সরকার কী চায়, ফেসবুক কী বলে
সিলেটের কন্ঠ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫, ৯:৫১ পূর্বাহ্ণসাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কিত’ বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক। বাংলাদেশের চাহিদা মোতবেক তথ্য দিতে রাজি হয়েছে তারা। তবে জানিয়েছে, তাদের কোম্পানির নীতিমালা ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের বাইরে যেতে পারবে না। একই সঙ্গে তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচিত করতে বলেছে ফেসবুক। যে কর্তৃপক্ষ ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
রোববার সচিবালয়ে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমটির দুই কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের তিন মন্ত্রী। সেই বৈঠক চলে টানা দুই ঘণ্টা।
বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর পক্ষ থেকে ফেসবুকের অপব্যবহার সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ধর্মীয় অপপ্রচার ও উসকানিমূলক প্রচারণা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার, যৌন হয়রানিসহ নানা সামাজিক অপরাধ সংগঠনে ফেসবুক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়। এসব অপরাধ রোধে ফেসবুকের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর তথ্য চাওয়া হয়। বিশেষ করে যে ফেসবুক পেজ বা অ্যাকাউন্ট থেকে এসব অপকর্ম করা হয় সেগুলো বন্ধ করা, আইপি ঠিকানা, পাসওয়ার্ডসহ নানা প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ফেসবুকের একটি অফিস খোলার জন্য পীড়াপীড়ি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফেইসবুক প্রতিনিধিরা বলেছেন, তারা তাদের কোম্পানির নীতিমালা অনুসারে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। এজন্য বাংলদেশকে সঠিকভাবে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সরকারিভাবে সহায়তা পেতে পারে।
এর আগে একাধিকবার বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট আইডির তালিকা করে সেগুলোর তথ্য চেয়ে চিঠি লেখার পরও ফেসবুক কোনো সাড়া না দেয়ার অভিযোগ করলে ফেসবুক প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশের আবেদনের ক্ষেত্রে ফেসবুক সময় মতোই সাড়া দেবেন তারা। তবে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় সেটা করতে হবে। বাংলাদেশ সেটি অনুসরণ করে তথ্য চাইলে তারা দেবেন। সাধারণ তথ্য প্রদানে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। তবে কোনো জরুরি প্রয়োজনে তারা যতদ্রুত সম্ভব উত্তর পাঠানোর চেষ্টা করেন।
ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগের জিন্য নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্বাচিত করার ব্যাপারে বৈঠকে বাংলাদেশের দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সরকারের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে ফেসবুকের সঙ্গে যোগযোগ করবে।
উল্লেখ্য, রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এই বৈঠকে ফেইসবুকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ল’ এনফোর্সমেন্ট স্পেশালিস্ট বিক্রম লাংয়ে ও পাবলিক পলিসি ম্যানেজার দিপালী লিবারহান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পুলিশের আইজি, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিটিআরসির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রবলেমের কথা বলেছি। ফেসবুকের পক্ষ থেকে কতখানি সহযোগিতা করতে পারবেন- তা বলেছেন তাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন। একটা ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন- বলে জানিয়েছেন।’
ফেসবুককে ফিল্টার করার বিষয়েও প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিরাপত্তার কারণে গত ১৮ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে ফেসবুকসহ কয়েকটি অ্যাপ বন্ধ রয়েছে, যদিও বিকল্প পথে অনেকেই এসব ব্যবহার করছেন।
মাধ্যমটি বন্ধ থাকা অবস্থায় সাইবার সন্ত্রাস ও হয়রানি রোধে কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য আদান প্রদানে সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি করতে আগ্রহ জানিয়ে গত ৩০ নভেম্বর ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এর পরের দিনই চিঠির উত্তর পাঠায় কর্তৃপক্ষ। এতে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর চিঠি পাঠানোর ষষ্ঠ দিনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসলো ফেসবুক।
বাংলামেইল
. . . . . . . . .