ইইউর মতো মুসলিম বিশ্বের ইসলামিক জোট কি সম্ভব?
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩:৫০ অপরাহ্ণ
গত ৮ সেপ্টেম্বর গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। এরপর কায়রোতে আরব লীগের ১৬২তম পররাষ্ট্র অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে এক চেতনায় বলিয়ান হওয়ার বার্তা দেন।
অন্যদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর ইরাক সফরে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেকশিয়ান মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোকে নিয়ে ফোরাম গঠনের কথা বলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত সীমান্ত চান তিনি।
গাজা ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে একতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তবে আসলেই কি তুরস্কের প্রস্তাবিত ইসলামিক জোট গঠন করা সম্ভব?
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এরদোগান এরইমধ্যে মিশরের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথে হেঁটেছেন। ক্ষমতাগ্রহণের দীর্ঘ ১২ বছর পর সম্প্রতি তুর্কি সফরে যান মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। মুসলিম ব্রাদারহুড ইস্যুতে তুর্কি-মিশর তিক্ততার কথা নতুন নয়। কিন্তু গাজা ইস্যু দুই মুসলিম দেশের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু তাই নয়, সিরিয়া বাশার আল আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নমনীয় হচ্ছে আঙ্কারা।
আজ থেকে ৫১ বছর আগে যৌথভাবে ইসরায়েল আক্রমণ করেছিল মিশর এবং সিরিয়া। ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ‘ইয়ম কিপুর’–এর দিন ইসরাইলে হামলা চালায় মিসর ও সিরিয়া। সে সময় মুসলিম বিশ্বের মধ্য একতা ছিল। কিন্তু আঞ্চলিক পরিসরে নানা দ্বন্ধে জড়িয়ে বিভাজন তৈরি হয়েছে।
১৯৭৩ সালে মিশর এবং সিরিয়ার আকস্মিক হামলায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল ইসরাইল। দেশটির নেতারা ভাবতেই পারেননি, মাত্র ছয় বছর আগে (১৯৬৭) পরাজয়ের পর কোনো আরব রাষ্ট্র ইসরাইলে দিকে হামলার সাহস পাবে।
এবার গত বছরের ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরাইলি সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তাই অনেকে হামাসের হামলাকে সেই ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ সেই হামলাও আঁচ করতে পারেনি ইসরাইল। যার বদলা নিতে আজ ১১ মাস ধরে গাজায় নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে আসছে নেতানিয়াহু সরকার।
ইসরাইলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গত শাসনামলে বেশ কিছু উদ্যোগ নেই মার্কিন প্রশাসন। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের ‘আব্রাহাম অ্যাকড’ নামে একটি চুক্তি হয়। এই চুক্তির প্রতিবাদে নিয়ন্ত্রিত গাজা থেকে রকেট হামলা চালিয়েছিল হামাস। পশ্চিমারা বলছে, আব্রাহাম অ্যাকড মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথ দেখাবে। কিন্তু আদতে তা কাজে লাগেনি।
২০২৪ সালের শেষ দিকে এসে এ কথা বলা যায়, বরং এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরো বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্য আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। ইরান কখনো চাইবে না ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক আরব দেশগুলোর। অনেক বিশ্লেষক দাবি করে আসছে, ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে সৌদি আরবের অগ্রগতি থামাতে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে হামাস। সেটাও এখন পরিস্কার।
চলমান পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের মুখে ইসলামিক জোটের আকুতি গত কয়েক দশকে এতো তীব্রভাবে দেখা যায়নি। ইসলামিক জোট
গঠন সম্ভব না হলেও, ভ্রাতৃত্ববোধ, সংহতির জায়গায় মুসলিম দেশগুলো একে অপরকে অনুভব করছে সেটাও বা কম কিসে।
জাতীয়/আবির