বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন শুরু সোমবার

সিকডে
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৫:০৪ অপরাহ্ণঅন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার ছয় মাস পর নয়াদিল্লিতে সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৫তম এ সম্মেলন শেষ হবে ২০ ফেব্রুয়ারি।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিজিবির সদর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়, সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর ও যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করবেন।
অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবেন।
ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করবেন।
এবারের সম্মেলনে- সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, সীমান্ত হত্যা, আহত, আটক বা অপহরণ রোধ; ভারত থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ দ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধ; আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ বিশেষ করে ভারত সীমান্ত দিয়ে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধ; সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়াসহ অননুমোদিত অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ নিয়ে আলোচনা হবে।
বিজিবির সদর দপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, চলমান উন্নয়নমূলক কাজের নিষ্পত্তি; আগরতলা থেকে আখাউড়ার দিকে প্রবাহিত সীমান্তবর্তী ৪টি খালের বর্জ্য পানি অপসারণে উপযুক্ত পানি শোধনাগার স্থাপন; জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সাথে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ; আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্যাম্পের সম্ভাব্য অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়; সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং পারস্পরিক আস্থা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ নিয়ে আলোচনা হবে।
সম্মেলন শেষে ২০ তারিখেই বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
গত বছরের মার্চে ঢাকায় সর্বশেষ এই দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪,২৪৬ কিলোমিটার যার ৯৪ শতাংশই ভারতের সঙ্গে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। বিএসএফকে বেড়া নির্মাণে বাধা দেয় বিজিবি। এরপর বিজিবির সাথে স্থানীয় বাসিন্দারাও উপস্থিত হয়ে বেড়ার প্রতিবাদ করে। অপরপাশে ভারতীয় নাগরিকরাও বিএসএফের পক্ষ নিয়ে সীমান্তে উপস্থিত হয়। এ নিয়ে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়।
এছাড়া, ভারতের মালদার শুকদেবপুর সীমান্তে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত) বিএসএফ দেড় কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করে। এ ঘটনাতেও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে ডেকে বাংলাদেশ উদ্বেগ জানায়। এরপরই ভারতও নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার নুরাল ইসলামকে তলব করা হয়।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের যে সীমান্ত সম্মেলন হতে যাচ্ছে, সেখানে সীমান্ত হত্যা ও মাদকের কারবারসহ যাবতীয় সমস্যা নিয়ে অতীতের তুলনায় ‘ভিন্ন সুরে’ কথা হবে।”
জাতীয়/আবির