মোবাইল গ্রাহকের মাথায় বোঝা ৪৫০ কোটি টাকা
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০১৬, ১০:৪৪ অপরাহ্ণচলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর মোবাইল গ্রাহকদের মাথার ওপরে করের বোঝা এখন ৪৫০ কোটি টাকা। এক বছরে মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর এ টাকা আদায় করবে সরকার। মোবাইল অপারেটররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৭০ কোটি মিনিটের বেশি কথা বলেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি প্রায় ৬ কোটি গ্রাহক ব্যবহার করেন ইন্টারনেট সেবা। গুরুত্বপূর্ণ এ দুই খাতে বাড়তি করের বোঝা চাপানোয় হতাশ গ্রাহক ও অপারেটররা। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, কথা বলার জন্য বাড়তি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি। অন্যদিকে অপারেটররা জানিয়েছে, সরাসরি গ্রাহকের ওপর কর বাড়ানোর কারণে কথা বলার পরিমাণ কমবে। এমনকি ইন্টারনেট ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এতে মোবাইল সেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১১ কোটি মোবাইল গ্রাহক তাদের সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৭ মিনিট করে কথা বললে ৭০ কোটি মিনিটের বেশি হয়।
অন্যদিকে বিটিআরসির সর্বশেষ হিসাবে দেশে মোট ৬ কোটি ২০ লাখ ৪ হাজার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৮৬ লাখ ৬১ হাজার। অর্থাৎ, মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের ৯৫ শতাংশই মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সিমকার্ড ও রিম ব্যবহারের মাধ্যমে দেয়া সেবার ওপরে সম্পূরক শুল্ক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর অর্থ মোবাইল গ্রাহকদের ভয়েস কল, মোবাইল ইন্টারনেট, এসএমএস, এমএমএস সেবাসহ সব ধরনের সেবা পেতে আরো ২ শতাংশ বাড়তি কর দিতে হবে। ফলে এখন থেকে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ১ শতাংশ সারচার্জের সঙ্গে আরো ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক যুক্ত হয়ে একজন গ্রাহককে মোবাইল অপারেটরের নির্ধারিত সেবা মূল্যের সঙ্গে আরো ২১ শতাংশ কর দিতে হবে।
এক মিনিট কল কিংবা একটি এসএমএসের দাম এক টাকা হলে একজন গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে ১ টাকা ২১ পয়সা। একইভাবে একশ টাকা মূল্যের একটি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনতে একজন গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে ১২১ টাকা। এক জিবি ডাটা প্যাকেজের দাম ২৭৫ টাকা হলে গ্রাহককে ৩৩৩ টাকা পরিশোধ করতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বাজেট ঘোষণা করা হলেও অপারেটররা নতুন কর হার কার্যকর করে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে। অপারেটরদের পক্ষ থেকে এসএমএস পাঠিয়ে নতুন কর আদায়ের কথা জানানো হচ্ছে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব জানায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট ঘোষণার পর থেকেই নতুন কর হার কার্যকর হয়ে যায়। অতিরিক্ত সম্পূরক কর প্রত্যাহারের জন্য শুক্রবার অনুরোধ জানিয়েছে মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। রবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (কমিউনিকেশন অ্যান্ড করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) ইকরাম কবীর এক বিবৃতিতে বর্ধিত করের কারণে সার্বিকভাবে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাত থেকে রাজস্ব কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন। কারণ অতিরিক্ত করের কারণে গ্রাহকরা সেবা গ্রহণের হার কমিয়ে দেবেন। এই খাতে আরো বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য করপোরেট কর কমানোরও অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে অ্যামটব এবং গ্রামীণ ফোনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারই বর্ধিত কর প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, সিম ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩ থেকে ৫ শতাংশে বৃদ্ধির ফলে গ্রাহকের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপের সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের মোবাইল ফোনশিল্পের ওপর করের বোঝা খুবই বেশি, আরো কর বসানো হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে এই শিল্পের ভূমিকা ব্যাহত হবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ খাত থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। এখন সরকার ৫ শতাংশ করের বোঝা চাপানোর কারণে এ খাত থেকে অতিরিক্ত ৪৫০ কোটি টাকা আদায় করতে যাচ্ছেন। এটা সরাসরি গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হবে। তাই পুরো টেলিকম সেক্টরের জন্য এটা নেতিবাচক বিষয় বলে মনে করি।
সংশ্লিষ্টরা জানান,২০১৪ সাল পর্যন্ত মোবাইল সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ছিল। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ভ্যাট প্রত্যাহারের জন্য প্রযুক্তিবিদসহ পুরো টেলিকম শিল্পের পক্ষ থেকেই জোর দাবি ছিল। সেই দাবি উপেক্ষা করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ৩ শতাংশ অতিরিক্ত সম্পূরক কর আরোপ করা হয়। পরে একটি এসআরও জারি করে আরো এক শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। সেই সারচার্জ বহাল রেখেই এবার আরো দুই শতাংশ সম্পূরক কর আরোপ করা হলো। গ্রাহকের ঘাড়ে বাড়তি করের বোঝায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল ফোন অপারেটরস বাংলাদেশ (অ্যামটব) এর মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী টিআইএম নুরুল কবীর।
তিনি বলেন, সিমকার্ড কিংবা রিমের ওপর দুই শতাংশ সম্পূরক কর সার্বিকভাবে মোবাইল সেবার খরচ বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে গ্রাহকদের কাছে ডিজিটাল সেবা সমপ্রসারণ কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, অনেক গ্রাহক বাড়তি করসহ মূল্য পরিশোধে সমর্থ হবেন না। ফলে তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন করারোপের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকরা। বর্তমানে মোবাইল অপারেটররা গড়ে এক গিগাবাইট ডাটা ব্যবহারের দাম রাখছে ২৭৫ টাকা। একজন গ্রাহককে এই এক জিবি ডাটা প্যাকেজ কিনতে বর্তমানে ১৯ শতাংশ করসহ পরিশোধ করতে হয় ৩২৭ টাকা ২৫ পয়সা। অর্থাৎ, কর বাবদ বাড়তি পরিশোধ করতে হয় ৫২ টাকা ২৫ পয়সা। নতুন অর্থবছরে দুই শতাংশ সম্পূরক কর বৃদ্ধির কারণে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে ৩৩২ টাকা ৭৫ পয়সা। অর্থাৎ, এক জিবি ডাটা প্যাকেজের জন্য গ্রাহককে বাড়তি ৫৭ টাকা ৭৫ পয়সা কর পরিশোধ করতে হবে। . . . . . . . . .