দায়িত্বশীলদের ইতিবাচক ব্ক্তব্যে আস্থা ফিরছে শেয়ারবাজারে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণদেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই উত্থান-পতন অব্যাহত আছে। কোনোভাবেই বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না। তবে দায়িত্বশীলদের ইতিবাচক ব্ক্তব্যে বাজার কয়েকদিন ধরে উত্থান ধারায় ফিরতে শুরু করেছে। এখন কার্যকর পদক্ষেপ নিলে বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতায় ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক পরিচালক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘দায়িত্বশীলদের কাছে বিনিয়োগকারীরা সবসময় ভালো কিছু আশা করেন। তাদের ইতিবাচক বক্তব্যে বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পান।’
তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার লিমিটের সময় বাড়ানোর খবরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে। তারা সক্রিয় হচ্ছে ফলে বলেই বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাজারকে ইতিবাচক দেখতে চান। তার নির্দেশনাগুলোও ইতিবাচক। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শেয়ারবাজারের প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন।’ এতে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন খুজিস্তা।
এদিকে রোববার ভারত ও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্মারক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেয়ারবাজারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ারবাজার উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
রোববার ডিএসইতে কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন দেড় ঘণ্টা পর শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক বক্তব্যের ফলে দিনশেষে শেয়ারবাজারে লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলামেইলকে জানান, আগে শেয়ারবাজার নিয়ে মন্ত্রীরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। এখন তা করার সুযোগ নেই। এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজারকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যদি শেয়ারবাজার নিয়ে পজেটিভ বক্তব্য দেন তাহলে বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা ফিরে আসে,তারা সাহস পান। তখন বাজার ইতিবাচক হয়।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে গত মাস দুয়েক ধরেই বেশিরভাগ সময় পতনধারা অব্যাহত আছে। পতনের কারণগুলোর মধ্যে ব্যাংকের এক্সপোজার লিমিট (এক গ্রাহক ঋণসীমা), রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিএসইসি স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে শেয়ারবাজার কারসাজিদের বিচারের একাধিক রায় উল্লেখযোগ্য।
এসবের মধ্যে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের চাপে প্রতিনিয়ত সেল প্রেসার বাড়তে থাকায় বাজারে কিছুদিন টানা দরপতন হয়েছে। ধারাবাহিক পতনে অস্থিরতা বিরাজ করে শেয়ারবাজার। দিন দিন বিনিয়োগকারীরা বাজারে প্রতি আস্থা হারায়। আর সেই মুহূর্তে বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসির কাছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানায়। এর পরপরই শেয়ারবাজারে পতন ঠেকাতে গত ৯ নভেম্বর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছে বিএসইসি।
পরবর্তীতে গত ১৫ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত গণমাধ্যমকে জানান, শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও দুই বছর বাড়ানো হবে। এজন্য শিগগিরই ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। সংসদের মাধ্যমে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের লক্ষ্যে দ্রুত তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য তোলা হবেও জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৫ নভেম্বর অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের আগের দিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২২১ কোটি টাকা এবং প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪২৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। অথচ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিন ১৬ নভেম্বর বাজারে লেনদেন ১৯৪ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৫ কোটি টাকা এবং ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়ে ৪ হাজার ৪৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
রোববার (২২ নভেম্বর) ডিএসইর লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩০ কোটি টাকা এবং প্রধান সূচক বেড়ে ৪ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধস নামে। সেই ধসে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের বিনিয়োগ কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ এখনই কমানো ঠিক হবে না। সামগ্রিক স্বার্থে ব্যাংকের বিনিয়োগ কমানোর বিষয়ে আর সময় দেয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যের একদিন পর (২ নভেম্বর) শেয়ার বাজারে সূচক ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে অবস্থান করে। একই সঙ্গে ডিএসইর লেনদেন ২৩ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯০ কোটি টাকা।
গত ২৯ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ বিদেশে পালিয়ে থাকলেও রেহাই পাবে না। পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শেয়ারবাজারকে আরও গতিশীল করতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পরও ৩০ জুন শেয়ারবাজারে সূচক ৫২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে এবং লেনদেন ৮৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯০ কোটি টাকা।
এদিকে ২০১২ সালের জুন মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে দেশের পুঁজিবাজারকে ‘দুষ্ট শেয়ারবাজার’ আখ্যা দেয়। এ বক্তব্য নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরবর্তীতে একই কথার পুনরাবৃত্তি করে ২০১৩ সালের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুরো শেয়ারবাজারটাই দুষ্ট। বিনিয়োগকারীরা বলেন, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। কিন্তু কেউই বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন না।’ অর্থমন্ত্রীর এ মন্তব্যের পর সেই সময় বাজারে টানা কয়েকদিন পতন হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলামেইলকে বলেন, ‘বেশকিছু দিন নেতিবাচক থাকায় বাজার অনেক নিচে নেমে গেছে। তাই বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছে। অর্থাৎ কিছুটা সমন্বয় হচ্ছে। তাছাড়াও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য ইতিবাচক বক্তব্য আসলে বাজারের বিনিয়োগকারীরা আস্থা পায়।’
অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের একক গ্রাহক ঋণসীমা (এক্সপোজার লিমিট) সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছে তা পজেটিভ। দুই বছর সময় বাড়ালে তা বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে। সবমিলিয়ে ভালো খবর বাজারকে চাঙ্গা করে বলে জানান তিনি।
. . . . . . . . .