কাজের মেয়ে নাজমার উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ অক্টোবর ২০১৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ণএবার বাসার কাজের মেয়ে নাজমা বেগমকে (১৬) গরম পানি ঢেলে কোমর থেকে বাম পায়ের উরু ও পা পর্যন্ত ঝলসে ও বেলান দিয়ে পিটিয়ে জীবন পঙ্গু করে দিয়েছে নির্যাতনকারীরা। ১৭ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাজমা বেগমের অবস্থা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাম পা প্রায় অচল। চিকিৎসকরা তার বাম পায়ের উরু এবং হাটুর নিচ থেকে পা পর্যন্ত প্লাস্টার করে দিয়েছেন। চোখ দু’টিতে কিলঘুষি মারায় চোখের নিচভাগ কালো হয়ে রক্ত জমাট হয়ে গেছে। নাজমার পাশে বসা বড়বোন আলেয়া বেগম ও মা ফাতিমা বেগম বলেন, নাজমার চোখ দিয়ে ঘটনার সময় অনেক রক্ত বের হয়েছে। তার চোখ দু’টি ভবিষ্যতে অন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা। নির্যাতিত কিশোরী নাজমা বেগম এখন সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৬নং ওয়ার্ডের ১০নং সিটে চিকিৎসাধীন আছেন। নাজমা জানায়, লাকসামের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে গিয়ে লুৎফা তাকে অবৈধ কাজের প্রস্তাব দেয়। সে ঐ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার চোখে কিলঘুষি মারে ও কোমরে গরম পানি ঢেলে দেয়। এতে বাম পা ও উরুর অংশ ঝলসে যায়। এছাড়াও কাঠের বেলান দিয়ে ডান ঘাড়ে পিটিয়ে জখম করে। এ প্রতিবেদককে নাজমা আরো জানান, ঐ কুপ্রস্তাবে রাজি করার জন্য তাকে তারা বাসার রুমে রেখে নির্যাতন চালাতো। প্রতিদিন এক বেলা অল্প বাসি খাবার দিত। সেখানে নাজমা অসুস্থ হয়ে পড়লে অবস্থা বেগতিক হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহে লুৎফা, ভাই রাফি ও সামাদ মিলে নাজমাকে লাকসাম থেকে পিতার বাড়ী বড়লেখার সুজাউল বাজারের পাঁচপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসে। এখানে তারা নাজমা বেগমকে গরু ঘরে নিয়ে রশি দিয়ে বেধে ৬ দিনযাবৎ বন্দি করে রাখে। নাজমার কোন খোঁজ না পাওয়ায় লাকসামের কেউ ফোন রিসিভ না করায় মা ফাতেমা ও পিতা মনছুর আলী লুৎফার পিতা সৌদি প্রবাসী আজির উদ্দিনের পাঁচপাড়ার বাড়িতে যান। তখন তারা লুৎফার মায়ের কাছে নাজমাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবী করেন। এক পর্যায়ে গরু ঘরে গিয়ে দেখতে পেয়ে পিতামাতা নাজমাকে উদ্ধার পরবর্তী দেন দরবার করে পঙ্গু অবস্থায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান বলে নাজমার পিতা-মা ও বড়বোন আলেয়া (২৭) জানান। দিনমজুর পিতা মনছুর আলী বলেন, প্রায় ১ বছর আগে বড়লেখা থানার সুজাউল বাজারের পাঁচপাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী আব্দুল মালিক দুদু’র স্ত্রী ও নির্যাতনকারী লুৎফার ছোট চাচি রুবি বেগম স্থানীয় বিছরাবন্দ গ্রামের গরীব মনছুর আলীর কিশোরী মেয়ে নাজমা বেগমকে সংগ্রহ করে লুৎফার মা রাবেয়া আক্তারের কাছে ১ বছর বাসার কাজের চুক্তিতে মাসিক দুই হাজার টাকা বেতন পাইয়ে দিবেন বলে পৌছে দেন। এরপর রাবেয়া আক্তার কিছু দিন তিনির বাড়িতে গৃহস্থালীর কাজে খাঁটিয়ে মেয়ে লুৎফার লাকসামের বাসায় নিয়ে দেন। নাজমার মা ফাতেমা বেগম বলেন, এক বছরের মধ্যে মাত্র এক মাসের বেতন তারা মেয়েকে দিয়েছে। আর বাদ বাকী মাসের বেতন নির্যাতনকারীরা তাকে দেয়নি। মা ফাতেমা তার মেয়ে নাজমা পঙ্গু হয়ে গেছে একথা বলে কেঁদে কেঁদে বলেন, নাজমা কোন মতে হাটা চলা করতে পারছে না। তার জীবন বিপন্ন হয়ে গেছে। এ দুঃখ এখন আল্লাহ ছাড়া আর কার কাছে বলবো। পিতা মনছুর আলী আরো বলেন, মেয়ের অবস্থা দেখে বুক ধরাতে পারিনি। তিনি বলেন, বড়লেখা থানায় গিয়ে গত ৬ অক্টোবর নির্যাতনকারীদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৮। এ ঘটনার মামলায় লুৎফা ১নং, মা রাবেয়া ২নং, চাচি রুবি বেগম ৩নং আসামী হন। থানা পুলিশ ঐদিন ২নং আসামী রাবেয়া আক্তারকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করে। এরপর রাবেয়া অল্প দিন জেল খেটে জামিন বের হয়ে যান। পুলিশ আর কাউকে গ্রেফতার করেত পারেনি। এ প্রতিবেদক বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামানের সাথে শনিবার রাত পৌণে আটটায় কথা বলেন। ওসি জানান, কাজের মেয়ে নির্যাতনের ঘটনায় থানার একজন উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এস.আই)কে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন নির্যাতিত কিশোরী নাজমা বেগমের জবানবন্দি গ্রহণ করেন। ওসি বললেন, বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর কিশোরী নাজমা বেগম নির্যাতনের ঘটনার কথা শুনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, যেই অপরাধী হোক না কেন তাকে আইনের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন। বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট গোপাল চন্দ্র দত্ত বলেন, তিনি নাজমার উপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের বিষয় জেনে মানবাধিকার রক্ষায় সচেতন মহলকে নির্যাতিতা নাজমার পাশে দাঁড়ানোর আহবান।
. . . . . . . . .