বড়খাল কলেজের সাবেক সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষের পেটে ২ লক্ষাধিক টাকা
সোহেল মিয়া,দোয়ারাবাজার(সুনামগঞ্জ):
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:০০ পূর্বাহ্ণসুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক গভর্নিংবডির সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহিরুল হাসান ভূইয়া।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়.বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ ২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করে। আওয়ামী রাজনীতির এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী গভনিংবডির সভাপতি জামাল উদ্দিন ও কতিপয় সদস্যরা বিধি বহির্ভূত ভাবে স্কুল শাখার শিক্ষক মোঃ আইয়ুব খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আইয়ুব খাঁন দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৫ অক্টোবর বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের গভনিংবডির মিটিংয়ে (সভা নং ০৪/২৩.এজেন্ডা নং ০৩) সদ্য পদত্যাগি অধ্যক্ষ নজির আহমদকে গ্র্যাচুইটি অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এতে চলতি বছরের ৫ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক.বাংলাবাজার শাখা থেকে চেকের মাধ্যমে তৎকালীন গভনিংবডির সভাপতি জামাল উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আইয়ুব খাঁনের যৌথ স্বাক্ষরে দুই খাতে ( দুই লক্ষ একাশি হাজার পাঁচশত চল্লিশ) টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে গ্র্যাচুইটি বাবদ (এক লক্ষ পঁচানব্বই হাজার নয়শত আটাশি) টাকা আত্মসাত করে নেয় তারা।
যদিও অভিযোগ সূত্রে আরও উঠে এসেছে. ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল গভনিংবডির (০৫/২/ নং সভার ৫নং) আলোচ্য সূচী অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক,কর্মচারী অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে অবসরপ্রাপ্ত হলে বা মারা গেলে তিনি বিধি মোতাবেক গ্র্যাচুইটি প্রাপ্ত হবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করায় তার ক্ষেত্রে গ্র্যাচুইটি প্রাপ্তির গত ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল গভনিংবডির (০৫/২) সভার ৫নং) আলোচ্য সূচীর সিদ্ধান্তটি প্রযোজ্য হবে না। এক্ষেত্রে গভনিংবডির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আইয়ুব খাঁন প্রতিষ্ঠানের অর্থ প্রতারণার আত্মসাতের উদ্দেশ্যে বাংলাবাজার কৃষি ব্যাংকের শাখা থেকে সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ’র গ্র্যাচুইটি বাবদ ( এক লক্ষ পঁচানব্বই হাজার নয়শত আটাশি) টাকা উত্তোলন করে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজে অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্র্যাচুইটি প্রদানে একটি রেজিষ্টার খাতা রয়েছে। খাতায় উল্লেখিত আছে বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজ হতে অবসর গ্রহণ বা চাকরীরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন এমন ব্যক্তি / তার বৈধ ওয়ারিশ প্রত্যেকে উক্ত রেজিষ্টার রেভিনিউ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে গ্র্যাচুইটির অর্থ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ গ্র্যাচুইটির অর্থ গ্রহণ করার কোন প্রমান রেজিষ্টার খাতায় পাওয়া যায় নি। এতে স্পষ্ট যে সাবেক গভনিংবডির সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আইয়ুব খাঁন আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই কলেজের টাকা উত্তোলন করে নেয়।
এর আগে গত ১৯ আগষ্ট বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ’র বেতন ভাতা স্থগিত রাখতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন গভনিংবডির সদস্য কাজিম উদ্দিন। অভিযোগে জানা যায়. সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ পদত্যাগের পর গভনিংবডির সভাপতি জামাল উদ্দিন আওয়ামী সরকারের ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য,সাবেক গভনিংবডির সভাপতি ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূত ভাবে স্কুল শাখার শিক্ষক ( জুনিয়র) আইয়ুব খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। উদ্দেশ্য স্থানীয় এমপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও আওয়ামী রাজনীতির সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদের অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া।
এর আগে চলতি বছরের ৪ মার্চ বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নজির আহমদ’র অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন কলেজ শাখার অভিভাবক প্রতিনিধি কাজিম উদ্দিন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে সুনামগঞ্জ আদালত দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন। এতে গত ২৫ জুন দুদক সিলেট অঞ্চল মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং অভিযোগের সাথে সংযুক্ত মামলার সকল কাগজাদি পরিক্ষা নিরীক্ষা করে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়. বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক গভনিংবডির সভাপতি ইদ্রিস আলী’র সুপারিশে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্যের সাংগঠনিক প্রভাব বিস্তার করতে
আওয়ামী রাজনীতিতে বিশ্বাসী নজির আহমদকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নজির আহমদ অধ্যক্ষ থাকাকালীন গভনিংবডির যোগসাজশে বড়খাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়,শিক্ষকদের বেতন ভাতা বন্ধ, কলেজের উন্নয়নমূলক কাজে অনিয়মের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন সময় স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে অনিয়ম-দুর্নীতির দায় কাঁদে নিয়ে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর তোপের মুখে অধ্যক্ষের পদ হতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নজির আহমদ। এর পর তার অনিয়ম-দুর্নীতিগুলো ধামাচাপা দিতে গভনিংবডির সভাপতি দলীয় ক্ষমতার প্রভাবে অনিয়মের মাধ্যমে স্কুল শাখার শিক্ষক আইয়ুব খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। পরে সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের যোগসাজশে বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের নানান অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করার পায়তারা করে।
এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান.অভিযোগ পেয়েছি. তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাদেশসংবাদ/হা