কুনিও হত্যা: এক মাস চারদিনেও কিলাররা অধরা
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ নভেম্বর ২০১৫, ১১:০৬ পূর্বাহ্ণজাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যার এক মাস চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কিলারদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার হয়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও মোটরসাইকেলটি। তদন্তে তেমন অগ্রগতি দেখা না দিলেও তদন্ত কমিটি বলছে হত্যার তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। তবে কী অগ্রগতি হয়েছে তা তারা প্রকাশ করতে নারাজ।
গত ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারি গ্রামে মোটরসাইকেলে চড়ে আসা মুখোশধারী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও। ঘটনার পরপরই কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজেই বাদী হয়ে অজ্ঞাত তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে।
হত্যাকাণ্ডের দিন বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা চারজনের মধ্যে হোশি কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির হীরা, রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথম দফায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
রিমান্ডে নেয়ার চারদিনের মাথায় বিপ্লবকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। হুমায়ুন কবির হীরার রিমান্ড শেষে পুলিশ দ্বিতীয় দফায় আরো দশ দিনের এবং পরে অন্য একটি হত্যা মামলায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এখন তারা দুজনই জেল হাজতে রয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, জাপানি নাগরিক হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হুমায়ুন কবির হীরা ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডে নির্দেশদাতা হিসেবে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহলের জড়িত থাকার বিষয়ে জানিয়েছেন। সোহেল তার ঘনিষ্ট রংপুর জেলা মৎস্যজীবীদলের আহ্বায়ক কামাল হোসেনের সঙ্গে পরামর্শ করে ভাড়াটিয়া কিলারদের মাধ্যমে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে গুলি করে হত্যা করে।
দু’দফার জিজ্ঞাসাবাদে হীরার কাছ থেকে হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে এমন দাবি করা হলেও মামলার তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে অপারগতা দেখান তদন্ত কর্মকর্তারা।
এদিকে, হীরার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মূলহোতাদের গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু একমাস চারদিন পার হলেও এখনো কোনো কিলারকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উদ্ধার করতে পারেনি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও পিস্তলটি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিপ্লব ও হীরাসহ সন্দেভাজন বেশ ক’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বর্তমানে সে তথ্যগুলো আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তিন মূলহোতাকে গ্রেপ্তারে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া হোশি কুনিও হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী জাপানির নাগরিকের ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির হীরার বড় ভাই রংপুর জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামাল হোসেনের সঙ্গে পরামর্শ করে ভাড়াটিয়া কিলারদের মাধ্যমে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওকে গুলি করে হত্যা করে। তাকে গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
এ সময় মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে দাবি ওসি বলেন, ‘বিদেশি নাগরিক কুনিও হত্যা সম্পর্কে খুব দ্রুত দেশবাসী সবকিছু জানতে পারবে।’
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কমিটির প্রধান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, ‘মামলার অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে এখন কিছু বলতে পারছি না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে জানতে পারব বলে মনে হচ্ছে।’
. . . . . . . . .