মাঠে নেই বিএনপি,সক্রিয় আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী
এম এ হান্নান
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:০২ পূর্বাহ্ণআসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামিলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে বলেছেন- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা সব দলের অংশগ্রহণ চাই। প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ ভোটে যাকেই নৌকা দেওয়া হবে তাকে নিজগুণে জিতে আসতে হবে। দলের নীতিনির্ধারকদের এমন কথায় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেট জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
তবে, সিলেট জেলার ৬ টি আসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আয়তনের দিক থেকে তিনটি উপজেলা (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) নিয়ে গঠিত বৃহত্তম নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত
সিলেট -৪ সংসদীয় আসন। ঐতিহ্যবাহী পর্যটনস্পট জাফলং, সাদাপাথর,বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, লালাখাল, শ্রীপুর ও ভোলাগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের বেশীরভাগ পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান আসনটিতে। সরকারের বিপুল রাজস্ব আয়ের উৎস পাথর কোয়ারির জন্য অতি পরিচিত সিলেট-৪ আসনের দিকে বিশেষ নজর থাকে সকলের। জনগুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে আগামী নির্বাচনে কাকে চায় জনগন তা এখনো ভেসে উঠেনি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামিলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী প্রচারণা চালালেও নিরব রয়েছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত দুই প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন দলীয় সিগনাল প্রাপ্ত সম্ভাব্য প্রার্থী। জাতীয় পার্টি,স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ এই পর্যন্ত সম্ভাব্য ১৪ জন প্রার্থীর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত আসনটিতে আওয়ামিলীগের ৭ বার বিএনপি প্রার্থী ৩ বার,জাপা দুই ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
বেশিরভাগ সময় আওয়ামিলীগের দখলে থাকা আসনটি নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিএনপি ভাল প্রার্থী বাছাই করতে ভুল করলে চিরতরে এ আসনটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মন্তব্য করছেন। জামায়াত প্রার্থীর সক্রিয়তা এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরাট একটি অ়ংশের উপর তার প্রভাব আগামী দিনে এ আসনটি জামায়াতের দখলে চলে যাওয়ার সম্ভাবনার সূর উঠেছে।
আসনটিতে আওয়ামিলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন,প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী (বর্তমান এমপি) ইমরান আহমদ,ব্যবসায়ী গোলাপ মিয়া,সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডিশনাল পিপি এডভোকেট মাহফুজুর রহমান,বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ও সিলেট জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী।
বিএনপি থেকে-সিলেট সিটি কর্পোরেশনর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী,বিএনপি’র প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের সহধর্মিণী এডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম,লন্ডন বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দীন,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম চৌধুরী,এডভোকেট কামরুজ্জামান সেলিম প্রচারনা চালাচ্ছেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব জয়নাল আবেদীন,প্রবাসী কমিউনিটি নেতা ও সাবেক শিবির নেতা ব্যারিস্টার আবু সাদাত মো.সুহেল(ডালিম), জাতীয় পার্টি থেকে- এ টি ইউ তাজ রহমান, সাংবাদিক মুজিবর রহমান ডালিম।অন্যদিকে,স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির সাবেক নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান’র নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে খেলাফত মজলিস,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়ত,বাসদ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কারো নাম এখনো শোনা যায়নি।
সরেজমিনে সিলেট-৪ আসনের বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,কেউ কেউ এ আসনে বর্তমান এমপি ইমরান আহমদের বিকল্প হিসেবে আপাতত অন্য কাউকে নিয়ে ভাবছেন না। পাথর কোয়ারী বন্ধ,রাস্তা ঘাটের ভগ্নদশা হলেও বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। হাইটেক পার্ক, ইকোনমিক জোন,ফায়ার সার্ভিস, ভূমিহীনদের গৃহ ও জমি প্রদান,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ।সম্পদের চেয়ে কাংখিত উন্নয়ন না ঘটলেও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে আওয়ামী বলয়ের বাইরে যেতে চাচ্ছেন না তারা।
আবার কোন কোন ভোটারদের মতে,জনগনের নাগরিক সুবিধাসহ কাংখিত উন্নয়ন না হওয়ায় আসনটিতে নতুন মুখ হিসেবে অন্য কাউকে দেখতে চায়। তাদের মতে প্রার্থী পরিবর্তন হলে, ক্ষমতা পরিবর্তন হবে। আর ক্ষমতা পরিবর্তন হলে কাংখিত উন্নয়ন পাওয়া যাবে।
জানা গেছে,বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামিলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। আওয়ামিলীগের নীতিনির্ধারকেরা ইমরান আহমদকে প্রার্থী চুড়ান্ত করেন। পরে সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে গণভবনে ডেকে নিয়ে যান। ভবিষ্যৎ লক্ষ করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন৷
অপরদিকে, বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিমের শূন্যতা অনুভব করছে বিশাল জনগোষ্ঠী। তরুণ ভোটারদের সাথে আলাপকালে জানা যায়,জামায়াতের জয়নাল আবেদীন হতে পারেন দিলদার হোসেন সেলিমের বিকল্প। দিলদার হোসেন জৈন্তাপুরের দুই বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন থেকে তিনি মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন।নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে আওয়ামিলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারে জামায়াত।
সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক এম পি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন,প্রতিটা আসনে প্রার্থী মনোনয়নের জন্য দলের নির্বাচনী বোর্ড আছে।দলীয় প্রধান দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তা ঠিক করে থাকেন।সিলেট -৪ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে একাধিক প্রার্থীর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামিলীগ এদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাচীনতম একটি রাজনৈতিক দল।এ দলে কর্মীর সংখ্যা যেমন বেশী,তেমনি নেতাদের সংখ্যাও বেশী।তিনি বলেন,প্রতিযোগিতা আছে প্রতিযোগিতা থাকবে।আওয়ামীলীগ প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী, প্রতিহিংসায় নয়।
সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন,আমরা আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত আছি।নির্বাচন নিয়ে সিলেট কেনো,কোন আসনেই আপাতত চিন্তা করছি না। আন্দোলনই বলে দিবে নির্বাচন কোনদিকে যাবে।
সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন,সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন এর সাথে আপনি যোগাযোগ করুন।উনাকে জামায়াতের পক্ষ থেকে ক্যান্ডিডেট দেয়া হয়েছে।দলের সিটি আমীর হিসেবে দলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের আলাদা জেলা কমিটি আছে। উনি তো জেলা সেক্রেটারি।তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না।
সিলেটসংবাদ/হান্নান