শিবির ‘ক্যাডার’ থেকে ছাত্রলীগ নেতা!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ নভেম্বর ২০১৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ণঈদুল আযহা ও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে নগরীতে ফেস্টুন লাগিয়েছেন সামছুল হুদা মুন্না। ফেস্টুনের নিচের দিকে নিজের নাম ও ছবি জুড়ে দিয়ে পরিচয় হিসেবে লিখেছেন- ‘পুরাতন মেডিকেল গ্রুপ, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগ।’
তবে মদন মোহন কলেজের ছাত্র মুন্না এককালে ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা। এমনকি মুন্না শিবিরের হয়ে একাধিকবার ছাত্রলীগ নেতাদের উপর হামলায়ও অংশ নেন বলে অভিযোগ তাদের।
ঈদ ও পূজার শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের ফেস্টুনে নিজের ছবির সাথে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল হাসনাত বুলবুলের ছবি জুড়ে দিয়েছেন মুন্না। বুলবুল ছাত্রলীগের পুরাতন মেডিকল বলয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। অভিযুক্ত সামছুল হুদা মুন্না এই বলয়ের সাথেই সম্পৃক্ত।
তবে এ ব্যাপারে আবুল হাসনাত বুলবুল কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।
আর সামছুল হুদা মুন্না নিজের শিবির সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে বলেন, মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন। তারাই এখন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করেন মুন্না।
তিনি বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলছে, তারা পারলে এর প্রমাণ দেখাক।
জানা যায়, মুন্না নগরীর পুরাতন মেডিকেল এলাকার বাসিন্দা ও মদন মোহন কলেজের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে ছাত্রলীগের পুরাতন মেডিকেল বলয়ের সাথে সম্পৃক্ত। এই গ্রুপের নেতা আবুল হাসনাত বুলবুল আগে ছাত্রলীগের দর্শন দেউড়ি গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিলেন। দর্শন দেউড়ি গ্রুপ থেকে বেরিয়ে পুরাতন মেডিকেল গ্রুপ গঠন করেন তিনি।
মুন্নার বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের ফেসবুক একাউন্ট থেকে গত ১ নভেম্বর একটি পোস্ট দেওয়া হয়। তাতে লেখা রয়েছে-
“আপনারা যারা ২০০৯ সালের পূর্ব থেকে মদন মোহন কলেজের রাজনীতির সাথে জড়িত আছেন তারা হয়ত জানবেন যে মুন্না শিবিরের কত গভীরের নেতা ছিল। তার আদর্শে ছিল চাঁদে গমন করা ছাঈদী রাজাকার আর মইত্তা রাজাকার। নির্বাচনের আগে শিবিরের সাথে মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের যতগুলো সংঘর্ষ হয়েছে তাতে অস্ত্র হাতে দেখা যেত শিবিরের ক্যাডার মুন্নাকে। এমনকি মদনমোহন কলেজের মৃত্যুঞ্জয়ী সভাপতি অরুন দেবনাথ সাগর এর দিকে রাম দা নিয়ে অাঘাত করতে উদ্যত হয়েছিল এই ক্যাডার। অথচ আজ সে ছাত্রলীগ নেতা। পুরোপুরি জয়বাংলার অংশীদার। আবার এরাই একদিন পদ পদবী লাগিয়ে সিলেট দাবিয়ে বেড়াবে। কেন ছাত্রলীগের আজ এমন অবস্থা? সিলেটে কি ছাত্রলীগের কর্মী সংকট পড়েছে নাকি? যে শিবির থেকে ইমপোর্ট করতে হবে।”
ফেসবুক আইডি’র এই পোস্টের বিষয়ে মদন মোহন কলেজের একাধিক ছাত্রলীগ নেতার সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সামছুল হুদা মুন্না মদন মোহন কলেজ ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সে সময় মুন্না ও আরেক শিবির নেতা মঞ্জুরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা আবদাল হোসেনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অরুণ দেবনাথ সাগরের উপর হামলায়ও মুন্না অংশ নেন বলে অভিযোগ কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের।
তবে হামলায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যে দাবি করে মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের ফেসবুক একাউন্ট থেকে করা ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রদান করবেন বলে জানান সামছুল হুদা মুন্না।
মদন মোহন কলেজে বর্তমানে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। এ ব্যাপারে সদ্য সাবেক সভাপতি অরুণ দেবনাথ সাগরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কলেজে বিভিন্ন দলের অনেক নেতাকর্মী রয়েছে। সবাইকে চেনা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে আমার সংগঠনের অনেক নেতারাই জানিয়েছেন, সামছুল হুদা মুন্না আগে শিবির করতো এবং শিবিরের হয়ে ছাত্রলীগের উপর হামলায়ও অংশ নেয়।
. . . . . . . . .