কুখ্যাত বাবুল ডাকাত গ্রেফতার : পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে আটক ৫ ডাকাত
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ অক্টোবর ২০১৫, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণবড়লেখা প্রতিনিধি::
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সাম্প্রতিক সময়ে চুরি-ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে গ্রেফতার হওয়া ৫ ডাকাত। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে গত ৯ অক্টোবর রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে এরা পুলিশের হাতে আটক হয়।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ডাকাতরা বড়লেখা উপজেলায় তাদের সহযোগি ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের নাম-ঠিকানাও পুলিশকে দিয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ডাকাতদের নিয়ে রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। গত ১০ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ডাকাতরা বড়লেখা, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট, জকিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘটে যাওয়া ডাকাতির বর্ণনা দিয়েছে।
বড়লেখা পৌর শহরের হাটবন্দ, তেলিগুল, হাজীগঞ্জ বাজারের স্বর্ণের দোকানে চুরিসহ কয়েকটি ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ডাকাতদের ওই সর্দার বড়লেখার একজন জনপ্রতিনিধির ব্যক্তিগত সহযোগি বলেও পুলিশকে জানিয়েছে ডাকাতরা। গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের বিরুদ্ধে পুলিশ ২টি মামলা করেছে। গত ১১ অক্টোবর পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করে। পরবর্তীতে অন্যান্য মামলায়ও রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বড়লেখা উপজেলায় সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কয়েকটি চুরি-ডাকাতির ঘটনার সাথে গ্রেফতারকৃতদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। থানা পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতির পরিকল্পনা হতো পৌর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট ও মিনিবাস স্ট্যান্ডে। ডাকাতদের দেয়া তথ্য ও মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্য যাচাইয়ে মাঠে নামে পুলিশ। এ সময় এ যোগসূত্রের সত্যতাও পাওয়া যায়। গ্রেফতারকৃতরা একই গ্রুপের সদস্য।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জয়নাল ডাকাত বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপি’র নান্দুয়া গ্রামের মৃত কুটন আলীর ছেলে। প্রায় এক বছর আগে পৌর শহরের একটি ভবনে পাহারাদারের কাজ করতো। প্রায় ৬ মাস পর পাহারাদারের কাজ ছেড়ে দেয় সে। গত ৫ সেপ্টেম্বর পৌর শহরের মৃত আব্দুল করিমের বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় বাসা ভাড়া নেয় জয়নাল। আগের স্ত্রীকে ১ মেয়েসহ তালাক দিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর বিয়ে করে জুড়ী উপজেলার জনৈক নারীকে। ২য় স্ত্রী পৌর শহরের এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো। হাটবন্দ এলাকার বাসায় বসবাসের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জয়নাল এক মাসে ৩ রাতও বাসায় থাকেনি। দিনে সে কোথাও বের হতো না। সে গ্রেফতার হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্রিকায় ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হলে তার সম্পর্কে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। চুরি সংঘটিত হওয়া দোকান মালিকরা তাকে দেখে সনাক্ত করেন। ডাকাতি ও চুরি হওয়া প্রতিটি দোকান আগে রেকি করতো ডাকাতরা।
চলতি বছরের ২৫ আগস্ট জয়নাল ডাকাত তার বোনকে সাথে নিয়ে পৌর শহরের দক্ষিণ বাজারের অপর্ণা জুয়েলার্সে যায় নূপুর তৈরির অর্ডারের কাজে। অপর্ণা জুয়েলার্সের মালিককে সে জানায়, নতুন বিয়ে করবে। এভাবে ৩দিন ওই দোকানে যায়। দোকানদারের সাথে তার গড়ে উঠে সখ্যতা। ২ হাজার টাকা মূল্যের নূপুর সে ১ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকিতে নিয়ে যায়। দোকানদারের দেয়া তথ্যমতে, গত ০২ সেপ্টেম্বর সে নূপুর ডেলিভারি নেয়। ১০ সেপ্টেম্বর অপর্ণা জুয়েলার্সের ঘরের টিন কেটে দোকান চুরি করে। ঈদুল আজহার ৩দিন আগে পরপর ২দিন চুরি হওয়া টাঙ্গাইল মুসলিম জুয়েলার্সের ৪র্থ শাখায় স্বর্ণের চেইন বিক্রি ও ক্রয় করতে দরদাম করে জয়নাল। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর ৪র্থ শাখায় দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। সঙ্গবদ্ধ চোরেরা ৬৬ ভরি স্বর্ণালংকার, ৭ ভরি রূপা, ৩ হাজার ২০০ টাকাসহ অন্তত ২৬ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।
২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে পৌর শহরের হাটবন্দের জয়নালের বাসায় যায় গোলাপগঞ্জের ফরমান আলীর ছেলে শামীম আহমদ ও বড়লেখা উপজেলার তাদের সর্দার আকাশ (ছদ্মনাম)। এ বাসায় বসে তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পৌর শহরের ডাকাতকবলিত বাসার বাসিন্দা ব্যবসায়ী গোপাল পালের ছেলের ঢাকা মিষ্টি ঘর-২ নামক দোকান থেকে সম্প্রতি বিয়ের কথা বলে জয়নাল মিষ্টি ক্রয় করে। দোকানদারের সাথেও সখ্যতা গড়ে ৫০০ টাকা বাকি রাখে। পুলিশের কাছে অন্যান্য ঘটনা ছাড়াও এ তিনটি ঘটনার সাথেও তাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
এদিকে পৌর শহরের তেলিগুল গ্রামের তজম্মুল আলী চৌধুরীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় আন্ত:জেলা ডাকাতদলের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। তার নাম বাবুল মিয়া (৩৮)। সে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কোণাগাঁও গ্রামের ফখর উদ্দিনের ছেলে। গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় মঙ্গলবার তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। সে পুলিশের কাছে পৌর শহরে তেলিগুলের ডাকাতি ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
বড়লেখা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মনিরুজ্জামান জানান, বাবুল মিয়া ইতোপূর্বে গ্রেফতার হওয়া ৫ ডাকাতের সহযোগি। সে পৌর শহরের তেলিগুলে সংঘটিত ডাকাতির সাথে জড়িত ছিল।
. . . . . . . . .