বিনা হিসাবে যারা জান্নাতে যাবে।
সিডকে
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১:১৮ অপরাহ্ণমানুষের হায়াত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। নির্দিষ্ট সময়ের বেশি এক মুহূর্তও কেউ এ পৃথিবীতে থাকতে পারবে না। এটাই আল্লাহর বিধান। নির্দিষ্ট জীবনকাল অতিবাহিত হওয়ার পর তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। থাকতে হবে দীর্ঘকাল কবর জগতে। এরপর হাশরের ময়দানে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাকে। দিতে হবে সারা জীবনের হিসাব-নিকাশ। হাশরের মাঠের অবস্থা হবে খুব ভয়াবহ। সূর্য থাকবে তখন মাথার খুব কাছে। যে কারণে ঘামের স্রোত বয়ে যাবে, মানুষ হাবুডুবু খাবে তাতে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, সেটি থাকবে তাদের থেকে এক মাইল দূরে। মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারও ঘাম হবে টাখনু সমান, কারও হাঁটু সমান, কারও কোমর সমান, কারও হবে মুখ সমান।’ মিশকাতুল মাসাবিহ : ৫৫৩০
কঠিন হাশরে কেউ কারও হবে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সবার মুখে থাকবে ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি (আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান)। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সেদিন মানুষ পালাবে নিজের ভাই, নিজের মাতা-পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তান থেকে। যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর এমন অবস্থা এসে পড়বে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।’ সুরা আবাসা : ৩৪-৩৭
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘হাশরের ময়দানে কষ্ট লাঘব হওয়ার জন্য মানুষ নবীদের কাছে সুপারিশের জন্য ছোটাছুটি করবে; কিন্তু তারা সুপারিশ করতে অস্বীকৃতি জানাবেন এবং বলবেন, নাফসি নাফসি (আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান) শুধু আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) তখন সুপারিশ করবেন।’ সহিহ বোখারি : ৩৩৪০
হাশরের এমন ভয়াবহ অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় কিছু বান্দাকে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদিন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার কাছে সব উম্মতের লোকদের পেশ করা হলো। আমি দেখলাম, দু-একজন নবীর সঙ্গে মাত্র অল্প কয়জন উম্মত রয়েছে। কোনো কোনো নবীকে দেখলাম তার সঙ্গে কোনো উম্মতই নেই! এরই মধ্যে বিরাট একটি কাফেলা আমার সামনে আনা হলো। আমি মনে করলাম, এটাই বুঝি আমার উম্মত; কিন্তু আমাকে বলা হলো যে, এটা হজরত মুসা (আ.) ও তার উম্মত। আপনি অন্য দিগন্তে তাকান। অতঃপর আমি সেই দিকে তাকাতেই আরও একটি বিরাট দল দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হলো, এটি আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে এমন ৭০ হাজার লোক আছে, যারা বিনা হিসাবে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা বলে তিনি (আল্লাহর রাসুল) উঠে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকরা (উপস্থিত সাহাবিরা) ওইসব জান্নাতি লোকের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিলেন, (কারা হবে সে সৌভাগ্যবান লোক) যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে?
কেউ কেউ বলল, আমরা আল্লাহর প্রতি ইমান এনেছি এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করে থাকি। সুতরাং আমরাই তাদের অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ বলল, তারা হলো আমাদের সেসব সন্তান, যারা ইসলামি যুগে জন্মগ্রহণ করেছে। আর আমাদের জন্ম হয়েছে জাহেলি যুগে। নবী করিম (সা.)-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, তারা হলো সেসব লোক, যারা অন্যের কাছে ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না, কুলক্ষণ গণনা করে না, দাগ কেটে চিকিৎসা করায় না; বরং তারা স্বীয় রবের ওপর ভরসা রাখে। তখন উকাশা ইবনে মিহসান (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আরেকজন দাঁড়িয়ে বলল, আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, ‘উকাশা এ ব্যাপারে তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।’ সহিহ বোখারি : ৫৭০৫
ধর্ম-দর্শন / এ