানতের কথা বলে। নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা যখন তিন মাসেও বেতন পাচ্ছিল না। যোগদান করার ৩ মাসেও কর্মীরা বেতন ভাতা না পেয়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ আনার জন্য দাতা সংস্থার ঢাকা অফিসে যাওয়ার কথা বলে ওই পরিচালক পালিয়ে যান। এরপর আর রৌমারীতে আসেননি তিনি।
এদিকে, ওই সংস্থার প্রতারণার ফাঁদেপরা কর্মী কামরুল হাসান, ইছমে জাহান, কোহিনুর বেগম, সাজেদা বেগম, শরীফা খাতুন, সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, চাকরি দেয়ার সময় প্রত্যেকের কাছ থেকে জামানত হিসেবে ৫০ হাজার করে দেয়া হয়েছে। জামানতের টাকা ফেরত চেয়ে কর্মীরা হন্যে হয়ে খুঁজছে ওই পরিচালককে। কিন্তু পাচ্ছে না। সংস্থার কার্যালয় তালা মারা অবস্থায় রয়েছে। চিলমারী উপজেলা ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সরোয়ার হোসেন জানান, চতুর ওই পরিচালক দিনদুপুরে ডাকাতি করে নিয়েছে আমাদের। দাতা সংস্থা কোনো প্রকল্প দেয়নি ‘সততা’ নামে ওই সংস্থাকে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার টাপুরচর বাজার সংলগ্ন ওই সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ঘরে তালা মারা। একেটা লোকও নেই সেখানে। আশপাশের মানুষজন জানান, আবু হোসেন একজন বাটপার। তিনি অনেক টাকা মারছে। এখন তিনি কোথায় থাকে কেউ বলতে পারে না।
সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাতা সংস্থা ইউএনডিপি সততা নামে ওই সংস্থাকে ওই নামের কোনো প্রকল্প বা অর্থ দেয়নি। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও ওই সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ওই সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবু হোসেনের কোনো মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। বর্তমানে ওই নম্বরগুলো ব্যবহার হয় না বলে কর্মীরা জানিয়েছেন। গত বছর ফেব্রয়ারি মাসে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন, ‘কর্মীদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে গ্রহণ করা টাকা ফেরতযোগ্য। দাতা সংস্থা ইউএনডিপির সঙ্গে চুক্তিপত্র সম্পাদনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, আমি তো নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এর কী হয়েছে তা আমি জানি না। তবে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি।
. . . . . . . . .