সন্দেহে আটক হয়ে ২২ বছর ধরে সিলেটের কারাগারে ফজলু মিয়া!
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৪৯ অপরাহ্ণনিউজ ডেস্ক:
কোনো অপরাধ না করেই কারাগারে ২২ বছর কেটে গেছে সিলেটের ফজলু মিয়ার। কত বছর বয়সে ফজলু কারাগারে ঢুকলেন কিংবা এখন ফজলুর বয়স কত তার সঠিক কোনো হিসাব কারো কাছে নেই। তবে তার জীবন থেকে যে ২২টি বছর চলে গেছে, তার হিসাব পাওয়া যায় কারাগারের নথিপত্র ঘেঁটে। আটকের সময় টগবগে যুবক থাকলেও এখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না ফজলু মিয়া। কথাও জড়িয়ে আসে তার।
১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সিলেটের আদালতপাড়া থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে ফজলুকে আটক করেন তৎকালীন ট্রাফিক সার্জেন্ট জাকির হোসেন। সন্দেহের বশে ৫৪ ধারায় ফজলুকে ধরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তারপর ফজলুর বিরুদ্ধে পাগল আইনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
পরে ২০০২ সালে ফজলুকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এই আদেশের পরও কেটে গেছে ১৩টি বছর। কিন্তু কারাফটক পার হতে পারছেন না ফজলু।
এ বিষয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ছগির মিয়া বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ যাই থাক না কেন, যেটাই থাক না কেন, আমরা তো গেটের বাইরে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি না। সমাজসেবা কর্তৃপক্ষ তাদের সেই দায়িত্বটা পালন করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘মূল বিষয়টা যাই হোক না কেন, অন্য কর্তৃপক্ষকে আমার কর্তৃপক্ষ… যারা আইনের এ ব্যাখ্যাকে বাইপাস করার জন্য বা নিজে বাঁচার জন্য হয়তো বা অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা দেবে যে তার আত্মীয়স্বজন পাওয়া যায় নাই। কিন্তু অবশ্যই তার আত্মীয়স্বজন আছে।’
আদালতের চোখে কোনো অপরাধ না করেও এ পর্যন্ত অন্তত ১৯৭ বার আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে ফজলুকে। দীর্ঘ এই ২২ বছরে যেমন সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশন হয়েছে, তেমনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা মামলাটি কোতোয়ালি থানার পরিবর্তে চলে গেছে দক্ষিণ সুরমা থানার অধীনে। সুরমা নদী দিয়ে বহু পানি গড়িয়ে গেলেও ফজলুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের কোনো কুলকিনারা হয়নি আজও।
ফজলুকে ছাড়িয়ে আনতে ২০০৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। কিন্তু তারপরও আইনের মারপ্যাঁচের কারণে এখনো কারাগারেই বসবাস ফজলু মিয়ার।
এ বিষয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘যদি তার দোষ খুঁজতে হয়, তার অন্যায় খুঁজতে হয়, এটুকুনই বলতে পারি –এ রকম একটা সমাজে ফজলু মিয়া জন্মগ্রহণ করেছে, যে সমাজ এ মানুষগুলোর প্রতি এত অসংবেদনশীল আচরণ করতে পারে।’
সময় যতই গড়াচ্ছে, আইনের গ্যাড়াকলে পড়ে ফজলুর কারাবাসের সময় ততই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফজলু কবে ছাড়া পাবেন কিংবা ছাড়া পেলেও আদৌ খুঁজে পাবেন কি না নিজের ঠিকানা সে প্রশ্নের কোনো নিশ্চিত উত্তর কারোই জানা নেই। সূত্র: এনটিভি অনলাইন
. . . . . . . . .