গোয়েন্দা নজরদারিতে সিলেটের এনজিও গুলো !
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ অক্টোবর ২০১৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণসিলেটে জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে এবার ৭৫টি এনজিওকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এমনকি এই ৭৫টি এনজিওর তালিকা তৈরী করে তাদের কর্মতৎপর ও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহকৃত অর্থ তারা সিলেটে কিভাবে কাদের পেছনে ব্যায় করছে তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ। তদন্তকালীন সময়ে যদি এসব এনজিও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
এমনকি অধিকাংশ এনজিও সিলেটের জেলা প্রশাসকের তালিকাভুক্ত নয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত না হওয়ার পরেও এসব এনজিও কিভাবে সিলেটে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়? এনজিওগুলো দ্বিনী শিক্ষার আড়ালে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকি এসবের পেছনে কারা সময় দিচ্ছেন তাদেও উদ্দেশ্যেও কি সে ব্যাপারেও তথ্য নিচ্ছেন গোয়ন্দা পুলিশ।
সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে লন্ডনভিত্তিক নেটওয়ার্কে পরিচালিত পাঁচ এনজিও জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত রয়েছে বলে সরকারের কাছে খবর এসেছে। এই পাঁচটি এনজিও হলো কাতার চ্যারেটি অব বাংলাদেশ, রাবেতা আল ইসলামি, বাংলাদেশ মসজিদ মিশন, গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার ও ইসলামি রিলিফ বাংলাদেশ। তবে এদের মধ্যে সাহায্যভিত্তিক এনজিও ইসলামি রিলিফ বাংলাদেশের কার্যালয় সিলেটের উপশহরের বি-ব্লকের ২২ নম্বর রোডে। এটি সিলেটের জেলা প্রশাসকের অফিসে তালিকাভুক্তও। বাকি এনজিওর একটিও জেলা প্রশাসকের অফিসের তালিকায় নেই। অথচ সিলেটে তাদের তৎপরতা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কাতার চ্যারেটি বাংলাদেশ কাতারভিত্তিক এনজিও। ঢাকায় তাদের একটি অফিস আছে। বাংলাদেশের আর কোথাও তারা অফিস নেয়নি। তবে রাজশাহী ও সিলেটে তারা এতিমখানাভিত্তিক কাজ করে আসছে। একসময় সিলেটের অখ্যাত মার্কেটগুলোতে তারা গোপনে কার্যালয় নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করত। এখন গোয়েন্দা নজরদারির কারণে অফিস বন্ধ করে দায়িত্ব অনেকটাই প্রাপ্তরা লাপাত্তা। রাবেতা আল ইসলামি সৌদিভিত্তিক এনজিও সংস্থা। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম এর দায়িত্বে ছিলেন। এটি ইসলামি গবেষণায় পরিচালিত হয়ে আসছে। বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশে ইসলামি বই প্রকাশে এরা কাজ করছে। কিন্তু সিলেটে এরা জিহাদি বই প্রকাশে জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ মসজিদ মিশন সৌদি ও পাকিস্তানভিত্তিক একটি এনজিও। রাবেতা ও মসজিদ মিশনের কাজ একই। এরা বাংলাদেশে একে অন্যের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশে মসজিদে মসজিদে দাওয়াতি কাজে মসজিদ মিশন কাজ করছে। সিলেটে ইসলামি দাওয়াতের পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতায় এটি জড়িত বলে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও হচ্ছে গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার। যদিও নেদারল্যান্ডে এদের সদর দফতর। কিন্তু বেশির ভাগই পাকিস্তানি এনজিওটির মূল পদগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত। ইতোপূর্বেই গ্লোবাল রোহিঙ্গার জঙ্গি অর্থায়নে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। পাকিস্তানের নাগরিক মুহম্মদ আলম এই এনজিওর পরিচালক ছিলেন। তাকে গোয়েন্দারা জঙ্গি বিস্ফোরক মামলায় আটক করেছিল। চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশি পুলিশ কক্সবাজারে হোটেলে গোপন বৈঠককালে এই এনজিও পরিচালক আলমসহ পাঁচজনকে আটক করেছিল।
সূত্রে আরো জানা যায়, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানজুড়ে রয়েছে একটি জঙ্গি জাল। যারা আলকায়েদার সঙ্গে জড়িত। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সাথেও এর যোগসাজশ আছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। সিলেটে রেলওয়ে প্লাটফর্মে জাদিদ আলকায়েদার প্রচারপত্রসহ বিস্ফোরণ হয়েছিল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি পুলিশ কূলকিনারা করতে পারেনি। একপর্যায়ে জাদিদ আলকায়েদার সিলেটে অস্তিত্ব নেই বলে ফাইনাল রিপোর্ট দেয় পুলিশ। গোয়েন্দাদের ধারণা, রোহিঙ্গা সেন্টারের তৎপরতা গোপনে সিলেটে আছে। তবে এখনো সিলেটে প্রকাশ্যে তাদের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সিলেটে ইসলামি রিলিফ বাংলাদেশ মূলত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তারা সিলেটে সাহায্যভিত্তিক কাজ করছে। প্রতি বছর কোরবানির সময় গরু কোরবানি, দুর্গতদের ও পঙ্গুদেরকে সাহায্য করে আসছে। তার পরও এই সংস্থাটির কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কয়েকটি এনজিও যুদ্ধাপরাধী ও সৌদি বাদশা কর্তৃক পরিচালিত হওয়ায় গোয়েন্দাদের সন্দেহের তালিকায় আনা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম জানান, সিলেটে ৭৫টি এনজিও ব্যাপারে ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এদের নানাবিধ কার্যক্রম মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। তাদের অর্থেও উৎস ও অর্থ ব্যায়ের বিভিন্ন খ্যাত সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশের কয়েক টিম ভাগ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
. . . . . . . . .