যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদ রাজউকের প্লট পেয়েছিলেন ‘রাষ্ট্রীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ’!
![](https://sylheterkantho.net/img/icon.jpg)
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ নভেম্বর ২০১৫, ১০:২২ পূর্বাহ্ণএকাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে শাস্তি কার্যকর হওয়া যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদ রাজধানীর অভিজাত এলাকা উত্তরায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পেয়েছিলেন ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ’।
মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর এ প্লট বাতিলের দাবি উঠেছে।
একজন যুদ্ধাপরাধী কীভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে সে নিয়ে কথা উঠায় এখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বরাদ্দ বাতিলের সুযোগ আছে কি-না যাচাই-বাছাই করে দেখছে।
মুজাহিদের প্লট পাওয়া প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই বরাদ্দ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি যারা রাষ্ট্রীয় অবদানের স্বীকৃতি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন, তাদেরও শাস্তি দিতে হবে।
জানা যায়, ভূমি বরাদ্দ বিধিমালার ১৯৬৯ (সংশোধিত) ১৩/ক ধারা বলে মুজাহিদকে প্লটটি দেওয়া হয়েছিল।
১৩/ক ধারায় বলা আছে, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট ব্যক্তি যার রাজধানীতে থাকার জায়গা নেই, তাকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ধারায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য।’
দেশের গুণী ও দেশ-জাতির জন্য বিশেষ অবদান রাখা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ব্যক্তির বাসস্থানের জন্য এ ধারাটি রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে রাজউকের কাছে আবেদন করতে হয়। ওই আবেদনপত্র পূর্ত মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতামতের জন্য রাজউক পেশ করতে পারে বা রাজউক তার ক্ষমতাবলেও প্লট বরাদ্দ দিতে পারে।
কেবল মুজাহিদ নয়, অপর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী মুজাহিদের সঙ্গে একইভাবে প্লট পেয়েছে। মুজাহিদের প্লট ঢাকার উত্তরায় এবং নিজামীর প্লট বনানীতে।
প্লট পাওয়ার আগে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ তার আবেদনে উল্লেখ করেন, ঢাকায় বসবাসের মতো তার কোনো জমি নেই। নিজস্ব আয় দিয়ে জায়গা কেনার মতো আর্থিক অবস্থাও তার নেই। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার এমন আর্থিক দৈন্যের সৃষ্টি হয়েছে। মাথাগোঁজার একটু ঠাঁই নির্মাণের জন্য তাকে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হোক।
একই রকম আবেদন করেছিলেন যুদ্ধাপরাধী নিজামী, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন ৪০ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করলেও মাথা গোঁজার ঠাই তাঁর নাই।
ওই আবেদনের পর ১৩/ক ধারার সুযোগ নিয়ে ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর রাজউকের ১৬২তম বোর্ড সভায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে রাজউকের উত্তরা মডেল টাউনের ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর রোডের ৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। অতি দ্রুততায় ২০০৬ সালের ১৬ মার্চ তাকে পাঁচ কাঠার প্লটটি বুঝিয়েও দেওয়া হয়।
এরপর ওই জায়গায় মুজাহিদ গড়ে তোলেন প্রাসাদসম বাড়ি। নাম দেন ‘মিশন তামান্না’। একই দিন ঢাকার বনানীতে বরাদ্দ পাওয়া প্লটে আলিশান বাড়ি বানান নিজামী, যার নাম দেন ‘মিশন নাহার’।
জানা যায়, প্লট বরাদ্দকালীন সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল উদ্দিন বোর্ডসভায় মুজাহিদের মন্ত্রী থাকার বিষয়টি প্লট পাওয়ার পক্ষে যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেন। ওই বোর্ড মিটিংয়েই প্লট বরাদ্দের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ইকবাল উদ্দিন বেশ কয়েক বছর আগেই অবসরে যান।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অবদানের দোহাই দিয়ে প্লট বরাদ্দের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সোমবার মুজাহিদের প্লটের ফাইলটি রাজউকের সম্পত্তি বিভাগ থেকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
. . . . . . . . .