রাজন হত্যা: ‘সন্তুষ্টির’ বিচারে ‘অতৃপ্তি’র নাম পাভেল ও শামীম
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৫২ অপরাহ্ণদেশজুড়ে আলোড়ন তোলা শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলা রায় ঘোষিত হয়েছে রবিবার। এতে প্রধান আসামী কামরুলসহ ৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে এই মামলার আসামী জাকির হোসেন পাভেলও। যদিও এখন পর্যন্ত পাভেলের কোনো হদিস পায় নি পুলিশ।
এখনো অধরা রয়েছে এই মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামী শামীম আহমদও। রবিবারের রায়ে তাকে সাত বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়। শামীম প্রধান আসামী কামরুলের ভাই। আর পাভেল সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে। তার পুরো নাম জাকির হোসেন পাভেল। টুকেরবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো সে।
দ্রুততম সময়ে কামরুলকে সৌদি আরব থেকে ফিরিয়ে আনা আর বিচার সম্পন্নের জন্য সংশ্লিষ্টরা যখন প্রশংসায় ভাসছেন তখন একটুকু আফসােস হয়ে রয়েছে পাভেল ও শামীমের এখনো গ্রেপ্তার না হওয়া।
এই আফসোসের কথা জানালেন রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমানও। তিনি বলেন, দ্রুত রায় প্রদান করায় আমি সন্তুষ্ট। তবে এখনো শামীম ও পাভেলকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হওয়ায় কিছুটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে। এই দু’জনকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ চাইলে অবশ্যই এদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব।
জানা যায়, ৮ জুলাই রাজন হত্যার পর প্রথমদিকে শামীম ও পাভেলকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি রাজনের পিতা আজিজুর রহমানের এজাহারেও ছিলো না শামীম ও পাভেলের নাম। তবে গ্রেপ্তাকৃত আলী, ময়না, নূর মিয়াসহ অন্যান্য আসামিদের জবানবন্দিতে শামীম ও পাভেলের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ।
জবানবন্দিতে এ দু’জনের নাম ওঠে আসার পর পুলিশ প্রথমে শামীমকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালায়। তবে শামীমকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। পাভেলেরও কোনো খোঁজ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। এমনকি পাভেল ও শামীম দেশে আছে কী না এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারে নি পুলিশ।
এ ঘটনায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে একাধিক আসামী জানিয়েছিলেন, রাজনকে যখন ওয়ার্কশপের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছিল তখন সেখানে ছুটে গিয়েছিল শামীমও। সে রাজনকে মারধর করেছে। একইভাবে পাভেলও নির্যাতনেরও সময় ঘটনাস্থলে আসে। সে নিজেও রাজনকে মারধর করে।
ভিডিওচিত্র ও জবানবন্দির সূত্র ধরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর সুরঞ্জিত তালুকদারের চার্জশিটে উঠে পাভেল ও শামীমের নাম অন্তর্ভূক্ত করেন। যুক্তিতর্ক যাছাই বাছাই শেষে পাভেল ও শামীমের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হয়। ফলে রবিবার প্রদত্ত রায়ে পাভেলেকে ফাঁসি ও শামীমকে সাত বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন আদালত।
কুমারগাও এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাজন খুনের ঘটনার পর থেকে শামীম এলাকা ছাড়া। তবে রাজন খুনের পরও দু’একদিন পাভেলকে টুকেরবাজার ও কুমারগাঁও এলাকায় দেখা গেছে। তবে এ হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে সে লাপাত্তা হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, শামীম ও পাভেলকে ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে তাদের অবস্থান এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রবিবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩ আসামীর মধ্যে ৪ জনকে ফাঁসি, একজনকে যাবজ্জীবন, তিনজনকে সাত বছরের কারাদন্ড, দুই জনকে এক বছরের কারাদন্ড ও ৩ জনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
. . . . . . . . .