ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের মামলায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও আসামি
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ নভেম্বর ২০১৫, ১১:০৪ অপরাহ্ণরেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তরে (সিআরবি) রেলের কোটি কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মীকে আসামি করায় প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ও গত ৩১ অক্টোবর সিআরবিতে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ যথাক্রমে ৫০ জন ও ৫৪ জনের নাম উল্লেখ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে দুটি মামলা দায়ের করে। দুই মামলাতেই ঘটনার জন্য মূল অভিযুক্ত যুবলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর ও কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা সাইফুল আলম লিমনের নাম না থাকলেও সেখানে এনায়েত বাজার এলাকার ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মীর নাম দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ মামলার এজাহারে স্পষ্টভাবে যুবলীগ নেতা বাবর ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিমনের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনার কথা উল্লেখ করলেও এখন প্রশ্ন্ উঠেছে কী করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলের এই সাত নেতাকর্মী অংশ নিয়েছে। এছাড়া গত কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কৌশলী ভূমিকার কারণে বারবার এই ধরণের সংঘর্ষের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি পুলিশের কৌশলী আচরণের কারণে অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে সিআরবির টেন্ডার সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে আসামি হিসেবে দেখে গ্রেপ্তার করতে কঠোর নির্দেশ দিতে বাধ্য হন সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল।
গত সোমবার সিএমপির মাসিক অপরাধ বিষয়ক সভায় এমন নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কোতোয়ালী থানা পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে সিআরবি ও আশপাশের এলাকা থেকে গত দুই দিনে ৫১জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে বাবরের সেকেন্ড ইন কমান্ড অমিত দাশ মুহুরি, মাসুদের মত শীর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছে। তারও আগে গত ২৬ আগস্ট লিমন ও বাবরের অনুসারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৮জন এবং ৩১ অক্টোবর আলাউদ্দিন নামে আরেকজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার জন্য যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কতিপয় নেতাকর্মীকের দায়ী করে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আর এঘটনার সাথে জড়িতরা সকলেই সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার বিষয়টিও পুলিশ কর্মকর্তারা অফ দ্যা রেকর্ড স্বীকার করেছেন। এমনকি বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-পুলিশ ও ডিবির যৌথ অভিযানে সিআবির আশপাশের এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটকের পাশাপাশি চাপিাতি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার ৬৫ জনের সকলেই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে তারাও দাবি করেছে।
কিন্তু সিআরবির ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় একাধিক নাশকতার মামলায় আসামিসহ ছাত্রদলের সাত নেতাকর্মীকে আসামি করার তাদের সম্পৃক্ত নিয়ে এখন প্রশ্ন তুলছে নগর ছাত্রদল। যুবলীগ-ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারে সংঘর্ষের ঘটনায় নগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের জড়ানোকে পুলিশ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপ্রয়াস বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার নগর বিএনপির কার্যালয়ে প্রতিবাদ সমাবেশও করেছে নগর ছাত্রদল।
সমাবেশে ছাত্রদল সভাপতি গাজী সিরাজউল্লাহ বলেন, ‘গত দুই বছর আগে সংঘটিত জোড়া খুনের মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের ধরছেননা। এখনো পর্যন্ত মামলাটির অভিযোগ পত্র দিতে পারেনি। এরমধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় সরকার তাদের এই টেন্ডারবাজ ও সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদেরকে বাঁচানোর জন্য জনগণের চোখ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাই তারা এই মামলায় নগর ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করছেন।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের বিরুদ্ধে সরকারের হীন ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আজ নগর ছাত্রদল নেতা আলাউদ্দিন সুমন, হাসান, মামুন, সাইফুল ইসলাম রাব্বি, জ্যাকি, আদর ও রানাসহ অনেক নেতাকর্মীই আজ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ছাত্রদল অবশ্যই এইসব ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিবে। ছাত্রদল নেতাকর্মীরা কোনরূপ টেন্ডারবাজী বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত নন। একমাত্র সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কারণেই আজ তাদের বিরুদ্ধে এই গভীর ষড়যন্ত্র। আমরা এরূপ ষড়যন্ত্রকে তীব্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি।’
অবিলম্বে ‘ষড়যন্ত্র বন্ধ’ করে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের নাম বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ‘প্রকৃত সন্ত্রাসীদের’ করার দাবি জানানো হয়েছে । অন্যথায় রাজপথে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে ওই সমাবেশ থেকে।
নগর ছাত্রদল সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে নগরীর কাজির দেউরীস্থ নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন চকবাজার থানা ছাত্রদলের আহবায়ক নুরুল আলম শিপু, ছাত্রদল নেতা মহিউদ্দিন জুয়েল, এম নুর উদ্দিন, সামিয়াত আমিন জিসান, হাসানুল করিম, মাসুদ সিকদার, এয়াকুব খান, মো. শামিম, মীর সাদেক অভি, কাজী তানিম, রাহাতুল্লাহ রবিন, মোদাচ্ছের, মিঠুন রবি দাশ, রাজিব, কুতুব উদ্দিন, মিঠু, বেলাল প্রমুখ।
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিনের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এমনিক কোতোয়ালী জোনের এডিসি মিজানুর রহমান, সহকারি কমিশনার মাঈনুদ্দীনের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারও ফোন ধরেননি। এছাড়া নগর পুলিশের শীর্ষ এক কর্মকর্তার সাথেও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ওসির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপের পরামর্শ করেন। সর্বশেষ কোতোয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই মোস্তাফা কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি থানার বাইরে, তাই এবিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারব না।’
. . . . . . . . .