লন্ডনে বিচারপতি শামসুদ্দিনের ওপর ফের হামলা
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ অক্টোবর ২০১৫, ২:২৫ অপরাহ্ণলন্ডনে আবারও হামলা হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ওপর, যিনি দায়িত্বের শেষ দিনগুলোতে আলোচনায় ছিলেন নানাভাবে।
স্থানীয় সময় বুধবার রাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নেমে বাড়িতে যাওয়ার আগে বেথনাল গ্রিনের ইয়র্ক হলে দুর্গা পূজার একটি মণ্ডপে যান শামসুদ্দিন চৌধুরী। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার আগে কয়েকজন যুবক তার ওপর হামলা চালায়।
সাবেক এই বিচারপতির মেয়েও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। তার ধারণা, ‘বিএনপির লোকেরাই’ তার বাবার ওপর এ হামলা চালিয়েছে।
তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
হামলার ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ফেইসবুকে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে।
তিনি লিখেছেন, হঠাৎ একজন তার বাবার কাছে এসে জানতে চান তিনিই শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কি না। জবাব না পেয়ে এরপর সে মারধর শুরু করে।
“হঠাৎ টের পেলাম এক লোক বাবার গা ঘেঁষে হাঁটা শুরু করল, কাউকে বললে- ‘এই লোকই কি সে?’ তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমি পেছন থেকে বাবাকে আড়াল করার চেষ্টা করলাম। সে তখন বাবার সামনে চলে গেল, জিজ্ঞেস করল- ‘আপনি কি জাস্টিস শামসুদ্দিন চৌধুরী’?
“জবাব না দিয়ে বাবা সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরও কয়েকজন আমাদের দিকে এগিয়ে এল এবং এরপর বাবাকে মারতে শুরু করল।”
এক পর্যায়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় হামলাকারীরা। মেয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলেও হামলাকারীদের লাথি আর ঘুষিতে এক পর্যায়ে রাস্তায় পড়ে যান শামসুদ্দিন চৌধুরী।
তার মেয়ে লিখেছেন, প্রায় ৩০ সেকেন্ড ধরে তারা দুজন সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও আশেপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি।
হামলার ঘটনার পরপরই দৌড়ে ইয়র্ক হলে ফিরে আসেন বিচারপতি শামসুদ্দিন। এ সময় তাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানান।
কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তাদের কাছে ঘটনার বিবরণ দেন বাংলাদেশের এই সাবেক বিচারক। এ সময় তিনি নিজের বিস্তারিত পরিচয় পুলিশের সামনে তুলে ধরেন।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যোগাযোগ করা হলে পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, হামলার বিষয়টি তারা জানেন এবং একটি ফোন চুরির বিষয়েও তারা শুনেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
হামলাকারীদের পরিচয় জানা না গেলেও বিচারপতি শামসুদ্দিনের মেয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, “এই গাট্টাগোট্টা বখাটেরা আমার বাবাকে চেনে না। কোনো সন্দেহ নেই, বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্দেশনা পেয়েই তারা এসেছে।”
স্ট্যাটাসের শুরুতেই তিনি লিখেছেন, “লন্ডনে নেমেই আমরা হামলার শিকার হলাম, যে শহরে আরামে বসবাস করছেন তারেক জিয়া, তার মা বিএনপি প্রধানও এখন এই শহরেই অবস্থান করছেন।”
এর আগে ২০১২ সালের ২৭ জুন লন্ডনে অজ্ঞাতপরিচয় দুই বাঙ্গালি যুবক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।
২০০১ সালের ৩ জুলাই বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে অবসরে যান।
এর কয়েকদিন আগেই প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতির বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে।
এর আগে ‘কটূ মন্তব্যের কারণে’ তার অপসারণ চেয়ে ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছিলেন।
হাই কোর্টের বিচারক থাকাকালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী, কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার, বিজিএমইএ ভবন সংক্রান্ত মামলাসহ বহু আলোচিত রায় তার হাত দিয়ে আসে।
তিনি প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেওয়ার পর এর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি বলেছিল, বিচারপতি শামসুদ্দিনের পদক্ষেপ ‘বিচার বিভাগের উপর আঘাত’।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবর্ধনায় বিচারপতি শামসুদ্দিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ঘটিয়েছেন বলেও বিএনপির অভিযোগ।
. . . . . . . . .