দীপনের লাশ দেখে যা বললেন তাঁর স্ত্রী
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ নভেম্বর ২০১৫, ১০:৫৬ অপরাহ্ণঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ভবন প্রফুল্লর নিচ তলায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত জাগৃতির প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের লাশ ঘিরে স্বজনদের আহাজারিতে আশেপাশের পরিবেশও ভারি হয়ে ওঠে।
স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান জলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক চিকিৎসক। সেই সূত্রে তারা প্রফুল্লতে থাকেন। সকালে ময়নাতদন্ত শেষে দীপনের লাশ সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় স্বামীর লাশ জড়িয়ে ধরে স্ত্রী জলি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় স্বামীর নিথর দেহকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘খুব কষ্ট হয়েছে, নাগো…।’
পরে শ্বশুরের মনের শক্ত অবস্থান দেখে নিজেকে সামলিয়ে নেন। জলি নিজে অনেককে ডাকেন এবং বলেন, ‘আসেন সবাই একটু আ্ল্লাহর কাছে দোয়া করি। তার সকল গোনাহ যাতে আ্ল্লাহ মাফ করে দেন। সকল গোনাহ যাতে আমাকে দেন।’
পাশেই নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন দীপনের গর্ভধারিনী রোকেয়া প্রধান। তার যে আদরের ধন আর কোনো দিন মা বলে চিৎকার করবেন না। মাথায় হাত বুলিয়ে ছেলেকে চিরতরে বিদায় জানান। এ সময় মায়ের আত্মচিৎকারে উপস্থিত সবার চোখ ছলছল হয়ে ওঠে।
এ সময় ছোট কন্যাশিশু রিদমা সবার দিকে তাকিয়ে থাকে। বাবা যে মরণ খাটিয়ায় শুয়ে আছে, বাবা যে আর কোনো দিন কোলে নিয়ে আদর করবে না। তা বুঝে উঠতে আরো যে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে রিদমার। তবুও সে সবার কান্না দেখে নিজেও কেঁদে কেঁদে মুখ ফুলিয়ে তুলেছে।
আর দীপনের একমাত্র ছেলে রিদাতের আজ জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। সকালে পরীক্ষা দিতে যেতে চায়নি। তবুও সবার অনুরোধেই তাকে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছে। ছেলেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল বাবার। ওরা দুই ভাই বোনই উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থী।
ডা. রাজিয়ার চাকরির বলে দীপনের পরিবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবনে থাকা। কিন্তু বাবা আবুল কাশেম ফজলুল হক ও তার মা রোকেয়া প্রধান পরীবাগের বাসায় থাকেন।
প্রফুল্লতে ফসয়াল আরেফিন দীপনকে শেষ বিদায় জানানোর পর লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে বাদ জোহর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় অবস্থিত নিজের প্রকাশনীতে ফয়সাল আরেফিন দীপনের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ ও সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
. . . . . . . . .