এমপিদের যতো বিতর্কিত কাণ্ড
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০১৫, ১১:১৯ অপরাহ্ণটানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের এমপিদের ক্ষমতার দাপট বেড়েই চলেছে। নানা গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন মন্ত্রী-এমপিদের আত্নীয় স্বজনরা। অবস্থা এমন এসে দাঁড়িয়েছে যে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে তালিকা। এর কারণ হিসেবে তাদের আইন না মানার প্রবণতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
কয়েকদিন আগে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি করা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গুলি করে শিশু জখম করার দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে আছেন।
এর আগে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি পিনু খানের পুত্র বখতিয়ার আলম রনি রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের রাস্তায় রিকশার সামান্য যানজটে আটকে যাওয়ায় সংসদ সদস্যর স্টিকার লাগানো গাড়িতে বসে গুলি করে দুইজনকে খুন করেন।
টাঙ্গাইল-৩ আসনের এমপি আমানুর রহমান খান রানা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আছে।
সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ সামাদ চৌধুরী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জনপ্রিয় লেখক ড. জাফর ইকবালকে সিলেট বিদ্বেষী আখ্যা দিয়ে চাবুক মারার হুমকি দিয়েছিলেন।
আর ঠাকুরগাঁওয়ের এমপি দবিরুল ইসলাম তার ছেলেকে দিয়ে হিন্দুদের জমি দখল করে নিয়েছেন। এলাকায় তিনি এখন ‘বাপ-বেটার শাসন’ কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজারের আলোচিত এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মানব পাচারের অভিযোগ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ আছে। আছে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ। এছাড়া উখিয়া উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোস্তফা মিনহাজের অফিসে ঢুকে তার কলার ধরে মারধর ও গালিগালাজ করেছিলেন তিনি।
বিগত সংসদের সরকার দলীয় এমপি গোলাম মওলা রনি বিরুদ্ধেও সাংবাদিক পেটানোর অভিযোগ আছে।
দেশের আইন প্রণেতাদের এই অবস্থায় বেসরকারি টেলিভিশন দেশ টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, যারা ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার আলো পায়, তাদের ব্যবহারে যখন আইনের অপপ্রয়োগ হয় তখন তাদের বেপরোয়া আইন অমান্য করার অভ্যাস দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে কী করণীয় থাকতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংবিধানে এমন একটা আইন আছে যেখানে ‘আইনের চোখে সবাই সমান’ সেটা কার্যকর করা।
তিনি সাংসদদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ এবং আচরণ নির্ধারণে একটি আইন দরকার বলেও মনে করেন।
সেই সঙ্গে সেই আইনের মধ্যে বর্ণিত থাকবে তারা জনগণ এবং মানুষের সঙ্গে কি ধরণের আচরণ করতে পারবেন বা করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে একটা কমিটিও গঠনেরও সুপারিশ করেন দীর্ঘ সময় ধরে সংসদ কাভার করা এ অনুসন্ধানী সাংবাদিক।
‘সেই কমিটি ঠিক করবে কোন আচরণের জন্য কেমন শাস্তির বিধান থাকবে। সেই কমিটির মধ্যে সাংসদরাই থাকবেন, তারা যেমন ঠিক করবেন তেমনি সংসদের কমিটিই দেখাশুনা ও সুপারিশ করবে।’
‘তবে যেন কমিটি কোন অপরাধের জন্য কাউকে ছাড় না দেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ধরনের আইন পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। উন্নত দেশের কথা বাদ দিলাম, পাশের দেশের ভারতেও সাংসদদের আচরণের কারণে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়। যেমন ধরা যাক, কোন সাংসদ একটা অপরাধের জন্য তার শাস্তিস্বরূপ ৫ দিন সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবার ক্ষমতা রহিত করা হলো এমন।’
আইন থাকলে বর্তমান অবস্থারর মতোএমন হতো না বলেও মনে করেন তিনি।
তিনি সাংসদদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিষয়ে বলেন; তাদের সংসদ সদস্য হতে গেলে ন্যুনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগবে। তারা যেহেতু সংসদে বসে আইন প্রণয়ন করবে তাই তাদের একটা শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার।
সাংসদদের অনান্য জনপ্রতিনিধির মতো সহজে আইনের আওতায় আনা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা ইউনিয়ন পরিষদ অথবা উপজেলা চেয়ারম্যান তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণের আগেই তাদের সাজা (স্থগিতাদেশ) দেওয়া হয় কিন্ত সাংসদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আইন নেই।
এ ধরণের আইনের কোনো উদ্যোগ ছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, সাংসদদের আচরণবিধি নিয়ে ৫ বছর আগে সাবের হোসেন চৌধুরী সংসদে একটি বিল উত্থাপন করেছিলেন, কিন্ত সেই সময় সরকার এবং বিরোধী দলের তোপের মুখে সেটা বাতিল হয়ে যায়।
সূত্র : চ্যানেল আই অনলাইন
. . . . . . . . .