নেতৃত্বের আশায় এবার তৎপর জিয়ার ভাই!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ অক্টোবর ২০১৫, ১০:১০ পূর্বাহ্ণবিএনপির নেতৃত্ব পাবেন- এমন আশায় এবার তৎপরতা শুরু করেছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আপন ভাই আহমেদ কামাল। আগামী ৪ নভেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এক মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন তিনি। এতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকে। তবে দলের এই দুঃসময়ে ওই মিলাদ মাহফিল নিয়ে ইতিমধ্যে বিএনপিতে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে, সরকারের প্ররোচনায় এ ধরনের তৎপরতা চলছে।
আহমেদ কামালের নামে মিলাদ মাহফিলের আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার কথা স্বীকার করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ ধরনের আমন্ত্রণপত্র বিলি করা হচ্ছে বলে শুনছি। কিন্তু বিএনপিকে নিয়ে কারো কিছু করার দুঃস্বপ্ন দেখে লাভ নেই। বিএনপির নেতৃত্বে কোনো শূন্যতারও সৃষ্টি হয়নি। খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন আছেন এবং তাঁর নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে। অবশ্য আহমেদ কামাল কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, দল ভাঙার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘দল তো আছেই।’ তবে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করে তাঁর পক্ষে মিলাদ মাহফিল যিনি আয়োজন করেছেন সেই শরিফুল আলম ডনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
নিজেকে আহমেদ কামালের ভাতিজা পরিচয় দিয়ে শরিফুল আলম ডন দাবি করেন, ‘মিলাদ মাহফিলের মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই।’ পরে প্রশ্ন রেখে তিনি নিজেই বলেন, ‘জিয়ার ভাইকে কী কোনো মূল্যায়ন করা হয়েছে? তাঁর (আহমেদ কামাল) জায়গায় আমি হলে অনেক আগেই নতুন দল করতাম। ভালো মানুষ বলেই তিনি তা করেননি।’
মিলাদ মাহফিলের নেপথ্যে সরকারের কোনো প্ররোচনা আছে কি না জানতে চাইলে ডন বলেন, ‘অনেক কিছু অনেকে বলতে পারেন। কিন্তু অনেক কষ্টে দুই কিস্তিতে টাকা জোগাড় করে সম্প্রতি আহমেদ কামাল চাচার চিকিৎসা করা হয়েছে।’
মিলাদ মাহফিলের জন্য বিলি করা আমন্ত্রণপত্রে আহমেদ কামালের নাম এবং ডনের মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। ডন বলেন, ‘রক্তের সম্পর্কের না হলেও আহমেদ কামাল ১৬ বছর যাবৎ আমার চাচা। খালেদা জিয়ার মা মরহুমা তৈয়বা মজুমদার আমার দাদি।’
ডনসহ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকজন কর্মী গত দুই-তিন দিন ধরে মিলাদ মাহফিলের আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকেলে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে খালেদা জিয়াকে।
আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন এমন একজন বিএনপি নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, মূলত সরকারের ইন্ধনে শরিফুল আলম ডন মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করছেন বলে মনে হয়। বিএনপির প্রভাবশালী ওই নেতা বলেন, ‘একা পেয়ে ডনের কাছে আমি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করে তিনি (ডন) বলেছেন, ‘আসলে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) তো সাজা হয়ে যাবে। তারেক রহমান থাকবেন লন্ডনে। এমন পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমানের ভাই হিসেবে আহমেদ কামালেরই বিএনপির হাল ধরতে হতে পারে।’
অবশ্য ডন বলেন, ‘আরে ভাই, উনি (আহমেদ কামাল) সম্প্রতি কঠিন অসুখ থেকে ফিরেছেন। তাই বলছিলেন, দুটি মুরগি জবাই করে সবাইকে খাওয়াতে। তো আমরা মনে করলাম, জিয়াউর রহমানের নাম সবাই নেন। কিন্তু তাঁর মা-বাবার নাম কেউ নেন না। তাই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার পিতা-মাতা এবং পরিবারবর্গের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে কোনো রাজনীতি নেই। আহমেদ কামাল চাচারও কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই। ক্রেন দিয়ে টেনে আনলেও তিনি রাজনীতিতে আসবেন না।’
খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে যাবে, তারেক রহমান থাকবেন লন্ডনে- এ ধরনের কথা তিনি বলেছেন কি না জানতে চাইলে ডন বলেন, ‘আরে রাখেন, সাংবাদিকরা বেশি বলেন। খালার (খালেদা জিয়া) সাজা হলে আমরা বসে থাকব নাকি! তবে আহমেদ কামাল রাজনীতি করলে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই করবেন।’
জিয়ার ছোট ভাই চিরকুমার আহমেদ কামাল বর্তমানে রাজধানীর বাসাবোতে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন বলে জানা যায়। পর্যটন করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার সময় নেপথ্যে তাঁর কিছু ভূমিকা ছিল বলে জানা যায়। তবে মন্ত্রী হওয়ার বাসনা থেকে আহমেদ কামাল এরশাদ সরকারের সময় একবার তৎপর হয়েছিলেন বলে বিএনপির দাায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর বয়সও প্রায় ৭০ বছর। সরকার ইন্ধন দিলেও তিনি যে কিছু করতে পারবেন এ কথা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী বিশ্বাস করেন না। তবে একাধিকবার ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি সরকারের সময় কিছু না পাওয়ায় দলের প্রতি আহমেদ কামালের ক্ষোভ রয়েছে। আর সে কারণেই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিএনপির বিরুদ্ধে তাঁকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।
-কালের কণ্ঠ
. . . . . . . . .